--- বিজ্ঞাপন ---

তুরস্কে আকিঞ্চি ড্রোনের সফল পরীক্ষা

সামরিক শক্তিতে আরো এগিয়ে গেল তুর্কিরা

0

তুরস্কের ডেইলী সাবাহ নিউজের তথ্য মতে, গত ১২ই এপ্রিল ২০২১ সোমবার তুর্কী ড্রোন (ইউএভি) ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বায়কার মাকিনার তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি ড্রোনের তৃতীয় প্রটোটাইপ কপি সর্বশেষ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। মুলত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রযুক্তিবিদ ও তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মেয়ে জামাই সেলচুক বায়ারাকতার তুর্কি দৈনিক ডেইলি সাবাহকে জানান যে, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি আকিঞ্চি ড্রোনটি মধ্যম উচ্চতার শনাক্তকরণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং এটি এখন বায়কার মাকিনার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে সম্পূর্ণভাবে গণ-উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। তাছাড়া চলতি ২০২১ সালের শেষের দিকে তুর্কী সামরিক বাহিনীর হাতে আকিঞ্জি হেভী কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) সীমিত পরিসরে তুলে দেয়া শুরু হবে।

আসলে সাম্প্রতিক সময়ে নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন (ইউএভি) ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে সফল ব্যবহারের দিক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট এবং ইসরাইলের পর তুরস্ক বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বষ করে সিরিয়া, লিবিয়া ও আজাররাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে বিতর্কিত ভূখণ্ড নাগরনো-কারাবাখ যুদ্ধে তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে রেখেছে। তাছাড়া তুরস্ক এবং ইরাকের ভিতর কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) দমনে অত্যন্ত সফলভাবে ড্রোন দিয়ে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করে যাচ্ছে তুর্কী সামরিক বাহিনী।

তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি হচ্ছে মুলত হাই অল্টিটিউট এণ্ড লং ইন্ডিউরেন্স কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি)। যেটিকে মুলত আকাশের অত্যন্ত উচ্চতায় উড্ডয়নের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আকাশে তার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আকৃতির কমব্যাট ড্রোন। যা কিনা এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল বহন ও হামলার করতে সক্ষম এবং এমনকি এটি থেকে স্বল্প সক্ষমতা ও ওজনের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রথম পরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন সম্পন্ন করে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের দৈর্ঘ্য ১২.৫ মিটার, দুই ডানার মাঝের দূরত্ব ২০ মিটার এবং উচ্চতা ৪.১০ মিটা্র। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৫,৫০০ কেজি। এই ড্রোনে দুটি ইউক্রেনের ইভশেঙ্কো প্রগ্রেসের তৈরি ৭৫০ হর্স পাওয়ারের এআই-৪৫০টি টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা ড্রোনটিকে ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৯৫ নটিক্যাল মাইল বা ৩৬১.১৪ কিলোমিটার বেগে উড়ার ব্যাপক সক্ষমতা প্রদান করে। এটি একবার জ্বালানী নিয়ে আকাশে একটানা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। আর বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তির বিচারে আকিঞ্চির ৩৬১.১৪ কিলোমিটার গতিকে অনেকটাই বেশি গতি সম্পন্ন এরিয়াল সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনে নিজস্ব দেশীয় প্রযুক্তির (এইএসএ) রাডার, ইলেকট্রনিক্স সাপোর্ট পড এবং সাইট এণ্ড স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম, এসানসাল কমন এপারচার টার্গেটিং সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের ৬টি হার্ড পয়েন্টে ১,৩৫০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, গাইডেড এণ্ড আনগাইডেড বম্বস বহন করতে সক্ষম। তাছাড়া ক্রুজ মিসাইল বহন করার পাশাপাশি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে আকাশেই শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করার সক্ষমতা তুরস্কের এই কমব্যাট ড্রোনটিকে বিশ্বের বুকে একটি শ্রেষ্ঠ কমব্যাট ড্রোনের স্থানে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এই ড্রোনটিতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এমএএম-এল, এমএএম-সি, জাভেলিন, এল-ইউএমটিএএস, বোজক, এমকে-৮১, এমকে-৮২, এমকে-৮৩, উইংড গাইডেন্স কিট (ইউপিএস) এমকে-৮২ ডিভাইসের পাশাপাশি গুলুকান, বোজডোয়ান এবং এসওএম-এ স্ট্যাণ্ড অ ক্রুজ মিসাইল (এয়ার লাউঞ্চ ক্রুজ মিসাইল) দ্বারা সজ্জিত করা হবে। তাছাড়া রকেটসানের তৈরি (এল-ইউএমটিএএস) এন্টি ট্যাংক মিসাইল এটিতে ইনস্টল করা হবে। তুরস্কের এসওএম এয়ার লাউঞ্চ ক্রুজ মিসাইল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণ করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হলেও তুরস্ক এখনো পর্যন্ত নিজস্বভাবে নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স টেকনোলজি অর্জন করতে সক্ষম হয় নি।

এই কমব্যাট ড্রোননটিকে পূর্বের টিবি-২ ড্রোনের মতোই এডভান্স অটোনোমাস কন্ট্রোলিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি রোবটের মতো নিজে নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ এবং ল্যাণ্ডিং করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া ড্রোনটির রানওয়ে বা বেইস নির্দিষ্ট করা থাকে এবং আগে থেকেই এটির ভৌগলিক অবস্থান ড্রোনটির সফটওয়ার প্রোগ্রামে ইনস্টল থাকে৷ তাই আপদকালীন মুহুর্তে কমাণ্ড সেন্টারের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে ড্রোনটি তার স্যাটালাইট নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ও নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নির্ধারিত রানওয়ে বা ঘাঁটিতে ফিরে আসার উপযোগী করে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের উৎপাদন খরচ বা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কত হতে পারে তার সঠিক কোন তথ্য প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ না করলেও মনে করা হয় এর আনুমানিক উৎপাদন ব্যয় খুব সম্ভবত ২০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। তবে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনটি ২০২১ সালের শেষের দিকে সার্ভিসে আসলে এটিকে একটি সিঙ্গেল ইঞ্জিন এডভান্স জেট ফাইটারের সমপর্যায়ের এরিয়াল সিস্টেমের মতো কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.