--- বিজ্ঞাপন ---

আকাশপথে আরও শক্তি বাড়াচ্ছে আমেরিকা

0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী নতুন করে আরও ১৪৪টি এফ-১৫ এর সর্বশেষ ভেরিয়েন্ট এফ-১৫ ইএক্স সুপার এডভান্স জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে। মুলত এফ-১৫ জেট ফাইটার সত্তরের দশকের সার্ভিসে আসলেও এক বিংশ শতাব্দীতে এসে আজো অব্ধি বিশ্বের সেরাদের সেরা যুদ্ধবিমান হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া মার্কিন বিমান বাহিনীতে সার্ভিসে থাকা এফ-১৫ সি/ডি ভেরিয়েন্টের জেট ফাইটারের রিপ্লেস হিসেবে পর্যায়ক্রমে ৩০ হাজার পাউণ্ড পে-লোড সক্ষমতার এফ-১৫ ইএক্স সিরিজের এডভান্স এয়ার সুপিউরিটির জেট ফাইটার সার্ভিসে চলে আসবে।

আসলে এফ-১৫ ইএক্স জেট ফাইটারে রেইথন কর্পোরেশনের তৈরি ৪টি শর্ট রেঞ্জের এআইএম-৭ স্প্যারো এবং এ আইএম-৯ সাইডউইন্ডার মিসাইলের পাশাপাশি ১৬০ কিলোমিটারের অধিক রেঞ্জের ৮টি এআইএম-১২০ ডি সিরিজের এডভান্স এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইল ইনস্টলেশন করায় এটি আকাশ যুদ্ধে শত্রু পক্ষের বিশ্বের প্রচলিত যে কোন ধরণের জেট ফাইটারের জন্য ভয়ংকর রকমের বিপদজনক হয়ে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া গ্রাউন্ড এ্যাটাকের জন্য১০টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির এজিএম-৬৫/৮৪/১৩০/১৫৪/১৫৮ এয়ার টু সারফেস মিসাইল ব্যবহার করে।

তার পাশাপাশি বোম্বস হিসেবে রয়েছে রয়েছে মার্ক-৮২/৮৪, জিইউবি-১৫/১০/১২/২৪/২৭/২৮ (ব্যাংকার ব্লাস্টার) /৩১/৫৪/৩৯, সিইউবি-৮৭/৮৯/৯৭/১০৭ বিএলইউ-১০৭ বোম্বস ব্যবহার করে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো যে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী তাদের বহরে থাকা এফ-১৫ ঈগল সিরজের জেট ফাইটের কৌশলগত বি-৬১ এবং বি-৮৩ নিউক্লিয়ার গ্রাভেটি বোম্বস ব্যবহারের উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স অন্য কোন দেশের কাছে সরবরাহ, বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করে না।

তাছাড়া সার্ভিসে আসার পর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এফ-১৫ জেট ফাইটারের এয়ার কিলিং রেকর্ড প্রায় ১১২ এর কাছাকাছি। যা কিনা একক সিরিজের কোন যুদ্ধবিমানের একটি সর্বোচ্চ রেকর্ড৷ অন্যদিকে বিশ্বের কোন যুদ্ধবিমান আজ আব্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫ জেট ফাইটার এয়ার টু এয়ার যুদ্ধে কিংবা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে ধ্বংস বা শুট ডাউন করতে পারেনি।

বর্তমানে বোয়িং কর্পোরেশনের তৈরি ইঞ্জিনসহ এফ-১৫ ইএক্স সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারের মূল্য ৮৭.৭০ মিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। অথচ যেখানে কিনা লকহীড মার্টিনের তৈরি লট ১৪ ব্যাচের ইঞ্জিনসহ এফ-৩৫এ সিরিজের স্টিলথ জেট ফাইটারের মূল্য ৭৭.৯০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন চালু করা হলে এফ-১৫ ইএক্স সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারের পার ইউনিট কস্ট বা মূল্য ৮০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, জেট ফাইটারের মূল্য হিসেবে যে তালিকা ইউকীপিডিয়ায় কিংবা অন্যান্য ওপেন অনলাইন সোর্সে দেয়া থাকে তা কিন্তু একেবারে ওয়েপন্স, মেইন্টেনেন্স এণ্ড ট্রেনিং প্যাকেজ ছাড়া মূল্য তালিকা। বাস্তনে একটি টুইন ইঞ্জিন এফ-১৫ ইএক্স সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারের মূল্য ওয়েপন্সসহ ফুল প্যাকেজের (মিসাইল, ওয়েপন্স, নিদিষ্ট মেয়াদে রিপিয়ার এণ্ড মেইন্টেনেন্স, স্পেয়ায় পার্টস সাপ্লাই, ট্রেনিং) মূল্য কিন্তু ২৪০ মিলিয়ন ডলার থেকে কাস্টমাইজড সুবিধা ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ৩০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।

আসলে দীর্ঘ মেয়াদী ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান এবং বোম্বারগুলো সভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি জেট ফাইটারের কাছে শোচনীয় ভাবে বিপর্যস্ত এবং শুট ডাউন হওয়ায় মার্কিন বিমান বাহিনী তাদের বিমান বহরে একটি ডেডিকেটেড এয়ার সুপিরিওর এয়ারক্রাফটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে ১৯৬৭ সালে এই ফাইটার উন্নয়নের কাজ ম্যাকডোনেল ডগলাস কে দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে এফ-১৫ ঈগল জেট ফাইটারটি প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করে এবং ১৯৭৬ সালে সরাসরি মার্কিন বিমান বাহিনীতে প্রবেশ করে এখনো পর্যন্ত তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রদর্শন করে যাচ্ছে।

এফ-১৫ জেট ফাইটার আসলে খুবই উচ্চ ম্যানুভার ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার। যা যে কোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্যাবহার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এই বিমানে সবকিছুর তুলনায় এর হাইলী ম্যানুভার এবং ক্লোজ রেঞ্জে স্টাইক সক্ষমতার দিকে জোর দেয়া হয়েছিলো যদিও পরবর্তীতে এতে এআইএম-১২০ সি/ডি সিরিজের বিভিআর রেঞ্জের ধ্বংসাত্মক মিসাইল সংযুক্ত হওয়ায় এটি আকাশ যুদ্ধে একটি সেরা জেট ফাইটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

এফ-১৫ ইএক্স সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারে অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি জিই এফ-১১০-১২৯ আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট প্রায় ১৭০টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৫ ঈগল জেট ফাইটার বিভিন্ন মিশনে ক্রাস করে। তবে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ১২৮টি এফ-১৫ জেট ফাইটার আকাশে ক্রাস করে। তবে আজ অব্ধি শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমানের এয়ার টু এয়ার মিসাইলে কিংবস ডগ ফাইটে একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস কিংবা শুট ডাউন হয় নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য আজ অব্ধি তার মিত্র ভাবাপন্ন দেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের কাছে এফ-১৫ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার সরবরাহ করেনি। তাই এর ব্যাবহারকারী দেশের সংখ্যা খুব সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইসরাইল, জাপান, সৌদি আরব সর্বশেষ কাতার হতে যাচ্ছে এফ-১৫ কিউএ সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারের অন্যতম ব্যবহারকারী। তাছাড়া জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তির সমন্বয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে মিতসুবিশি এফ-১৫ জে সিরিজের জেট ফাইটার নিজ দেশেই তৈরি করে। কিছুদিন আগে অবশ্য সৌদি আরব লাইসেন্স নিয়ে নিজ দেশে এসেম্বলিত করার জন্য অত্যাধুনিক প্রোডাকশন লাইন স্থাপন করেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.