--- বিজ্ঞাপন ---

কেন মিসাইল নিয়ে উন্নত দেশগুলোর এত টেনশন!!

0

বর্তমান সময়ে আকাশ যুদ্ধে এয়ার টু এয়ার ডগ ফাইটের দিকটি বিবেচনা করলে বিশ্বের বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক এবং ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার টু এয়ার মিসালের নাম সবার উপরে চলে আসে। এখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাল্লার এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইল হিসেবে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি পিএল-২১ এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলকে বিবেচনা করা হয়। চীনের ভাষ্যমতে, একটিভ রাডার গাইডেড (এইএসএ) পিএল-২১ এর রেঞ্জ ৪৮০-৫০০ কিলোমিটার এবং পিএল-১৫ এর রেঞ্জ ৩০০-৩৫০ কিলোমিটার।

রাশিয়ার তৈরি এক্টিভ রাডার হোমিং বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল এয়ার টু এয়ার মিসাইল হিসেবে ম্যাক ৪.০ গতি সম্পন্ন আর-৭৭ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ৮০ কিলোমিটার, আর-৭৭-১ সিরিজের রেঞ্জ ১১০ কিলোমিটার এবং আর-৭৭এম সিরিজের রেঞ্জ ১৯৩ কিলোমিটার। আবার রাশিয়ার ম্যাক ৫-৬ হাইপারসনিক গতির আর-৩৭ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের অপারেশনাল রেঞ্জ ১৫০-৩৯৮ কিলোমিটার, কে-১০০ মিসাইলের রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার এবং আর-৩৩ মিসাইলের রেঞ্জ ১২০ কিলোমিটার এবং আর-৩৩ই (এক্সপোর্ট ভার্সন) এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের রেঞ্জ সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার।

অন্যদিকে ইরানের ফাকুর (বিভিআর) এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ২৮০ কিলোমিটার। তাছাড়া তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি দুটি সিরিজের ১৫০-২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের Gökdoğan (Peregrine) এবং Bozdoğan (Merlin) এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) এক্টিভ রাডার হোমিং সিস্টেম মিসাইল বিমান বাহিনীর হাতে চলতি ২০২১ সালেই তুলে দিতে যাচ্ছে। যা কিনা তুরস্কের এফ-১৬ জেট ফাইটার এবং ভবিষ্যতে টিএফ-এক্স নতুন প্রজন্মের জেট ফাইটার প্লটফর্ম থেকে লাউঞ্চ করা হবে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর যৌথ তৈরি ৪.০ ম্যাক গতির র‍্যামজেট ইঞ্জিন চালিত মেটওর বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের অপারেশনাল বিভিআর রেঞ্জ ১১০ কিলোমিটার। তবে এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সেরা এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইল হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান দখল করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেইথন কোম্পানির তৈরি এআইএম-১২০ সিরিজের বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ (বিভিআর) এডভান্স মিডিয়াম এয়ার টু এয়ার মিসাইল। রেইথন এ পর্যন্ত এআইএম-১২০ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের এ, বি, সি-৪/৫/৬/৭ এবং সর্বশেষ ডি সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইল সার্ভিসে এনেছে। তবে এবং সর্বশেষ ৪.০ ম্যাক গতির টার্মিনাল এক্টিভ হোমিং রাডার সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এআইএম-১২০ডি সিরিজের বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ১৬০ কিলোমিটার।

তবে প্রকাশ থাকে যে, এ পর্যন্ত শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এআইএম-১২০ সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইলের বিশ্বের একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে এয়ার টু এয়ার কমব্যাট কিলিং রেকর্ড আছে। আর এখন মার্কিন লিকহীড মার্টিন কর্পোরেশন আইএম-১২০ এর রিপ্লেস হিসেবে ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের এআইএম-২৬০ (বিভিআরএএএম) সুপার এডভান্স এয়ার টু এয়ার মিসাইল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। আবার বিশেষ করে ২০১৯ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি এফ-১৬ ভারতের একটি মিগ-২১ এআইএম-১২০সি ক্যাটাগরির মিসাইল ফায়ার করে শুট ডাউন করে। তাছাড়া বর্তমানে সার্ভিসে থাকা অন্য কোন দেশের এয়ার টু এয়ার এডভান্স মিসাইলের উল্লেখ যোগ্য কোন এয়ার কমব্যাট রেকর্ড বা কিলিং রেকর্ড খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

এদিকে চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত ডিফেন্স রিলেটেড মিডিয়াগুলো প্রচার করে যে, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি নতুন প্রজন্মের পিএল-২১ এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইলের রেঞ্জ ৪৮০ কিলোমিটার থেকে অনেকটাই বেশি। অথচ চীনের কোন যুদ্ধিমান কিংবা বোম্বারের নিজস্ব রাডার সিস্টেমের রেঞ্জ ১৮০-২০০ কিলোমিটারের অধিক নয় এবং এমনকি তাদের বহরে থাকা অধিকাংশ অত্যাধুনিক এয়ারব্রোন আর্লী ওয়ার্নিং এণ্ড কট্রোল (এইডাব্লিউসি) বিমানের রাডার ডিডেকশন ক্যাপাসিটি সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে কিনা সন্দেহ। তাহলে এখানে মূল প্রশ্ন হলো যে, ৪০০ বা ৫০০ কিলোমিটারের অধিক দুরুত্বে থাকা শত্রু পক্ষের কোন যুদ্ধবিমান কিংবা এরিয়াল সিস্টেমকে রাডারে লক না করেই কিংবা সেখানে কোন অদৌ কোন অবজেক্ট আছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই পিএল-২১ এয়ার টু এয়ার মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করার বিষয়টি কিন্তু বেশ প্রশ্নসাপেক্ষ এবং বিতর্কিত একটি ইস্যু হয়ে থেকে যাচ্ছে। আর তাই চীনের এই জাতীয় অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত আসলে অনেকটাই প্রপাগাণ্ডা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অস্ত্র ব্যাবসা বৃদ্ধি করার অপকৌশল ছাড়া আর যে কিছুই নয় তা কিন্তু অনেকটাই নিশ্চিত বলা চলে।

তাছাড়া হাইপারসনিক গতির মিসাইলের পক্ষে আকাশে মুভেবল অবজেক্ট সরাসরি ধ্বংস করাটা বেশ জটিল একটি কাজ এবং মিসাইলের রেঞ্জ যত বেশি হবে তার আকার এবং ফুয়েল ক্যাপাসিটি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তাই ৫০০ কিলোমিটারের অধিক রেঞ্জের একটি এয়ার টু এয়ার মিসাইলের ফুয়েল ক্যাপাসিটি এবং ওয়ারহেডের বিবেচনায় ওজন ১.৫ টন থেকে ২.০০ টন পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত এবং ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় এটা কতটুকু যৌক্তিক তা এভিয়েশন এণ্ড মিসাইল প্রযুক্তিবিদেরা ভালো বলতে পারবেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.