--- বিজ্ঞাপন ---

জেট ফাইটার বানানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে সুপার পাওয়ারগুলো

0

পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট ফাইটার ডিজাইন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিশ্বের বেশকিছু দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, ইরান, ভারত, দক্ষিন কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া নিজস্বভাবে কাজ করে গেলেও এখনো পর্যন্ত কিন্তু মাত্র তিনটি দেশই তাদের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টলিথ জেট ফাইটার আকাশে উড়াতে কিম্বা সার্ভিসে আনতে সক্ষম হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া এবং চীনকে অনেকটাই সফল বলে মনে করা হয়। আর বাকী দেশগুলো এখনো পর্যন্ত পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট ফাইটার তৈরির প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়ে গেছে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই কিন্তু সেই আশির দশক থেকেই তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি স্টিলথ জেট ফাইটার কিংবা বোম্বার বিশ্বের সামনে এনে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর এগিয়ে রয়েছে। আর তারা এখন কিনা গোপনে ষষ্ঠ প্রজন্মের এরিয়াল এণ্ড এভিয়েশন টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং ২০২০ সালে বেশকিছু পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে। যা আগামী ২০২৮ সালের দিকে সীমিত পরিসরে হলেও সার্ভিসে চলে আসতে পারে।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, মার্কিন এয়ার ফোর্স তার বিমান বহরে স্টিলথ এফ-১১৭ এট্যাক নাইটহক জেট ফাইটার সবার অগচরে ১৯৮৩ সালে সার্ভিস এনে তা আবার ২০০৮ সালেই অবসরে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে কিনা বিশ্বের অন্যান্য দেশ পঞ্চম প্রজন্মের জেট ফাইটার তৈরির একেবারেই প্রাথমিক গবেষণার স্তরেই রয়ে গেছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টিলথ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বি-২ স্পিরীট সুপার বোম্বার, এফ-২২ র‍্যাপটার ও এফ-৩৫ লাইটনিং-২ সুপার স্টিলথ জেট ফাইটারগুলো কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশ্বের বুকে সক্রিয় থাকা যুদ্ধক্ষেত্রগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এখন ইনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিমান বহরে থাক বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বারের রিপ্লেস হিসেবে নতুন প্রজন্মের বি-২১ রেইডার সুপার স্টিলথ আগামী ২০২৫ সালের দিকে সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে।

আসলে প্রায় ২.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন বি-২ স্পিরিট সার্ভিসে আসে ১৯৯৭ সালে। অন্যদিকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এফ-২২ র‍্যাপটার সার্ভিসে আনা হয় ২০০৫ সালে এবং বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলারের এভিয়েশন প্রজেক্টের আওতায় মার্কিন মাল্টিনেশন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এফ-৩৫ জয়েন্ট স্টাইক লাইটিনিং-২ সর্ব প্রথম সার্ভিসে আসে ২০১৫ সালে। যা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়েসহ বেশ কিছু দেশ এর ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, মার্কিন এফ-৩৫এ সিরিজের জেট ফাইটার সরাসরি সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে এর প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে ইসরাইলের এয়ার ফোর্স।

অন্যদিকে, বিশ্বের অপর দুই সুপার পাওয়ার রাশিয়া এবং চীন তাদের নতুন প্রজন্মের এসইউ-৫৭ এবং জে-২০ নিয়ে এক দশক ব্যাপী ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে অনেকটা সীমিত পরিসরে হলেও সার্ভিসে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া তার বিমান বাহিনীর হাতে প্রথম ব্যাচে ৪টি এডভান্স এসইউ-৫৭ স্টিলথ জেট ফাইটার তুলে দিয়েছে। আর এদিকে চীন ব্যাপক সমালোচনা এবং প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ৫০টি জে-২০ স্টিলথ জেট ফাইটার সার্ভিসে এনেছে। অথচ চীন এবং রাশিয়া যেভাবে একেবারেই উম্মুক্তভাবে প্রচলিত জেট ইঞ্জিন তাদের এসইউ-৫৭ এবং জে-২০ তে ইন্সটল করেছে তাতে তো এমনিতেই উড্ডয়নরত অবস্থায় শত্রু পক্ষের রাডারে জেট ইঞ্জিনগুলো হীট সিকনেচার হয়ে যাওয়ার কথা।

এদিকে চীন কিনা আবার মার্কিন বি-২ স্পিরিটের ক্লোন কপি হং-২০ সার্ভিসে আনার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যা খুব সম্ভবত আগামী ২০২৫ সালের দিকে প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করতে পারে।

তাছাড়া জাপান তার পঞ্চম প্রজন্মের মিতসুবিশি এক্স-২ সিনসিন স্টিলথ জেট ফাইটারের বেশকিছু সফল পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করলেও তা আগামী ২০৩০ এর আগে সার্ভিসে আসার আপাতত কোন সম্ভবনা আছে বলে মনে হয় না। যদিও ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট ফাইটার (এএমসিএ) প্রজেক্টের প্রটোটাইপ টুইন ইঞ্জিন স্টিলথ জেট ফাইটার কপির প্রথম উড্ডয়ন আগামী ২০২৬-২৮ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী ভারত।

এদিকে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুরস্ক তাদের টিএফএক্স নতুন প্রজন্মের জেট ফাইটার টি-এফএক্স এর মক আপ কপি ডিফেন্স এক্সপোতে প্রদর্শন করে।এটি আগামী ২০২৩ সালে প্রথম প্রটোটাইপ কপির উড্ডয়ন সম্পন্ন করার পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে সীমিত পরিসরে সার্ভিসে আনতে বদ্ধপরিকর। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে তুরস্কের ব্যাপক মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট ফাইটার প্রজেক্টে অবিশ্বাস্যভাবে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যের নাম। বিশেষ করে বিশ্ব বিখ্যাত জেট ইঞ্জিন উৎপাদনকারী কর্পোরেশন যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস তুরস্কের টি-এফএক্স জেট ফাইটারের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জেট ইঞ্জিন সরবরাহ করবে এবং অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নিজেরাও ভবিষ্যতে পঞ্চম প্রজন্মের তুর্কী জেট ফাইটার ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

যদিও ইউরোপীয় দেশগুলো তুরস্কের কাছে ড্রোন এবং জেট ফাইটারের প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহে প্রবলভাবে আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার ও এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশনগুলোর কাছে। এ দেশগুলোর পাশাপাশি ইরান তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির স্টিলথ জেট ফাইটার প্রজেক্ট নিয়ে দীর্ঘ এক দশক থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ইরানের সার্বিক সফলতার হার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই পেছনে পড়ে রয়েছে। তাছাড়া ইরান ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের জেট ফাইটারের মডেল বিশ্ব্রর সামনে উন্মোচন করলেও এর আকৃতি এবং ডিজাইন কিন্তু বড় ধরণের সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.