--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকা কেন এক নাম্বার সুপার পাওয়ার

0

বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই ১৯০৩ সালে উড়োজাহাজ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় এক শতাব্দী ব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই প্রায় ৩ লক্ষাধিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, সামরিক ও বেসামরিক পরিবহণ বিমান এবং প্রশিক্ষণ বিমান, ড্রোন বা এরিয়াল সিস্টেম উৎপাদন করে এক বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করে রেখেছে। অর্থ্যাৎ বিগত এক শতাব্দীতে সারা বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত এভিয়েশন এন্ড এরিয়াল সিস্টেমের ৬৫% একাই দখল করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এমনকি বিংশ শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মিত্র বাহিনী এবং অক্ষশক্তি মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ যুদ্ধবিমান এবং বোম্বার তৈরি করেছিল। যার মধ্যে ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই প্রায় ২ লক্ষাধিক যুদ্ধবিমান, বোম্বার, সামরিক পরিবহণ বিমান তৈরি করে ম্যাসিভ এভিয়েশন প্রডাকশনের এক বিরল দৃষ্টান্ত বা রেকর্ড তৈরি করে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। আর এই বিরল রেকর্ডের ধারে কাছে আজো দ্বিতীয় কোন দেশ আসতে পারেনি। অবশ্য শীতল যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার চলাকালে সভিয়েত ইউনিয়ন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রায় এক লক্ষাধিকের অধিক জেট ফাইটার, বোম্বার, হেলিকপ্টার, সামরিক ও বেসামরিক পরিবহণ বিমান ও হেলিকপ্টার তৈরি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজের স্থান করে নেয় এবং তৎকালীন সময়ে মার্কিন শিবিরের ওপর দীর্ঘ মেয়াদী এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

বর্তমানে মার্কিন বিমান বাহিনী একাই ৫৯৬০টি জেট ফাইটার, বোম্বার এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে এবং মার্কিন নৌ বাহিনী ৩৭৮০টি এর কাছাকাছি ক্যারিয়ার বেসড জেট ফাইটার, বোম্বার এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। তাছাড়া মার্কিন সেনা এবং মেরিন কর্পোস প্রায় ১৬০০ এর কাছাকাছি এভিয়েশন সিস্টেম কাজে লাগায়। আর সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ৮ শতাধিক মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সার্বক্ষণিক মোতায়েন এবং সক্রিয় যুদ্ধে বিরামহীন ভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে মার্কিন ব্যাতিত সর্বোচ্চ এরিয়াল সিস্টেম ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে রাশিয়া প্রায় ৩,৮০০ এর অধিক এবং রেড জায়ান্ট চীন ৩,৩০০ এর কাছাকাছি এরিয়াল সিস্টেম সার্ভিসে এনেছে। তাছাড়া আমাদের পাশ্ববর্তী ভারতের বিমান বাহিনীতে ২,২০০ এর কাছাকাছি যুদ্ধবিমান, বোম্বার, হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, এবং ড্রোন বা এরিয়াল সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে। তবে মার্কিন ব্যাতিত এসব দেশের ব্যবহৃত এরিয়াল সিস্টেমের ৪০% পর্যন্ত অতি পুরনো এবং ব্যবহার অধিক মাত্রায় ঝুঁকীপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশই কিন্তু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার এভিয়েশন টেকনোলজি এবং সিস্টেমের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। তবে এভিয়েশন টেকনোলজিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া বাদে একটি সফল দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। ফ্রান্স তার এভিয়েশন প্রযুক্তির শতভাগ নিজস্বভাবেই তৈরি করতে সক্ষম। প্রযুক্তি আর বিশ্বে সর্বোচ্চ ব্যায়িত মাল্টি নেশন এভিয়েশন প্রজেক্ট হিসেবে মার্কিন লকহীড কর্পোরেশনের ১.৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারের এফ-৩৫ লাইটনিং স্টিলথ জেট ফাইটার সার্ভিসে আসা শুরু করেছে এবং এ প্রজেক্টের মূল সুবিধাভোগী কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। অর্থ্যাৎ এ প্রজেক্ট থেকে আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ৩ হাজারের কাছাকাছি এফ-৩৫ সুপার স্টিলথ জেট ফাইটার পর্যায়ক্রমে মার্কিন বিমান, নৌ এবং মেরিন কর্পোসে অন্তভুক্ত করা হবে। অথচ রাশিয়া প্রায় এক দশক আগেই তাঁদের ডেডিকেটেড এন্ড স্টিলথ টেকনোলজি বেসড এফজিএফএ প্রজেক্টের আওতায় (পিএকেএফএ টি-৫০) বা এসিউ-৫৭ স্টিলথ জেট ফাইটার নিয়ে কাজ শুরু করলেও পর্যাপ্ত ফাণ্ডের অভাবে আজ অবধি ম্যাসিভ প্রডাশন লাইন শুরু করতে পারেনি। আবার সাম্প্রতিক সময়ে চীন এভিয়েশন টেকনোলজিতে ব্যাপক গবেষণা এবং সাফল্য অর্জন করেছে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে চীন এখনো পর্যন্ত বিশ্ব মানের ও ডেডিকেটেড জেট ইঞ্জিন তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মনে হয় না।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.