--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তিতে আলোচনায় ফ্রান্সের তৈরি বারকুডা ক্লাসের ‘সাফরেন’ সাবমেরিন

0

বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তিশালী ও লং রেঞ্জের নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিনের কথা আসলে আমরা সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ক্লাস, চীনের জিন ক্লাস কিংবা রাশিয়ার টাইফুন বা বোড়ই ক্লাস সাবমেরিনকে বিবেচনা করে থাকি। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার এই জাতীয় নিউক সাবমেরিনকে লং রেঞ্জের স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম) ব্যবহারের উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। তবে কনভেনশনাল বা প্রচলিত অস্ত্র ও মিসাইল সজ্জিত বিশ্ব মানের নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ফাস্ট এ্যাটাক সাবমেরিনের ডিজাইন ও তৈরিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পর সবচেয়ে সফল একটি দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। আসলে ফ্রান্সের তৈরি বারকুডা ক্লাসের ‘সাফরেন’ নামক নতুন প্রজন্মের স্টিলথ ক্যাপাবিলিটির নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিনটি কনভেনশনাল অস্ত্র সজ্জিত সাবমেরিনের প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্বের যে কোন দেশের সাবমেরিনকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে।

মুলত বিগত এক যুগের ব্যাপক গবেষণা এবং উন্নয়ন ঘটিয়ে এই সমুদ্রের নিরব ঘাতক খ্যাত বারকুডা ক্লাস নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন ২০১৯ সালে সার্ভিসে আনে ফ্রান্স। ফ্রান্সের শীপ বিল্ডিং কর্পোরেশন ফ্রেঞ্চ শীপ বিল্ডার নেভাল গ্রুপ সাবমেরিনটি তৈরি করে। সাফরেন কার্যত ফরাসী বারকুডা ক্লাসের একটি উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সাবমেরিন। আর ফরাসী নেভীতে এটি এই ক্লাসের প্রথম সাবমেরিন। যদিও ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে সাবমার্জড অবস্থায় ১৪,৩৩৫ কেজি ওজনের নিউক্লিয়ার ওভারহেড বেসড লং রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল সমৃদ্ধ কৌশলগত ট্রিয়মফেন্ট (Triomphant) ক্লাস নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন রয়েছে মোট ৪টি।

ফ্রান্স বারকুডা ক্লাসের এরুপ ছয়টি নিউক সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ প্রজক্টের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। এর প্রজেক্ট কস্ট ধরা হয়েছিল ৯.৯০ বিলিয়ন ইউরো বা ১২.০৭৮ বিলিয়ন ডলার এবং পার ইউনিট কস্ট ১.৩০ বিলিয়ন ইউরো বা ১.৫৮৬ বিলিয়ন ডলার । সাফরেন নিউক সাবমেরিনকে বর্তমানে সার্ভিসে থাকা ৮০ দশকের ‘রুবিস’ ক্লাস সাবমেরিনগুলো ভবিষ্যতে অবসরে পাঠিয়ে পর্যায়ক্রমে রিপ্লেস করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ফরাসি নৌবাহিনী।

৯৯.৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮.৮০ মিটার বীমের নতুন প্রজন্মের স্টিলথ এই বারকুডা ক্লাসের ‘সাফরেন’ নিউক্লয়ার পাওয়ারড ফাস্ট এ্যাটাক সাবমেরিনের ওজন ৫,৩০০ টন এবং এর গতিবেগ ঘন্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বা ৪৬ কিলোমিটার। এটিতে ১২ জন অফিসার এবং ৪৮ জন নাবিক কাজ করতে করতে পারে। তাছাড়া সাফরেন সাবমেরিনে খাদ্য মজুত করে একনাগাড়ে ৭০ দিন পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার একবারে ১০ বছরের নিউক্লিয়ার ফুয়েল নিয়ে এটি আনলিমিটেড সমুদ্র পথ চলতে সক্ষম। সাফরেন নিউক সাবমেরিনে পাওয়ার জেনারেশন হিসেবে ২টি গ্রুপে ১০ মেগাওয়াট (১৩,০০০ হর্স পাওয়ার) ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া ১৫০ মেগাওয়াট (২,০০,০০০ হর্স পাওয়ার) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কে-১৫ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর রয়েছে এই সাবমেরিনে। তার পাশাপাশি ২টি এমার্জেন্সী ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এবং একটি পাম্প-জেট ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। সমুদ্রের পানি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন তৈরির প্রযুক্তি এবং উন্নত বজ্য নিষ্কাশন সিস্টেম ইনস্টল করেছে ফ্রান্স।

সাফরেন সাবমেরিনের ৪টি ৫৩৩ এমএম টর্পেডো টিউব থেকে টর্পেডো এবং মিসাইল ফায়ার করতে সক্ষম। এটিতে মোট ২৪টি টর্পেডো এবং মিসাইল বহন করতে সক্ষম। যার মধ্যে ৪টি থাকে টিউবে এবং ২০টি সাবমেরিনের ভিতরে র‍্যাকে রাখা থাকে। এর মেইন অস্ত্র হিসেবে রয়েছে এফ-২১ হাই এক্সপ্লুসিভ টর্পেডো এবং এসএম-৩৯ ব্লক-২ এন্টিশীপ মিসাইল। তার পাশাপাশি রয়েছে নেভাল (এমডিসিএন এসসিএএলপি) ক্রুজ মিসাইল এবং এফজি-২৯ মাইন। তবে এটিকে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বেসড স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল কিম্বা (এসএলবিএম) জন্য ডিজাইন বা কাস্টমাইজড করা হয়নি।

এটি তৈরি করতে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাইপ, ১৭,০০০ পাইপ সেকশন, ১৬০ কিলোমিটার ক্যাবল ১,৫০,০০০ ক্যাবল কানেকশন এবং ৭০,০০০ ফানশোনাল ডিভাইস, একুশ মিলিয়ন কোড লাইন ফর দ্যা (আইপিএমএস) এণ্ড (সিএমএস) সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.