--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়ার ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল আর-৭

0
ব্যালেস্টিক মিসাইলের আঁতুড়ঘর হিসেবে জার্মানকে বিবেচনা করা হলেও বিশ্বের প্রথম কোন ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) উৎক্ষেপণ করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (ইউএসএসআর)। মুলত স্নায়ুযুদ্ধ বা (কোল্ড ওয়ার) চলাকালীন সময়ে পঞ্চাশের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোটকে কৌশলগতভাবে প্রতিহত করার জন্য এবং সরাসরি ইউরোপের দেশগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র হামলার কৌশলকে সামনে রেখে অত্যন্ত গোপনে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করে দেয়।
অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এর ইন্টার কন্টিন্যাটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) প্রথম সফল উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হলেও এই গবেষণার মূল ভিত্তি ছিল কিন্তু সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ব্যবহৃত জার্মানের ভি-২ সর্টরেঞ্জ রকেট বা মিসাইল। অর্থ্যাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মান চুড়ান্তভাবে পরাজিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত বাহিনী জার্মানের গোপন ভি-২ মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে অভিযান চালিয়ে যতটা সম্ভব ভি-২ মিসাইলের ডুকমেন্ট এবং ব্লু প্রীন্ট সংগ্রহ করে এবং পাশাপাশি এই প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের নিজ দেশে ধরে নিয়ে যায়। আর এই ভি-২ মিসাইলের উপর ভিত্তি করে প্রায় এক দশক ব্যাপী গবেষণা চালিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্ব প্রথম নিজস্ব প্রযুক্তির মাল্টি স্টেজ আর-৭ ইন্টার কন্টিন্যাটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) তৈরি করতে সক্ষম হয়। তখন কিন্তু সারা বিশ্ববাসী জানতই না যে এতটা ভয়ঙ্কর মাত্রায় ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি করা আদৌ সম্ভব।
কার্যত, ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মিসাইল ডেভলপমেন্টের মুখ্য বিজ্ঞানী সের্গেই কোরোলিওভকে সরকাররের পক্ষ থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উন্নত থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণে সক্ষম একটি কার্যকর ও অত্যন্ত শক্তিশালী ইন্টার কন্টিন্যাটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) নির্মান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর-৭ কোড নেম নামক ব্যালেস্টিক মিসাইলের প্রথম লঞ্চটি করে ১৫ মে ১৯৫৭ সালে। কিন্তু আর-৭ মিসাইল লাউঞ্চের সাইট থেকে ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) পর্যন্ত গিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে আকাশেই ধ্বংস হয়ে যায়। তবে জ্বালানী ভর্তি অবস্থায় ২৮০ টন ওজনের আর-৭ মিসাইলের প্রথম সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয় ১৯৫৭ সালের ২১ শে আগস্ট। এই পরীক্ষায় আর-৭ আইসিবিএম মিসাইল প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার (৩,৭০০ মাইল) অতিক্রম করে এবং বিশ্বের প্রথম ইন্টার কন্টিন্যাটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নেয়। আবার ১৯৬০ সালের দিকে প্রথম বারের মতো আর-৭ আইসিবিএম মিসাইলে কেবি-১১ টাইপের ৫,৫০০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড ইনস্টল করা হয়। তাছাড়া এটি ৩ থেকে ৫ মেগাটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ারহেড বহণে সক্ষম ছিল।
যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সাফল্যটি ছিল বিশ্বের প্রথম সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটের জন্য চরম বিপদ এবং হতাশাজনক একটি ঘটনা। অবশ্য সভিয়েত ইউনিয়নকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ১৯৫৭ সালে ঠিক একই বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কিন্তু তার প্রথম এসএম-৬৫ এটলাস ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালায়। তাছাড়া বিশ্বের আরেক সামরিক সুপার পাওয়ার রেড জায়ান্ট চায়না ১৯৬০ সালের শেষের দিকে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ডংফেং-৪ প্রথম ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। তবে অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, মানব জাতিকে রক্ষায় এবং কল্যানে বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলো কি করেছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী এবং সর্বোপরি মানব জাতিকে ধ্বংস করার জন্য গোপনে কতই না ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র তৈরি করে রেখেছে।
আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.