--- বিজ্ঞাপন ---

চীনের ব্যালেস্টিক মিসাইল কি মানব জাতির জন্য হুমকি?

0

 

::সিরাজুর রহমান::

বর্তমানে সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ দূর পাল্লার এবং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) মিসাইল হিসেবে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ডংফেং-৪১ নিউক্লিয়ার ওভারহেড সমৃদ্ধ ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম ) বিবেচনা করা হয়। ডংফেং-৪১ আইসিবিএম) মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮,৬৯৯ মাইল বা ১৪ হাজার কিলোমিটার। যদিও চীন এটির রেঞ্জ ১৫ হাজার কিলোমিটারের অধিক বলে প্রচার করে থাকে।

এদিকে রাশিয়ার তৈরি ২০৫ টনের আরএস-২৮ সারমাট আইসিবিএম কে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাল্লার আইসিবিএম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আরএস-২৮ এর প্রকৃত রেঞ্জ ১৮ হাজার কিলোমিটার এবং এটি খুব সম্ভবত ২০২২ সালের দিকে সার্ভিসে চলে আসতে পারে।

২০১৭ সালে সার্ভিসে আসার পর বর্তমানে চীনের তৈরি ডিএফ-৪১ আইসিবিএম হতে যাচ্ছে খুব সম্ভবত বিশ্বের সর্বোচ্চ দূর পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল। যেখানে কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের এসজিএম-৩০ আইসিবিএম মিসাইলের চেয়েও বেশি পাল্লার হল এই ইন্টার কন্টিনেন্টাল মিসাইলটি। এটিকে এখনো পর্যন্ত বিশ্বের যে কোন স্থানে পারমাণবিক হামলার প্রথম আইসিবিএম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কার্যত সলিড ফুয়েল চালিত চীনের তৈরি ডিএফ-৪১ লং রেঞ্জের নিউক্লিয়ার মাল্টিপল ওয়ারহেড সমৃদ্ধ স্ট্যাটিজিক আইসিবিএম। যা কিনা সর্বোচ্চ ১ মেগাটন বা ১৫০ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বোচ্চ ১০-১২টি উচ্চ প্রযুক্তির মাল্টিপল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (Multiple, Independently targeted Re-entry Vehicle (MIRV) warheads) বহন করতে সক্ষম। চীন খুব সম্ভবত ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডিএফ-৪১ আইসিবিএম এর কমপক্ষে ৭টি পরীক্ষ সম্পন্ন করেছে।

তাছাড়া চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির তরফ থেকে জানানো হয় যে, তারা ২০১৭ সালের শুরুতে কমপক্ষে ৪টি ডিএফ-৪১ ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ইউনিট সার্ভিসে এনেছে। যদিও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হলেও যতদূর জানা যায়, চীনের কৌশলগত অস্ত্র ভান্ডারে এ মুহূর্তে নুন্যতম আট শতাধিক নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বেসড বিভিন্ন পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল মজুত করা হয়েছে।

তিনস্তর বিশিষ্ট সলিড ফুয়েল রকেট ইঞ্জিন চালিত ডংফেং-৪১ ইন্টার কনটিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের ওজন ৮০ টন। এটির দৈর্ঘ্য ২১ মিটার এবং ব্যাস ২.২৫ মিটার। তাছাড়া এর সবচেয়ে সুবিধা হলো এটি ভ্রাম্যমান যানবাহন চালিত মোবাইল আইসিবিএম সিস্টেম, যা খুব সহজেই স্যাটেলাইট এর নজর এড়িয়ে সার দেশব্যাপী যে কোন স্থানে মোতায়েন করা সম্ভব।

টার্মিনাল ফেজে ২৫ ম্যাক গতি সম্পন্ন ডিএফ-৪১ আইসিবিএম একাধিক ভিন্ন ভিন্ন টার্গেটে অতি ভয়ঙ্কর নিউক্লিয়ার হামলার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। চীনের ভাষ্য মতে, যাকে এ মুহুর্তে পৃথিবীতে থাকা যে কোন শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে প্রতিহত করা এক কথায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস’র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্প বিভাগ জানায়, চীনের তৈরি ডিএফ-৪১ মিসাইলটি ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম। এরকম দীর্ঘ পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল আপাতত আর কোনো দেশের নেই। চীন থেকে ছুঁড়ে মারা হলে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানেই এটি আমেরিকাসহ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ভয়াবহ আঘাত হানতে সক্ষম।

তবে যাই হোক না কেন, বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর এহেন অতি ভয়ানক এবং প্রাণঘাতী ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেসেটিক তৈরি করে মানব জাতি ধ্বংসের এক অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.