--- বিজ্ঞাপন ---

সিকিমকে বলা হয় পূর্বের সুইজারল্যান্ড

0

এক সময় বাংলাদেশীদের সিকিম যাওয়া নিষেধ ছিল। সিকিম, অরুনাচল, লাদাখসহ অনেক এলাকায় বাংলাদেশীরা যেতে পারতেন না। এখন পারছেন। ভারতের এসব এলাকা সুন্দরের লীলাভূমি। বিশেষ করে চোখ জুড়ানো সিকিমের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলাই বলাবাহুল্য।  বিশোল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য চমৎকার এক রাজ্যের নাম হলো সিকিম।আর এই সিকিমের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গ্যাংটক। যাকে সিকিমের রাজধানী বলা হয়। হিমালয়ের জোড়া লাগানো পর্বত শ্রেনীর শিবালিক পর্বতে গ্যাংটকের অবস্থান। পাহাড়ী এলাকা। নিচ থেকে প্রায় ১৪০০ মিটার উপরে।

সিকিমে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে শিলিগুড়ি। আর যেহেতু ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি কাছে (১২ কি.মি.) তাই খরচ কমাতে সেখান দিয়ে যাওয়াই ভালো। কীভাবে থাকছেন, কোথায় খাচ্ছেন এগুলোর উপর নির্ভর করছে ভ্রমণ খরচ। অল্প খরচে সিকিম থেকে ঘুরে আসতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মিতব্যয়ী হতে হবে। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি আছে যাদের মাধ্যমে গেলে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না।

সিকিম যাওয়ার অনেকগুলো উপায় আছে। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনার উপর নির্ভর করছে আপনি ঠিক কীভাবে সিকিম যেতে চাচ্ছেন। চাইলে কলকাতা থেকে বিমানে করে পাকিয়ং চলে যেতে পারবেন। সেখান থেকে জিপে সহজেই চলে যেতে পারেন গ্যাংটক। এছাড়া ফুলবাড়ির বাংলা-বান্ধা ইমিগ্রেশন থেকে শিলিগুড়ি এসএনটি স্ট্যান্ডে টমটমে চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে জিপে করে খুব সহজেই গ্যাংটক যাওয়া যাবে। ইমিগ্রেশন থেকে শিলিগুড়ি যেতে টমটমে খরচ হতে পারে ৩০০ রুপি এবং শিলিগুড়ি থেকে জিপে গেলে ভাড়া লাগবে ২৩০০ রুপি। পুরো খরচ এবার গ্রুপের ছয়জনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নিন। তাহলেই বুঝতে পারবেন একেকজনের ঠিক কত করে লাগছে। সিকিমে সাধারনত গ্রুপ করে যাওয়ায় উত্তম।

বৈধ নিয়ম অনুযায়ী আপনি দশ হাজার টাকা এবং পাঁচ হাজার ডলার সাথে রাখতে পারবেন। একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভালো, ভারতীয় মুদ্রা দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয়। তাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রা নিয়ে যাবেন না। ইমিগ্রেশন অফিস পার হলেই মানি এক্সচেঞ্জের দোকান পেয়ে যাবেন। আপনার কাছে যদি বাংলাদেশি টাকা থাকে সেগুলো রুপি করে নিন। চাইলে মোবাইলের সিমও কিনতে পারেন।

কোথায় কোথায় যাবেন নির্ভর করছে  ভ্রমণ পরিকল্পনার উপরে।  এক্ষেত্রে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়াই ভালো। তবে গ্রুপে যদি এমন কাউকে পেয়ে যান যে আগেই সিকিম ঘুরে এসেছে তাহলে তার অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করতে পারেন। বাংলাদেশের পঞ্চগড় পর্যন্ত বাসে বা ট্রেনে যাওয়া যায়। সেখান থেকে বাংলা-বান্ধার বাস বেশ কিছুক্ষণ পরপরই ছাড়ে। ভাড়াও তেমন বেশি নয়, মাত্র ৮০ টাকা। বাস থেকে নেমেই ইমিগ্রেশন। যাবতীয় কাজ শেষ করে সেখান থেকে বের হয়ে একটা অটো ভাড়া করে নিন শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত। শিলিগুড়ি নেমে এসএনটি-তে যাবেন। সেখান থেকে আপনাকে ইনার লাইন পারমিশন নিতে হবে। যদি বাংলাদেশ থেকেই পারমিশন নিয়ে না আসেন তাহলে এখান থেকে ইনার লাইন পারমিট করে নিতে পারেন। পারমিট হয়ে গেলে জিপের জন্য টিকেট করে নিন। চাইলে আপনি বাসেও যেতে পারেন। তবে বাসে অনেক সময় লেগে যায়, তাই পর্যটকদের জন্য জিপ হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহন। জিপে জানিয়ে রাখবেন, আপনি বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ করতে এসেছেন, আপনাকে রাংপোতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কেননা ভ্রমণ করতে আসা সবার জন্য রাংপো হলো চেকপোস্ট। আপনি এসএনটি থেকে যে ইনার লাইন পারমিট করেছেন এখানে প্রদর্শন করুন। এখান থেকে রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে পাসপোর্টে সিল নিয়ে নিতে হবে। যাবতীয় কাজ শেষ করে এরপর সোজা গ্যাংটক। গ্যাংটকে নেমে আপনার ইনার লাইন পারমিটটি ফটোকপি করে নিন। কেননা ভ্রমণের সময় এটা আপনার বারবার প্রয়োজন হতে পারে। এরপর সেখানে পছন্দ অনুযায়ী একটা হোটেল দেখে উঠে পড়ুন এবং চাইলে আশপাশে ঘুরে দেখতে পারেন। গ্যাংটকে আপনি অনেক ট্রাভেল এজেন্সির অফিস খুঁজে পাবেন। সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী ঘুরে দেখার জন্য একটি অফার নিয়ে নেবেন। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, গ্যাংটকে ৯টার মধ্যেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। আপনাকে ডিনার-পর্ব তার আগেই শেষ করতে হবে। কেউ যদি প্যাকেজে ঘোরার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই খাবার ও হোটেলের বিষয়ে জেনে নেবেন। কারণ অনেক সময় লাচুং-এ কাঠের তৈরি হোটেলে রাখে। বরফ রাজ্যে কাঠের হোটেলে থাকা অনেক কষ্টকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! আর এমজি মার্গ থেকে নর্থ সিকিমের গাড়ি যেখান থেকে ছাড়ে ওখানে যেতে কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া ১৫০ রুপি লাগে। গ্যাংটক থেকে লাচুং এর দূরত্ব প্রায় ১১০ কিমি, সম্পূর্ণ পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে যেতে।

সিকিমের আবহাওয়া কিছুক্ষণ পর পর পরিবর্তন হয়। এই বৃষ্টি তো এই রোদ! আবার মেঘে ঢাকা! পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পাহাড়ের যে রূপ দেখে মোহিত হবেন। মাঝে মধ্যে তো মনে হবে মেঘ বোধহয় হাতের মুঠোতে চলে আসবে। যাওয়ার সময় তিস্তা নদী সামনে পড়ে, স্বচ্ছ নীল পানি। বড় বড় ২ টা অসাধারণ সুন্দর ঝরনাও সামনে পড়বে। অনেক সময় পাহাড়গুলা মেঘে ঢাকা থাকে। ‘কাটাও’ নামক একটা জায়গা আছে, ওখানে প্রচুর বরফ থাকে। বরফে হাঁটতে হলে অবশ্যই গামবুট ভাড়া নিতেই হবে। লাচুং থেকে ইয়ামথাং ভ্যালিতে যাওয়ার সময় সমস্ত প্লাস্টিকের বোতল রেখে যেতে হবে, না হলে ধরা পড়লে ৫০০ রুপি জরিমানা! লাচুং থেকে ইয়ামথাং ভ্যালির দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার । মনে হবে পৃথিবীর বাইরে অন্যকোথাও চলে আসা।  সৃষ্টি এত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বোঝা সম্ভব হবেনা। পাহাড়গুলোর দিকে যতবারই তাকান না কেন ততবারই নতুন মনে হবে। চারপাশে যত দূর চোখ যায় ধবধবে তুষার ঢাকা মাঠ, পাহাড়ের গা বেয়ে বরফ জমে তৈরি হয়েছে বরফের উপত্যকা। হোটেল থেকে ৫০ রুপি ভাড়া দিয়ে বরফে হাঁটার জন্য গাম বুট নেয়া যায়।

সিকিম যেতে হলে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে রাংপো সীমান্তে অনুমতি নিতে হয়, নর্থ সিকিম এবং ইস্ট সিকিমে অনুমতি ছাড়া বেড়ানো যাবে না। এ জন্য দরকার এক কপি ছবি, ভিসা এবং পাসপোর্টের ফটোকপি। এখানে ট্যুর অপারেটর ছাড়া অনুমতি দেয়া হয় না। কাজেই গ্যাংটক পৌঁছে বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানি যাচাই করে ভালো একটা প্যাকেজ নিয়ে নিন। তারাই আপনাকে বলে দেবে ঘোরার জায়গা। আটজনের দল হলে সব মিলিয়ে সিকিম ভ্রমণে বাংলাদেশি টাকায় জনপ্রতি প্রায় ১০ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হবে।

সিকিম রাজ্যটি উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম- চার ভাগে বিভক্ত। উত্তর সিকিমে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সিঙ্গিক, লাচুং, ইয়ুমথাং, লাচেনসহ আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। পূর্ব সিকিমে ঋষিখোলা, আরিতার, জুলুক, নাথাং ভ্যালি, কুপাপ লেকসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। দক্ষিণ সিকিমে নামচি, টেমি টি গার্ডেন, রাবাংলা, বোরং, কালুকসহ বেশ কয়েকটি জায়গা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। অপরদিকে পশ্চিম সিকিমে ওখড়ে, গেজিং, সিংসর ব্রিজ, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, রিনচেনপংসহ কিছু জায়গা আপনার মন কেড়ে নেবে নিমেষেই।

ভ্রমণের জন্য সিকিম উন্মুক্ত হলেও এখনো বেশ কিছু জায়গায় আপনি চাইলেই যেতে পারবেন না। সেরকম কিছু জায়গা হলো নাথুলাপাস, গুরুদংমার, বাবা মন্দির এবং কালাপাথর। এর বাইরে সীমান্তের কাছাকাছি আরো কয়েকটি জায়গা পর্যটকদের জন্য এখনও নিষিদ্ধ। আপনাকে শুধু গ্যাংটকের অনুমতি দেয়া হবে, তবে আপনি যদি আরো বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে চান তাহলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে অনুমতি নেয়া ভালো।

সিকিম ঠাণ্ডাপ্রবণ রাজ্য। ঠাণ্ডা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অর্থাৎ জ্যাকেট, কান-টুপি, হাতমোজা ইত্যাদি রাখতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে আপনার পা যদি বাঁচিয়ে রাখতে চান তাহলে একটা মোটা এবং ভালো কেডস নিয়ে নিন, কেননা সাধারণ জুতা পরে আপনি ভুলেও সিকিম ভ্রমণের কথা কল্পনা করবেন না। সিকিম খুব সুন্দর এবং চমৎকার একটি রাজ্য। এখানে রাস্তায় ময়লা, থুথু ফেলা নিষেধ। এমনকি এখানে প্রকাশ্যে আপনি ধূমপান করতে পারবেন না। চেষ্টা করবেন সবসময় একজন গাইড রাখতে। গ্যাংটকের ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আপনাকে সেই ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। সুত্র: সময় টিভি, রাইজিং বিডি

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.