--- বিজ্ঞাপন ---

পশ্চিমা বিশ্বের গোপন ষড়যন্ত্রের কবলে তুরস্কের অগ্রযাত্রা!

0

বিদায়ের একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন তুরস্কের উপর বেশকিছু সামরিক অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দিয়েছে। মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা হস্তান্তরের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের বিরোধে জড়িয়ে ন্যাটো জোটভুক্ত অন্যতম সহযোগী মিত্র দেশ তুরস্কের উপর কাউন্টারিং আমেরিকা’স এডভারসারিজ থ্রু সেনেকশন এক্ট (সিএএটিএসএ) Countering America’s Adversaries Through Sanctions Act (CAATSA) আইনের আওতায় বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি কার্যকর করার ঘোষণা দেয়া হলো। মুলত ১৪ই ডিসেম্বর ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং সিনেটের উভয় পরিষদে তুরস্কের বিরুদ্ধে আনীত বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হওয়ার পর তুরস্কের উপর যেকোন মূহুর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা আসবে এমনটি ধারণা করা হচ্ছিল বেশ অনেক আগে থেকেই।

তবে নজিরবিহীনভাবে এই প্রথমবারের মতো কাউন্টারিং আমেরিকা’স এডভারসারিজ থ্রু সেনেকশন এক্ট (সিএএটিএসএ) নামে পরিচিত আইনের আওতায় সরাসরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন মিত্র দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব‌্যবস্থা নেয়া হল। আপাতত তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রেসিডেন্সি, দেশের সামরিক শিল্প সংস্থার প্রধান ইসমাইল ডেমির এবং আরও তিনজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। তুরস্কের এই চার কর্মকর্তা এবং তাদের মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে সম্পদ রয়েছে তা জব্দ বা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই কর্মকর্তাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা, সামরিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের রফতানির লাইসেন্স বাতিল, ঋণ গ্রহণ স্থগিত, এবং এজেন্সিটির ক্রেডিট হন্তান্তর এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ভবিষ্যতে যে কোন মুহুর্তে তুরস্কের উপর অবরোধের আওতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল আশাঙ্খা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে বৈশ্বিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুভাবাপন্ন দেশ রাশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের বিরোধে মার্কিন প্রশাসন তুরস্কের উপর সীমিত আকারের অবরোধ আরোপ করেছে বলে প্রচার করা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যত তার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোকে সাথে নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তুরস্ককে ফাঁদে ফেলার এবং মার্কিন নীতি অনুযায়ী চলতে বাধ্য করতে অত্যন্ত গোপনেই পরিকল্পনা করতে থাকে। আর বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুরস্কের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার এবং প্রযুক্তিগত কিংবা সামরিক শিল্প উন্নয়নে শঙ্কিত হয়ে এখন যে কোন ভাবেই হোক তুরস্কের উত্থান প্রতিহত করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

তাছাড়া তুরস্ক বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটার প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন তুরস্ককে এই প্রজেক্ট থেকে বের করে দেয়। আর এখন বিতর্কিত সমুদ্রসীমা নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে চলছে তুমুল উত্তেজনা। আর এই সামরিক উত্তেজনা চলাকালীন সময়ের মধ্যেই তুরস্কের জন্য আগে থেকে তৈরি করা এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটার গ্রিসের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধসহ বেশ কিছু বৈশ্বিক ইস্যুতে তুরস্ক সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে চরম বিরোধ এবং মতানৈক্য দেখা দেওয়ার কারণেই তুরস্কের কাছে আর এফ-৩৫ সরবরাহ করতে চাচ্ছে না মার্কিন সরকার। আবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের মতো বিতর্কিত ইস্যুটি। আবার সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও চীনের সাথে নতুন করে তুরস্কের উচ্চ মাত্রায় বানিজ্যিক ও সামরিক সহযোগিতামুলক সম্পর্ক গড়ে উঠায় বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা দোসররা।

তবে যাই হোক না কেন, শত বছরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে উসমানীয় খেলাফতের দেশ তুরস্ক আবারো বিশ্বের বুকে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যদিও অদূর ভবিষ্যতে তুরস্ককে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হতে পারে। আর বর্তমানে মধ্যপ্রচ্য, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ায়সহ একাধিক বৈশ্বিক ইস্যু ও সমর নীতিতে বিশ্ব পরাশক্তিধর দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা ও কূটনৈতিক দক্ষতা প্রকাশে কোন রকম দ্বিধা করছে এরদোয়ানের দেশ তুরস্ক। তবে যাই হোক না কেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক কিন্তু যথেষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং যোগ্যতা অর্জন না করেই বিশ্বের প্রথম সারির সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে বিপদজনকভাবে সামরিক উত্তেজনা এবং বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে তুরস্কের নিজস্ব নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি ও অস্ত্র না থাকায় বৈশ্বিক পর্যায়ের সামরিক সুপার পাওয়ার দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ দীর্ঘ মেয়াদে মোকাবেলা করাটা খুব একটা সহজ কাজ হবে না। তাই আপাতত তুরস্কের নিজস্ব পরমাণু প্রযুক্তি অর্জনের বিকল্প কিছু হতে পারে না।

এদিকে ভূমধ্যসাগরে বিতর্কিত সামুদ্রিক জলসীমায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সাথে গ্রীস এবং সাইপ্রাসের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। আর উভয় পক্ষের অনড় অবস্থান ও বৈরি নীতির কারণে বর্তমানে গ্রীসের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে পরোক্ষভাবে হলেও সম্রাজ্যবাদী গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ভয়ঙ্কর হুমকীতে রয়েছে দেশটি। অথচ বর্তমানে অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক সক্ষমতা ও যোগ্যতার বিচারে এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশের পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়নি তুরস্ক।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.