--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার অত্যাধুনিক জেট ইঞ্জিন তৈরির পেছনে অবদান রয়েছে এক বাংলাদেশীর

0

১৯৫২ সালে কোল্ড ওয়ার চলাকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রথম সারির জেট ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন প্রাট এণ্ড হুইটনি একটি আজব বিজ্ঞাপন প্রচার করে। সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় যে, মৌমাছির মতো দেখতে একটি জেট ইঞ্জিন আকাশে উড়ছে। আর এই আজব বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি জেট ইঞ্জিন ডিজাইনের স্বপ্ন দেখে, যা হবে অতি হালকা, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং অত্যন্ত মজবুত। যদিও তৎকালীন সময়ে অনেকেই এটিকে মাত্র একটি অবাস্তব কল্পনাই বলে মনে করেছিলেন।

তবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে এসে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিতে শুরু করে। আর সেই দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আমাদের বাংলাদেশেরই এক কীর্তি সন্তান ও সফল বিজ্ঞানী আব্দুস সাত্তার খান। তারই হাতে উদ্ভাবিত নিকেলের সঙ্কর ধাতু ব্যবহার করেই মার্কিন জেট ফাইটারের ইঞ্জিন এবং হেভি রকেট ইঞ্জিন পরিনত হয় আরো জ্বালানী সাশ্রয়ী, মজবুত এবং হালকা।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর তার গবেষণার মুল বিষয়বস্তু ছিল অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সঙ্কর ধাতু নিয়ে। তিনি ছিলেন মুলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং বিজ্ঞানী। ১৯৭৮ সালে আব্দুস সাত্তার খান সরাসরি যুক্ত হন মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১ ও এফ-২ যুদ্ধবিমানের জন্য নিকেল ও তামার সঙ্কর ধাতু নিয়ে গবেষণায়। এই সময়ে তাকে নাসার পরিবর্তে অর্থায়নে এগিয়ে আসে জেট ইঞ্জিন নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান প্রাট এণ্ড হুইটনি। আর এই নতুন প্রজেক্টের প্রধান ম্যাটারিয়াল ইঞ্জিনিয়ার হন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় নিকেল-তামার সঙ্কর ধাতুর তৈরি মার্কিন এফ-১৬ এবং এফ-১৫ জেট ফাইটারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, হালকা এবং মজবুত জেট ইঞ্জিন। বর্তমানে প্রাট এণ্ড হুইটনির তৈরি এফ-১০০-পিডাব্লিউ-২২৯ আফটার বার্নিং টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন বিশ্বের জেট ফাইটার ইঞ্জিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলাই বাহুল্য যে, আশির দশকে সার্ভিসে এসেও মার্কিন এফ-১৬ এবং এফ-১৫ জেট ফাইটার এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

আসলে আব্দুস সাত্তার খান ১৯৪০ বা ১৯৪১ সালে ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেন এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কেমেস্ট্রির উপর অনার্স এবং ১৯৬৩ সালে মাষ্টার্স ড্রিগ্রী অর্জন করেন। তিনি লেকচারার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ১৯৬৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে এসে এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

তিনি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন এবং তারপর তিনি ম্যাটারিয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর গবেষনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিনি প্রায় ৪০টির বেশি বিভিন্ন ধরনের এ্যালোয় আবিষ্কার করেন। যা মূলত খুবই তাপ উৎপন্নকারী জেট ফাইটার ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয় এবং এটি স্টিল কে করে তুলে মরিচারোধী। তাছাড়া তার আবিষ্কৃত সংকর ধাতু জেট ইঞ্জিন এবং রকেট ইঞ্জিনের পাশাপাশি নাসার স্পেস শাটলে, সুইজারল্যান্ডের রেল ইঞ্জিনে,ইন্ডাস্ট্রিয়াল টারবাইন ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। তার অসাধারন কৃতিত্বের জন্য তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা হতে পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.