--- বিজ্ঞাপন ---

নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রই কি পৃথিবী ধ্বংসের কারন হবে (শেষ পর্ব)

রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে আনুমানিক ৬৮৫০টি নিউক্লিয়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র মজুদ

0

তবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে যতই অতি ভয়ঙ্কর নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকুক না কেন, এ মুহুর্তে বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতার বিচারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বেশি রয়েছে সুবিশাল পুতিনের দেশ রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার গোপন অস্ত্র ভান্ডারে আনুমানিক ৬৮৫০টি নিউক্লিয়ার ও অতি ভয়ঙ্কর থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড মজুদ থাকতে পারে। তাছাড়া রাশিয়ান স্ট্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সেস ইউনিটের হাতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার আরএস-৩৬/২৮ সারমাট এবং সাবমেরিন ভিত্তিক বেভুলা (আইসিবিএম) এবং ট্যাকটিক্যাল ইস্কেন্দার-এম ব্যালেস্টিক সহ আনুমানিক ৩ হাজারের কাছাকাছি মিডিয়াম, সর্ট এন্ড লং রেঞ্জের স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইল মজুদ রয়েছে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সর্বোচ্চ ৬১৮৫টি নিউক্লিয়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেডসহ দুই হাজারের কাছাকাছি স্ট্যাটিজিক্যাল মিসাইল থাকতে পারে।
তাছাড়া, ফ্রান্সের অস্ত্র ভাণ্ডারে আনুমানিক ৩৮০-৪০০টি, যুক্তরাজ্যের অস্ত্র ভান্ডারে সর্বোচ্চ ৩০০টি নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স ও ওয়ারহেড থাকতে পারে। তবে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক সাবমেরিনের ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ওয়ারহেডে সার্বক্ষণিক মোতায়েন করা থাকে। তবে প্রকাশ থাকে যে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের কমপক্ষে একটি করে পারমাণবিক সাবমেরিন সম্পূর্ণ নিউক ব্যালেস্টিক মিসাইল লোডেড অবস্থায় সার্বক্ষণিক সমুদ্রে মোতায়েন রাখা হয়। যার মূল টার্গেট কিন্তু রাশিয়ার সামরিক ঘাটি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমুহ।
তবে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র এবং আইসিবিএম মিসাইল সক্ষমতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পর বিশ্বের মধ্যে উদীয়মান সামরিক পরাশক্তি চীনকে মনে করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে এই ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পর বিশ্বের বুকে তৃতীয় সর্বোচ্চ নিউক্লিয়ার শক্তিধর দেশ হচ্ছে কিন্তু ফ্রান্স। এই মুহুর্তে ফ্রান্সের অস্ত্র ভাণ্ডারে আনুমানিক ৩৮০-৪০০টি নিউক অস্ত্র মজুত রয়েছে এবং দেশটি ইতোমধ্যেই বিগত চার দশকে আনুমানিক মোট ৪৮০ বার নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স পরীক্ষা করেছে। তার সাথে দেশটির হাতে থাকা ৪টি ১২,৬৪০ টন ওজনের আনলিমিটেড রেঞ্জের ট্রিয়মফ্যান্ট ক্লাস (Triomphant class) নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিনকে ফ্রান্সের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এম-৪৫ কিংবা এম-৫১ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল বহণ করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া ফ্রান্সের তৈরি ৭-১০ হাজার কিলোমিটার পাল্লার কৌশলগত এম-৫১ (এসএলবিএম) ব্যালেস্টিক মিসাইল ৬ থেকে ১০টি প্রতিটি ১১০ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করে এবং যার সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২৫ এর কাছাকাছি। আর ফ্রান্সের হাতে থাকা এই সিরিজের বিশাল আকারের চারটি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন বিশ্বের যে কোন দেশের সামরিক আগ্রাসনকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে রুখে দিতে সক্ষম।
এদিকে চীনের অস্ত্র ভান্ডারে কমপক্ষে ৩২০টি, ইসরাইলের ১০০টি, পাকিস্তানের ১৪০টি, ভারতের ১৩০টি এবং উত্তর কোরিয়ার কিম বাহিনীর হাতে স্বল্প সক্ষমতার সর্বোচ্চ ২০-৩০টি নিউক্লিয়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড মজুদ থাকতে পারে। তবে বর্তমানে উদীয়মান সামরিক পরাশক্তি চীনের কাছে আরো বেশি সংখ্যক নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকার সমুহ সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে। যদিও এ পরিসংখ্যানটি নিরপেক্ষ কোন মাধ্যমে প্রমান করার কোন সুযোগ নেই। তবে বাস্তবে ভারত ও চীনের স্ট্যাটিজিক সামরিক বাহিনীর হাতে আরও বেশি সংখ্যক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ও ডিভাইস থাকার সমুহ সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে। তবে চীনের সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সীমান্তে ব্যাপক আগ্রাসী কার্যকলাপ এবং সামরিক পেশশক্তি প্রদর্শনী রুখে দিতে এবং ভারতকে তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত ১৩০ থেকে ২২০ এ উন্নীত করার বিকল্প কিছু থাকতে পারে না।
আবার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামরিক পরাশক্তি চীন নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত গোপনেই নিউক্লিয়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রের বিশাল মজুত গড়ে তুলছে। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের অস্ত্র ভান্ডারে এ মুহুর্তে ৩২০টি বা তার কাছাকাছি নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিক্লিয়ার অস্ত্র থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের দিকে তাইওয়ান-মার্কিন ভিত্তিক গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চীন ভু-গর্ভস্থ একাধিক গোপন ঘাঁটি ও গবেষণাগারে নতুন প্রজন্মের ব্যালেস্টিক মিসাইল বেসড হাজারের অধিক নিউক্লিয়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড উন্নয়নে এবং সর্বোপরি দীর্ঘ ও মধ্যম পাল্লার স্ট্র্যাটিজিক্যাল ক্ষেপনাস্ত্রের বিশাল মজুত গড়ে তুলছে এবং অনেকটাই বিশ্ববাসীর নজর এড়িয়ে এ খাত উন্নয়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে চীন। আরেক হিসেব তথ্যমতে চীনের স্ট্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে এ মুহুর্তে আনুমানিক ২,৮০০টি বিভিন্ন পাল্লার স্ট্যাটিজিক্যাল এণ্ড ট্যাকটিক্যাল মিসাইল মজুত করে রেখেছে দেশটি।সে হিসেবে চীনের প্রদত্ত নিউক সংখ্যা ও স্ট্যাটিজিক্যাল মিসাইলের পরিমাণে গড়মিল বেশ লক্ষ্যনীয় এবং এক রকম হাস্যকর বটে। আবার, খুব সম্ভবত ভারতের কাছে আনুমানিক ২০০টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৫০টি বিভিন্ন পাল্লার স্ট্যাটিজিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল মিসাইলের বিশাল মজুত থাকতে পারে। যা ভবিষ্যতে দেশ দুটি যে কোন ধরণের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে একে অপরের বিরুদ্ধে পরমানু অস্ত্র প্রয়োগে হুমকি পাল্টা হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। এতে করে কার্যত আমাদের দক্ষিণ এশিয়া এমনকি সর্বোপরি বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিবস্থার জন্য ভয়ানক হুমকী হিসেবে থেকেই যাচ্ছে।
তাছাড়া পারমাণবিক শক্তি অর্জনের প্রতিযোগিতায় আরো বেশকিছু দেশ অত্যন্ত গোপনের অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে তুরস্ক, ইরান এবং জাপানের স্থান সবার উপরে। মনে করা হয় পশ্চিমা বিশ্বের শত বাধা এবং অবরোধের মুখে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ইরান। আর তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বৈশ্বিক ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজস্ব ছক এবং কৌশল মোতাবেক বিভিন্ন দেশে সামিরিক সহযোগিতা ও অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে একেবারে সুপার পাওয়ার দেশের মতো। তবে প্রচলিত অস্ত্র সক্ষমতায় তুরস্ক ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হলেও তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে প্রকাশ না হওয়ায় তুরস্ককে আপাতত বিশ্বশক্তি দেশের পর্যায়ে বিবেচনা করার কোন সুযোগ থাকে না। তাই পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিচারে তুরস্কের নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি এবং অস্ত্র সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প কিছু থাকতে পারে না।
আবার এ মুহুর্তে জাপানের হাতে কোন নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মনিউক্লিয়ার ওয়েপন্স বা অপ্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র না থাকলেও জাপান কিন্তু ঠিকই অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক সারা দেশ জুড়ে অসংখ্য উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তৈরি সম্পন্ন করে রেখেছে। যদিও জাপানিজ সরকারের ভাষ্যমতে, জাপানের শতভাগ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে এ মুহুর্তে জাপানের হাতে যে বিপুল পরিমাণ ক্রয়কৃত প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে এবং যে পর্যায়ের অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট হাতে রয়েছে তা ব্যবহার করে ভবিষ্যতে চীনের সাথে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শতাধিক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড তৈরি করতে সক্ষম বলে আশাঙ্খা করা হয়। তাছাড়া জাপান তার নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে অদূর ভবিষ্যতে চীনের সামরিক উত্থান এবং আগ্রাসন ঠেকানোর অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অত্যন্ত গোপনে লাগামহীনভাবে অতি ভয়ঙ্কর নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি যে শুরু করে দিবে না তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
তবে এটা ঠিক যে, নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়েপন্স শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার হাতে শতভাগ না থেকে বিশ্বব্যাপী একাধিক দেশের হাতে স্বল্প পরিমানে হলেও ছড়িয়ে থাকার জন্য আপাতত বিশ্বে এক রকম ভারসাম্যপূর্ণ সামরিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী চরম সংঘাত ও যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও, শুধুমাত্র একাধিক দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার জন্য বিশ্বে এখনো পর্যম্ত সাত দশকের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অতি ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হচ্ছে না বা নিকট ভবিষ্যতেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগার কোন সমুহ সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। যা হচ্ছে শুধু প্রভাব বিস্তার, সামরিক ও পেশীশক্তি প্রদর্শন এবং কৌশলে নিজেদের অস্ত্র বানিজ্য বজায় রাখা। যদি এখানে একমাত্র মার্কিনী বা রাশিয়ানদের হাতেই শতভাগ নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকত, তাহলে হয়ত নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের আরো বেশকিছু শহর বা দেশকে হিরোশিমা বা নাগাসাকির মতো অতি ভয়ানক ও প্রাণঘাতী ধ্বংসাত্বক অবস্থা বরণ করতে যে হতো না তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে আশার বিষয় হচ্ছে যে, বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি কিংবা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ আপাতত এক রকম নেই বলেই প্রতিয়মান হয়। তাই বিশ্বে বুকে নতুন করে আরও কমপক্ষে তিন থেকে চারটি দেশের নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি ও অস্ত্র অর্জন করতে পারলে বিশ্ব থেকে পারমাণবিক যুদ্ধ পরিস্থিতি লাঘব হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর একক কর্তৃত্ব এবং আধিপত্য দীর্ঘ মেয়াদে হ্রাস পেতে পারে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.