--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তির পেছনে ব্যয় বাড়ছে, আগ্রাসী ভারত-চীন (২য় পর্ব)

0

আপাতত দৃষ্টিতে চীনের সামরিক আকার, সক্ষমতা ও বার্ষিক বাজেট ভারত অপেক্ষা কয়েক গুণ বেশি হলেও ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক ও ভৌগলিক অবস্থান জনিত কারণে চীনের প্রধান শত্রু কিংবা প্রতিদ্বন্দী কিন্তু ভারত নয়। আসলে দীর্ঘ মেয়াদে ভারত সীমান্ত জুড়ে সামরিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে চীন কার্যত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বকে তার সর্বোচ্চ সামরিক সক্ষমতা ও যোগ্যতার জানান দিচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে কতটা যুদ্ধবাজ এবং কূটকৌশলী তা কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মান কিংবা জাপান ঠিকই টের পেয়ে গেছে। তাই চীন কিন্তু অনেকটাই নিজের অজান্তেই সমগ্র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়া এবং আরো দুই একটি দেশ ব্যাতিত প্রায় সকল দেশের সাথে দীর্ঘ মেয়াদে সাগরের মালিকানা কিংবা সীমান্ত বি্রোধে জড়িয়ে অত্র অঞ্চলে নিজেকে অনেকটাই বন্ধুহীন করে ফেলেছে।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় সামরিক উত্তেজনায় বিশ্বের তিনটি দেশ কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। আর প্রথমত এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে সুবিধা আদায়ের সবচেয়ে উপরের তালিকায়। কারণ চীনের সাথে ভারতের দীর্ঘ মেয়াদে সামরিক উত্তেজনার পেক্ষাপটে ভারতের সাথে চুক্তির আলোকে সমগ্র ভারত মহাসাগর এবং ভারতের মূল ভূখণ্ডে বিনা বাধায় বিচরণ এবং তাদের বিমান বাহিনীর সুপার বোম্বারগুলো অবাধে ভারতের ভূখন্ড ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে গেছে এখনই। তাছাড়া ভারত সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয় ও সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন করে রেখেছে। আবার ভবিষ্যতে ভারতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভারতের পক্ষ অবলম্বন করে যুদ্ধে ময়দানে হাজির হয়ে যাওয়ার ৫০% সম্ভবনা থাকলেও চীনের বর্তমানের কথিত কৌশলগত বন্ধু রাশিয়া মৌখিকভাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা ছাড়া বাস্তবে য কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চীনের পক্ষ অবলম্বন করা থেকে নিশ্চিতভাবেই বিরত থাকলে তাতে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। যা কিনা ভবিষ্যতে চীনের জন্য মোটেও ভালো কিছু হবে বলে আসা করা যায় না।

চীন-ভারত সামরিক উত্তেজনায় আশ্চর্যজনক হলেও অন্যতম সুবিধাভোগী দেশ হচ্ছে ভারত নিজেই। কারণ চীনের সাথে সামরিক দ্বন্দ ও উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও রাশিয়ার সাথে গভীর সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। আমেরিকা ও ইসরাইল থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের পাশাপাশি ভারত কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে মহাকাশে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও গোয়েন্দা উপগ্রহ ব্যবহার, নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের অনুমতি এবং সুযোগ গত ২০২০ সালের দিকেই আদায় করে নিয়েছে। এদিকে আবার বর্তমানে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির প্রধান বাজার হচ্ছে ভারত। ২০২০ সালে রাশিয়া খুব সম্ভবত আনুমানিক মোট ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির চুক্তি সম্পন্ন করেছে ভারতের সাথে। তাছাড়া ৫.৩২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৫ রেজিমেন্ট রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে ২০১৮ সাল। যা ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রথম ব্যাচে সরবরাহ পেতে যাচ্ছে ভারত। তাই এহেন বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সুবিধা বিনষ্ট করে চীনের পক্ষ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করবে বলে মনে হয় না।

আবার বিগত দুই দশক ধরে বিশ্বের উদীয়মান সামরিক পরাশক্তি রেড জায়ান্ট চীনের দক্ষিণ চীন সাগরের শতভাগ মালিকানা দাবি নিয়ে বিরোধ এবং পূর্ব চীন সাগরের একাধিক দ্বীপ নিয়ে সাগর সংলগ্ন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপানসহ আটটি দেশের সাথে দীর্ঘ মেয়াদে চরম উত্তেজনা ও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি। তাছাড়া বরাবরের মতো বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার ও কূটকৌশলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু এই অস্থিতিশীল সামরিক উত্তেজনার সুযোগে বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া এবং চীনকে সামরিক ও কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করার জন্য গোটা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ইতোমধ্যেই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, সুপার বোম্বার এবং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারসহ ব্যাপক আকারের সামরিক সমাবেশ নিজস্ব ছক মোতাবেক অনেক আগেই সুসম্পন্ন করে রেখেছে। তাই চীন ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গোটা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে একেবারে অরক্ষিত রেখে শতভাগ সামরিক সক্ষমতা তো দূরের কথা তাদের ৩৫-৪০% পর্যন্ত সামরিক সক্ষমতা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের কোন সুযোগ পাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.