--- বিজ্ঞাপন ---

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের অবশেষে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে

0

করোনাকালে আমেরিকার অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। তার উপর বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দেশে থাকা মার্কিন সৈন্যদের জন্য প্রচুর ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে রয়েছে বিপুল আমেরিকান সৈন্য। তালেবান মোকাবেলায় এ সৈন্য অনেক বছর ধরে রয়ে গেছে। তাদের পেছনে খরচ হচ্ছে বিপুল ডলার। বিভিন্ন সময় সৈন্য ফেরত গেলেও চুড়ান্তভাবে সব সৈন্য তুলে নিতে আমেরিকান প্রশাসনে বরাবরই মতদ্বৈততা ছিল। এবার বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার পর আফগানিস্তান থেকে সব সেনা দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আফগান তালেবানের সঙ্গে আমেরিকা একটি চুক্তি সই করে যার আওতায় আফগানিস্তান থেকে ১২ হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার কথা। এর বিনিময়ে তালেবান যোদ্ধারা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বন্ধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। কিন্ত তার সময়ে এটি সম্ভব হয়নি। এ সময় বলা হয়েছিল তালেবান তাদের কথা রাখতে পারছে না। তাই সৈন্য নিয়ে যাওয়া পিছিয়ে যায়। বাইডেন আসার পর বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা হলে সেপ্টেম্বর থেকে সেনাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসন একমত হয়।

আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যম সূত্র জানায়, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার এই ঘোষণার পর এবার ন্যাটো জোটও একই মত দিয়েছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতি রেখে তারাও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জোটের মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ জানান, ন্যাটো তাদের ৭ হাজার সেনার সবাইকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ১ মে থেকে ‘রেসুলুট সাপোর্ট’ সেনাদের প্রত্যাহার শুরু হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগন আক্রমণের দুই দশক পরও সৈন্যদের সেখানে থাকার কোনও যৌক্তিকতা নেই। হোয়াইট হাউস ভাষণের যে উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে সেখানে বাইডেন বলছেন, “আমরা আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম কারণ ২০ বছর আগে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা কোনও যুক্তি হতে পারে না যে এই ২০২১ সালেও সেখানে কেন থাকব। ”

আরও বলেন, তিনি হচ্ছেন চতুর্থ প্রেসিডেন্ট যিনি আফগানিস্তানে আমেরিকান সৈন্যের উপস্থিতি তদারকি করছেন এবং সংকল্প প্রকাশ করেন, এই দায়িত্ব আর পঞ্চম প্রেসিডেন্টের কাছে চাপিয়ে দেবেন না। বাইডেন বলেন, “আমাদের মিত্র এবং সহযোগী, সামরিক নেতা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কংগ্রেস ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিসের সঙ্গে নিবিড় শলাপরামর্শের পরে এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, এখনই সময় আমেরিকার এই দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান ঘটানোর।” তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে আফগানিস্তানে কাজ করে যাবে এবং কাবুল সরকারকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।

বর্তমানে আফগানিস্তানে ১২ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। ২০০১ সালে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ। এই যুদ্ধে ২ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েক হাজার।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.