--- বিজ্ঞাপন ---

রহস্যময় চীনের প্রাচীর

প্রতিদিন দেখতে আসেন ৫০ হাজার পর্যটক

0

চীনের প্রাচীর নিয়ে রহস্যের অন্ত নেই। এ প্রাচীর দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমায়। চীনের কাছে তাদের প্রাচীরটি অনেক গর্বের। এরই মধ্যে চীন দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ভেতরে রয়েছে তাদের প্রাচীরের অংশ। এ প্রাটীরের উপর দিয়ে কিছুদিন আগে বয়ে গেছে তুষার ঝড়। পর্যটকরা এ ঝড়টি উপভোগ করে। চীনের পর্যটন শিল্প অনেকটা নির্ভর করে আছে এ প্রাচীরকে কেন্দ্র করে। পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য জিনিষের একটি চীনের প্রাচীর। চীনের উত্তর সীমান্তকে রক্ষার জন্য নির্মান করা হয় বিশাল এ প্রাচির। এটি মানুষের হাতে তৈরি বিশাল স্থাপথ্য। চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং প্রথম এটি ব্যবহার করেন। প্রতিদিন চীনের প্রাচির দেখতে আসেন ৫০ হাজার দর্শক। টিকেট বিক্রি হয় প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি টাকার। বলা হয়ে থাকে এ প্রাচির দেখা যায় মহাশূন্য থেকেও! তবে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
১৫৬৯ সালে ২০ হাজার শ্রমিক এ বিশাল প্রাচির তৈরির কাজ শুরু করে। ইট ও পোড়ামাটির এক একটি ইটের ওজন ছিল ২০ কেজি। মূলত মোঙ্গলিয়ানদেও আক্রমন ঠেকাতে এ প্রাচির নির্মান করা হয়। এতে তারা সফলও হয়। তবে প্রাচির নির্মানের সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন রোগের শিকার হয়ে মারা যান। আর এ প্রাচির নির্মানের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে খ্যাত জেনারেল ছিচি গুয়াংকে হত্যা করা হয় মিথ্যা ষড়যন্ত্রে।
১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দেয়। বেইজিং শহর থেকে ৫১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এ প্রাচির। পাহাড়ের পাদদেমে আকাবাঁকা হয়ে এই প্রাচির চীনকে ঘিরে রেখেছে। সমতল ভূমি থেকে প্রাচিরের উচ্চতা হবে দেড় থেকে আড়াইশ কিলোমিটার। এটি চীনের জাতীয় পার্ক হিসেবে পরিচিত। এ প্রাচির নিয়ে চীনারা বেশ গর্ব বোধ করেন।

চীনের প্রাচীরের ইতিহাস জানতে যেটুকু পাওয়া যায় তা হচ্ছে, চীনের উত্তর সীমান্তে অনেক ছোট বড় গ্রাম ছিল। গ্রামের মানুষ কৃষি কাজ করে জীবন যাপন করত । অনেক সময় সেখানে যাযাবর জাতিরা তাদের ওপর আক্রমন করে সঞ্চিত ফসল লুট করে নিয়ে যেত। তাদের দমন করা কঠিন ছিল ।। বলা হয়ে থাকে, তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চীনের প্রাচীর কাজ শুরু করা হয়। এই প্রাচীর নির্মানের কাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজাবংশ করতে থাকে ।তিনটি রাজবংশ; যেমন কিউইন্, হান্ এবং মিং-এর সময় বিভিন্ন জীবিকার মানুষজন এই বিশাল প্রাচীরটির নির্মাণে যুক্ত ছিল। এই স্থানটির সবচেয়ে সু-সংরক্ষণ ও সংস্করণ প্রাচীন মিং রাজবংশের সময়েই হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন রাজবংশের মধ্যে মিং রাজবংশ সবথেকে বেশি চীনের প্রাচীরের কাজ করেছিল । কারও মতে , চীনের প্রাচীরের মোট দূরত্ব ২১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। চীনের মিং রাজবংশ দ্বারা সবথেকে বেশি ৫০০০ কিলোমিটার তৈরি করে। তবে প্রাচীরের দৈর্ঘ নিয়ে নানা মত আছে।
চীনের প্রাচীরের মধ্যে সব থেকে বেশি পর্যটকদের ভিড় হয় বাডিলিং নামক স্থানে। এ স্থানটা অনেকটা আকষর্নীয়। চীনের প্রাচীর উচ্চতা একরকম নয়। কারণ  এটি বিভিন্ন পাহাড় নদী ভূমি উপর দিয়ে গেছে এবং চীনের প্রাচীরের মধ্যে ছোট ছোট মিনার আছে। তার জন্য প্রাচীরের উচ্চতা কোথাও ৩৫ ফুট, আবার কোথাও ৮ থেকে ৯ ফুট।

গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়্না বা চীনের প্রাচীর হল এক সুবিশাল মনুষ্য-সৃষ্ট প্রাচীর, যেটি ইঁট, পাথর, কাঠ ও অন্যান্য পদার্থ দিয়ে নির্মিত। চীনের বিশাল প্রাচীরটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণকারীদের দূরে রাখা এবং সামরিক অনুপ্রবেশকারীদের আটকানো। এখন এটি চীনবাসীদের নিকট শ্রদ্ধাস্বরূপ, যাঁরা এই প্রাচীরটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রাচীরটি (পূর্বদিকের) হেবেই প্রদেশের শানহাইগুয়ান থেকে (পশ্চিমদিকে) গানসু প্রদেশের জিয়াউগুয়ান প্রদেশ পর্যন্ত চলে গেছে। এটি প্রাচীর, অস্ত্রাগার, সৈন্যনিবাস, আস্তাবল, প্রাচীরের ওপর আশ্রয়স্থল, দূরবীক্ষণ স্তম্ভ, ঘোড়ার গমনপথ, দূর্গ এবং গিরিপথের সমন্বয়ে গঠিত।

সৈন্যবাহিনীর মধ্যে সঠিক যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক টাওয়ার বা স্তম্ভ, প্রাচীর বরাবর উঁচু স্থানে বা পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি কেউ অলক্ষ্যে গুপ্তভাবে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে সেইজন্য তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য কাঠের দরজাগুলিকে গুপ্ত ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করা হত।
এটিকে এখন আমরা যেভাবে দেখছি, সেই একই আশ্চর্য্যের সাথে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপলব্ধি করতে পারে সেই কারণে এই স্থানটিকে খুবই সুরক্ষিত করা হয়েছে। এই সুবিশাল প্রাচীরটির পুনঃসংস্কারের ফলে এটির পরিদর্শনের সুবিধা আরোও প্রশস্ত হয়ে উঠেছে, তথাপি নিরাপত্তার অসুবিধার কারণে এই অঞ্চলের মধ্যে পদব্রজে গমন এখনও বিপজ্জনক। এই বিশাল প্রাচীরটি বরাবর অনেক দূরবীক্ষণ স্তম্ভ বা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, যেগুলি এক-আধ কিলোমিটার বা কয়েক কিলোমিটার অন্তর অন্তর অবস্থিত। দূরবীক্ষণ স্তম্ভ বা পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলি দুই তলা লম্বা। এই প্রাচীর বরাবর ১০ হাজারেরও বেশি দূরবীক্ষণ স্তম্ভ বা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং সাংকেতিক (আলোক সঙ্কেত দেওয়ার নিমিত্ত) টাওয়ার রয়েছে।

দ্য গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়না শুধুমাত্র চীনের অন্তর্গতই নয়, বরঞ্চ সারা বিশ্বের কাছেই এটি এক মহান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়না্-র ন্যায় একটি প্রাচীরের নির্মাণ তখন ভীষণভাবে প্রয়োজন ছিল। সুতরাং চীন, অনুসন্ধানকারী ঝেং হে-র অভিযানমূলক সমুদ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়েছিল, যাতে চীনের বিশাল প্রাচীরটির নির্মাণে সেই নৌ তহবিলও ব্যবহার করা হয়। বহু মানুষের কাছে বিস্ময়ের বিষয় যে গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়নায় কতগুলি সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির সংখ্যা এখনো নথিভুক্ত করা যায় নি।

গ্রেট ওয়্যাল অফ চায়না্ ২০০৭ সালে নতুন সপ্তম আশ্চর্য্য-এর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। এটি নির্মাণের সময় এবং নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দশলক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। তাই এটিকে “পৃথিবীর দীর্ঘতম কবরস্থান” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তবে সবচেয়ে মজার বিষয় ১২১১ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খাঁন নাকি এই প্রাচীর ভেঙ্গে চীন গিয়েছিলেন। তথ্য সুত্র : অনলাইন

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.