--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে ইহুদিবাদী দেশ ইসরাইল

0

বিশ্বে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে ইহুদিবাদী দেশ ইসরাইল। ইসরাইলের সাথে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর যোগাযোগ ছিল কম। অনেক দেশই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী ছিলো না। এমন কি বাংলাদেশের সাথেও ইসরাইলের সম্পর্ক নেই। শুনা যাচ্ছে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করতে বাংলাদেশের উপরও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সে সর্ম্পকের জেরে ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ দিকে এসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের সর্ম্পকের জোড়া লাগিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সাথে ইসরাইলের এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়ে গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসিত ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্ম হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বানানো এই রাষ্ট্রকে কখনো মেনে নেয়নি আরবরা। ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও সবশেষ ১৯৭৩ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইসরায়েলের। প্রতিবারই আরবরা পরাজিত হয়। এরপর থেকেই ইহুদিদের কাছে জমি হারাতে বসে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুটি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংঘাত মেটানোর চেষ্টা করলেও তা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি।ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলো প্রধান তিনটি শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো হলো যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলোর দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের দখল করা জমি হস্তান্তর। সেই শর্তের কোনোটা পূরণ না হওয়ার পরও আরব দেশগুলো ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন।

১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু ইসরাইলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। দেশটি ইসরায়েল ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এর রাজধানী জেরুজালেম। এর দক্ষিণে রয়েছে বিশাল মরুভূমি, লোহিত সাগর আর উত্তরে রয়েছে বরফ আবৃত পর্বতমালা

বেলফোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ব্রিটিশ সেক্রেটারি মি. বেলফোর ১৯১৭ সারে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঘোষণা দেন সেটায় বেলফোর ঘোষণা হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসিত ফিলিস্তিন ভূ-খণ্ডকে দু’ভাগ করে এক ভাগ ফিলিস্তিন ও এক ভাগ ইসরায়েল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার জন্য জাতিসংঘে গণভোটও গ্রহণ করা হয় ১৯৪৭ সালে। তবে সে গণভোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবে ভোটের রায় চলে যায় ইসরায়েলের পক্ষে। বিশ্বে বর্তমানে ১৬১টি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও মুসলিম রাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। আর দেশ হয়েও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিশর। এজন্য আরবলীগ থেকে মিশরকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। বর্তমানে ইসরায়েলের সঙ্গে একমাত্র বন্ধুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ হলো সৌদি আরব। সৌদি যুবরাজকে প্রায় সময়ই ইসরায়েলের পক্ষে গণমাধ্যমে মন্তব্য দিতে দেখা যায়। পরে ট্রাম্প সরকার ইসরাইলের সাথে অনেক মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক করিয়ে দেয় ইসরাইলের।

ইসরায়েল এমন একটি দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়ষ্ক সব নাগরিকের জন্য সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। পুরুষদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন বছর ও নারীদের দুই বছর। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, ইসরায়েলের যতজন নাগরিক রয়েছে ঠিক ততজন সেনা সদস্য রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে উগ্র, ভয়ংকর ও শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা বলা হয় মোসাদ’কে। যারা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করে। ইসরায়েল সামরিকভাবে বেশ শক্তিশালী। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রসমূহ। গত কয়েক দশকে তারা নিজেদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিদর দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে এই ইহুদি রাষ্ট্র।

পৃথিবীর সবচেয়ে গোপনীয় ও সবচেয়ে অস্বচ্ছ পরমাণু কার্যক্রম চালায ইসরায়েল। ৬০ এর দশকে দেশটি পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়। তবে কোথা থেকে ও কীভাবে এই পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম পেল সেই রহস্য সবারই অজানা। কারণ নিজ দেশে উপস্থিত পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে তারা বিশ্বকে জানায়নি। ১৯৬৪ সালে একদল মার্কিন বিজ্ঞানীকে ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচী ত্বত্ত্বাবধায়নের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ইসরায়েল কৌশলে তাদের প্রকল্পের আসল চিত্র পাল্টে ফেলে।

১৯৪৮ জাহাজে করে এসে ফিলিস্তিনিতে শরণার্থী হিসেবে বসবাস শুরু করে ইহুদিরা। আর এখনকার চিত্র তো সবারই জানা। সেই ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের শেষ নেই। ইসরায়েল কর্তৃক বহু জমি দখল হয়েছে ফিলিস্তিনিদের। যাদের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর কোঠায় সেসব ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলদের নির্যাতন কতটা নির্মম তা জানে। কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি জন্ম থেকেই ভূমিহীন। কারাগারে দুরূহ জীবন যাপন করছে অনেকেই। আর বাকিরা স্বাধীন হওয়ার আশায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মোকাদ্দাসও দীর্ঘদিন ধরেই দখল করে রেখেছে ইসরায়েল সরকার। এসব কারণেই ইসরায়েল পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত রাষ্ট্র। জানা যায়, অতীতে ইহুদিরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে জার্মানির একনায়ক হিটলার। জার্মানির একনায়কবিদ হিটলারের হুকুমেই নাৎসি বাহিনী ইহুদি নিধন কার্যক্রম শুরু করে। তাদের হাতে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদির মৃত্যু হয়। সেই দুঃখ কাটাতেই একচেটিয়ে বিশ্বব্যাপী ধ্বংসের খেলায় নেমেছে এই জাতিরা।

সম্প্রতি ইসরাইল মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তার একমাত্র কারন ইরান। ইরানের ভয়ে মূলত মুসলিম দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের এ সম্পর্ক। তবে ইসরাইলের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক অনেক দিনের পুরানো। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কই প্রথম ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এর পর মিশর। দীর্ঘদিন পর একে একে সব মুসলিম দেশগুলোর সাথে ইসরাইল সম্পর্ক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

যে সুদান ছিল আমেরিকার দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। সে সুদানকে ট্রাম্প যাবার আগে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিলো। মূলত ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর সুদানকে কালো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো। এর আগে সুদানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ ছিল। সুদানের রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- এরইমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সুদানকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত এ বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত অক্টোবর মাসে ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি সন্ত্রাসের কালো তালিকা থেকে সুদানের নাম বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। সুদানের সামরিক বাহিনী সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারও সন্ত্রাসের কালো তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। তারা বলছে, সন্ত্রাসবাদের তালিকায় নাম থাকার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২৭ বছর আগে আমেরিকা সুদানকে সন্ত্রাসবাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। সে সময় আমেরিকা বলেছিল, আফ্রিকা অঞ্চলে মার্কিন স্থাপনাগুলোতে যে সমস্ত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার পেছনে সুদানের ওমর আল-বশির সরকারের হাত ছিল।

সুদানের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইন্দোনেশিয়াকে শত কোটি ডলারের লোভ দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে রাজি হলেই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি ডলার পাবে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশে বিনিয়োগ বিষয়ক সরকারি সংস্থা ডিএফসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডাম বোয়েলার বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে গড়লেই তার সংস্থা থেকে ইন্দোনেশিয়াকে দ্বিগুণ অর্থ সহায়তা দেয়া হতে পারে। বর্তমানে মুসলিম দেশটিকে ১০০ কোটি ডলার দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়লে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলার বা তারও বেশি অর্থ সহায়তা পেতে পারে।
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতির প্রশ্নে এগোবে না বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সম্প্রতি আরব আমিরাত (ইউএই) সফর শেষে পাকিস্তানে ফিরে মুলতানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ’ডন’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বক্তব্য তিনি শুনেছেন। সঙ্গে এ-ও বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্থায়ী ও পরিপূর্ণ সমাধান হওয়ার আগে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান কতদিন তাদের বক্তব্যে অটল থাকতে পারবে এটাই এখন দেখার বিষয়। যদিও শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন পাকিস্তানের ওপর কোনো চাপ নেই এবং ছিলও না।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। কিছুদিনের মধ্যে একই পথে হাঁটে বাহরাইনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করে এই দুই দেশ। এরপর সুদান ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরাইল। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। তখন স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরাইলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই অবস্থানের পিছনে মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন। ৫০ বছর পরেও ইসরাইল প্রশ্নে বাংলাদেশের সেই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি যেদিকে গড়িয়েছে, সেখানে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে পরিস্থিতি এখন আরো বেশি প্রতিকূল হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। সূত্রঃ ইন্টারনেট/অনলাইন

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.