--- বিজ্ঞাপন ---

সুপার পাওয়ার হতে পারছে না তুরস্ক

0

বিগত এক দশকে কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি), মিসাইল এণ্ড লাইট ডিফেন্স সিস্টেম নির্ভর প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা অর্জন করলেও তা কিন্তু সামগ্রিকভাবে তুরস্কের সামরিক সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর পর্যায়ে পড়ে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে তুরস্ক একাধারে বিশ্বের বেশ কিছু সক্রিয় রণাঙ্গনে যেমন সিরিয়া, লিবিয়া এবং আজারবাইজানে-আর্মেনিয়া যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। তুরস্ক নিজেও একটি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর সাথে বৈরিতা এবং চরম বিবাদ।

যেখানে তুরস্কের যে সামরিক সক্ষমতা এবং অভিযান আজ থেকে আগামী ১০-১৫ বছর পর দেখানো উচিত ছিল, তারা কিন্তু তা বিবেচনায় না এনেই মধ্যম মাত্রায় সামরিক সক্ষমতা নিয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে চরম মাত্রায় বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। অথচ অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার বিচারে ইউরোপের দেশ গ্রীস তুরস্ক অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গ্রীসকে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো সরাসরি সমর্থন দানের পাশাপাশি নির্বিচারে অস্ত্র সরবরাহে কোন রকম ত্রুটি রাখবে বলে মনে হয় না। আর এখনই কিন্তু ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো জোট বেঁধে গ্রীসকে পূরো মাত্রায় সমর্থন দিতে শুরু করে দিয়েছে এবং অত্যন্ত গোপনে তুরস্ক বিরোধী কার্যকলাপ ও জোট গঠনে এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। আর এখন পশ্চিমা সকল দেশ এক হয়ে মার্কিন প্রশাসনের হাত ধরে কাউন্টারিং আমেরিকা’স এডভারসারিজ থ্রু সেনেকশন এক্ট (সিএএটিএসএ) আইনের আওতায় তুরস্কের উপর অবরোধ চাপিয়ে তাদের অর্থনৈতিক এবং সামরিক অগ্রযাত্রা চিরতরে থামিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে।

তুরস্কের সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং অবস্থা বিচার করলে দেখা যায় যে, গত ২০২০ সালের শুরু থেকেই তুরস্কের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জিডিপি বড় ধরণের হোঁচট খেতে থাকে। বিশেষ করে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনা (কভিড-১৯) মহামারির ফলে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মহামন্দার বিরুপ প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তুরস্কের পন্য ও সেবা রপ্তানি কমে যাওয়া এবং পর্যাটন খাতে নজিরবিহীন বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় ফলে ডলারের বিপরীতে তুর্কী কারেন্সী লিরার মানের ব্যাপক আকারের অধঃপতন ঘটে ৷ ২০২০ সালের জুলাই-আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এসে তুর্কী লিরার মান ২৪% পর্যন্ত কমে যায় এবং এই সময়ে ১ ডলারের বিপরীতে ৫.৯৫ লিরা থেকে এক লাফে নেমে ৭.৭৫ লিরাতে পৌছে যায়। যদিও ২০২১ সালের ৮ই জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী তুর্কী লিরার মান কিছুটা শক্তিশালী হয়ে আবারো এক ডলারের বিপরীতে ৭.৩৬ তুর্কী লিরাতে পৌছেছে।

বর্তমানে তুরস্কের জিডিপি ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হলেও দেশটির দীর্ঘ মেয়াদী বিশাল আকারের বৈদেশিক ঋন ও বোঝা সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী তুরস্কের মোট বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ৪৩১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আর তাই প্রতি বছর দেশটির মোট আয়ের ও জিডিপির একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ঋন ও তার সুদ বাবদ পরিশোধ করতে। যদিও দেশটির হাতে ২০২০ সালের নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ৮৪.৫০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রয়েছে। ২০১৯ সালে পর্যটন শিল্প থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পর্যটন শিল্পখাত থেকে আয়কারী দেশের একটি হিসেবে তুরস্ককে বিবেচনা করা হয়। তবে ২০২০ সালে সারা বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাইসের ভয়ঙ্কর থাবা এবং বিশ্ব অর্থনীতির চরম মহামন্দার কবলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তুরস্কের পর্যটন শিল্পখাত এবং জাতীয় রপ্তানি। তবে দেশটি ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ১৬৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পন্য বিদেশে রপ্তানি করে। ২০১৯ সালে ১৭১.৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ১৬৭.৯ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করেছিল তুরস্ক।

রশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় নিয়ে চরম মতবিরোধ বা দ্বন্দ এবং তুরস্কে সরকার বিরোধী সেনা অভ্যুথানে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চলমান দ্বন্দের মুখে মার্কিন ট্রাম্প সরকার তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পন্যের উপর অধিক হারে শুল্ক চাপিয়ে দেয়। বিশেষ করে তুরস্কের ইস্পাতসহ অন্যান্য রপ্তানি পন্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে বসে ৷ ফলে বিশ্বজুড়ে পন্য আমদানির কেন্দ্র ইউরোপ এবং আমেরিকাতে তুরস্কের পন্য রপ্তানি অনেকাংশেই কমে যায়।

তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত তুরস্ক মোট ২.৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সাজ সরঞ্জাম আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে শক্ত অবস্থানে চলে। যদিও ২০১৯ সালে তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি ছিল ২.৭২ বিলিয়ন ডলার। আর আগামী ২০২৫ সালে মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্পখাত থেকে বৈশ্বিক রপ্তানির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটির সামরিক ও প্রতিরক্ষা শিল্পখাত। অন্যদিকে তুরস্ক ২০২১ সালে এসে বৈশ্বিক অস্ত্র বাজার থেকে অস্ত্র আমদানি নজিরবিহীনভাবে ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে এনে নিজস্ব প্রযুক্তির ডিফেন্স রিলেটেড ইণ্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.