--- বিজ্ঞাপন ---

অবিলম্বে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋন পরিশোধ করুন, পাকিস্তানকে আরব আমিরাতের চাপ

বেকায়দায় ইমরান সরকার

0

পাকিস্তানের সাথে আরব আমিরাতের সম্পর্ক এক সময় ভালো থাকলেও এখন আর নেই। পাকিস্তানের ভিসা আমিরাত বন্ধ করেছে। আমিরাতের সাথে ইসরাইলের চুক্তির ফলে পাকিস্তানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন ইমরানও। এ অবস্থায় পাকিস্তানকে দেয়া ৩ বিলিয়ন ডলার ঋন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে আমিরাত।

সৌদি আরবের পথ অনুসরণ করে এবার পাকিস্তানকে দেয়া পূর্বের ৩.০০ বিলিয়ন ডলার ঋণের পাওনা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। মুলত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে একেবারে সহজ শর্তে ৩.০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋন বাবদ প্রদান করে। আর চুক্তি মোতাবেক ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি সেই ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ১.০০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল।

গত ২০২০ সালের শেষের দিকে সৌদি আরব পাকিস্তানকে তাদের বকেয়া ৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে চাপ দিলে পাকিস্তান সৌদি আরবের পাওনা বাবদ ৩.০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২.০০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে দেয়। অবশ্য সৌদি আরবের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে পাকিস্তানের ইমরান সরকার আবারো কঠিন শর্তের মুখে চীন এবং আইএমএফ এর কাছ থেকে বিপুল পরিমান বৈদেশিক ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।

তাছাড়া ২০২০ সালের শেষের দিকে চীনের কাছ থেকে গোপন কোন জটিল শর্তের মুখে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার ঋন সহায়তা নিয়ে সৌদি আরবের পাওনা বাবদ ১.০০ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধ করে পাকিস্তানের ইমিরান সরকার। আবার শর্ত মোতাবেক বাকি ১.০০ বিলিয়ন ডলার চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে হয়ত অন্য দেশ বা ঋণ প্রদানকারী বৈদেশিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ এর কাছ থেকে নেয়া বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করে।

তার মানে পাকিস্তানকে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অন্য কোন দেশ বা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার কাছ ঋন নিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে আরেক দেশের ঋণ ও দেনা। এতে করে দেশটি সাময়িকভাবে ঋন বা বৈদেশিক দেনার ভারসাম্য কিছুটা রক্ষা করতে সক্ষম হলেও কার্যত দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরণের ঋণ ও বৈদেশিক দেনার ফাঁদে নিশ্চিতভাবেই আটকে যাচ্ছে পাকিস্তান।

মুলত সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের সাথে অতি মাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে মোটেও সুনজরে দেখছে না মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর তাই পাকিস্তানের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে সৌদি আরবের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতও এই মূহুর্তে তাদের বকেয়া ঋণের পাওনা মেটানোর জন্য প্রবল চাপ অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের ইমরান সরকারের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানের উপর চরম নাখোশ হয়ে পাকিস্তানকে দেয়া সকল ধরণের আর্থিক সহায়তা বাতিল করে ঋণ বাবদ পূর্বের দেয়া অর্থ ফেরত দেবার জন্য পাকিস্তানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ দুটি।

গত ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ প্রায় ১১৭ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় এক তৃতীয়াংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পাকিস্তান মোট ১০.৫০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋন নিয়েছে। আর এই বড় ধরণের ঋন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বৈদেশিক ব্যাংক, সৌদি আরব, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ সরবরাহ করেছে। তাছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাকিস্তান মোট ৮.৪০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋন নেয়।

আসলে ভারতের সাথে সামরিক শক্তিতে পাল্লা দিতে প্রতিনিয়ত নির্বিচারে আধুনিক ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ক্রয় এবং তার পাশাপাশি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কারণে পাকিস্তানের পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋন ও দেনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ ১ লক্ষ ৪৬ হাজার পাকিস্তানী রুপীর সমপরিমাণ অর্থের কাছাকাছি এসে পৌছেছে। আর এখন প্রতি অর্থ বছরে পাকিস্তানের বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে ঋনের মূল অংশ ও সুদের দেনা পরিশোধ করার জন্য। যা দেশটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী ২০শে নভেম্বর ২০২০ ইং তারিখে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০.৫৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এই রিজার্ভের ৭০% কিনা বৈদেশিক ঋন সহায়তার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। আর দেশটির বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋন ও দেনার বিবেচনায় ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ কিন্তু মোটেও যথেষ্ঠ নয়। যেখানে সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৮.৪০ বিলিয়ন ডলার।

তাছাড়া পাকিস্তানের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২০ সালে ২৪.০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করলেও ভারতকে মোকাবেলায় সামরিক খাতে দেশিটির লাগামহীন ব্যয় এবং বিদেশে অর্থ পাচারের মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয়গুলো পাকিস্তানের ইমরান সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.