--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার মাদার অব অল বোম্বস বিশ্বের ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী অপারমাণবিক বোমা

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

এতদিন পারমানবিক বোমার কথা শুনে আসছিলাম। এখন নাকি অপারমানবিক বোমায় বিশ্ব কাপাচ্ছে। বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) বা জিইউবি-৪৩/বি হাই এক্সপ্লুসিভ বোম্বস হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী অপারমাণবিক বোমা। যাকে মার্কিন সমরবিদেরা ‘মাদার অব অল বোম্বস’ নামে প্রচার করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কাছে থাকা জিইউবি-৪৩/বি বা মোয়াবকে পৃথিবীর ভূ- ভাগে ১১ টন টিএনটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পারমানবিক বোমা থেকে ‘মাদার অব অল বোম্বস’ নিয়ে বিশ্বে ছড়ি ঘুরাচ্ছে আমেরিকা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্র জানায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ববিখ্যাত ইহুদি বিজ্ঞানী, জার্মান থেকে বিতাড়িত আলবার্ট আইনস্টাইন ২ আগস্ট ১৯৩৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টকে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন পরমাণু বোমা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে। রুজভেল্ট আইনস্টাইনের সুপারিশে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেন, যা না হলে পরমাণু বোমা তৈরি হতো বলে মনে হয় না। পরমাণু বোমা তৈরির কাজে যারা অংশ নেন তারা বেশির ভাগই ছিলেন ইহুদি বিজ্ঞানী। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মারা যান ১২ এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে। পরমাণু বোমা তৈরি তখন শেষ হওয়ার পথে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান প্রেসিডেন্ট হন। তিনি সদ্য তৈরি পরমাণু বোমা নিক্ষেপের হুকুম দেন যুদ্ধরত জাপানের ওপর। ৬ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে প্রথমে জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা হয় পারমাণবিক বোমা। এর তিন দিন পর ফেলা হয় জাপানের নাগাসাকি শহরে। জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করে। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো পারমানবিক বোমা বানানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন বাড়ছে পারমানবিক বোমার শক্তিধর রাষ্ট্রের সংখ্যা। পারমানবিক বোমার চেয়ে হালে বেশি কথা হচ্ছে অপারমানবিক বোমা নিয়ে। এটাতে কোন পরমানু উপাদান নেই। ফলে এটি ব্যবহারের অনুমতিও সহজে মিলে। এ বোমা সহজে বহনযোগ্য বলে ব্যবহারও হচ্ছে।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি ২০০২ সালে ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি “মাদার অব অল বোম্বস” এর ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং ম্যাকলেস্টার আর্মি এমুনিউশন প্লান্টে অত্যন্ত গোপনে ২০০৩ সাল থেকে এর উতপাদন শুরু করে। খুব সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত মাত্র ৩০টি হাই এক্সপ্লুসিভ নন-নিউক্লিয়ার (মোয়াব) তৈরি সম্পন্ন করেছে বলে মনে করা হয়। যদিও অবশ্য বিশ্বের আরেক সুপার পাওয়ার রাশিয়া তাদের কাছে থাকা ১৫ টন ওজনের বিশ্বের সর্ব বৃহৎ অপারমানবিক বোমা থাকার দাবি করে থাকে। কিন্তু রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তাদের উৎপাদিত “ফাদার অফ অল বোম্বস” খ্যাত অস্ত্রটিকে প্রকাশে আনতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না।

৯,৮০০ কেজি বা ২১,৬০০ পাউন্ড ওজনের ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি কে সি-১৩০ হারকিউলিকস/এমসি-১৩০এইচ সামরিক পরিবহণ বিমান থেকে নিক্ষেপ করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। মোয়াবের দৈর্ঘ্য ৯.৮৮৫ মিটার এবং ব্যাস ১০৩ সেন্টিমিটার। এছাড়া, মোয়াব এর ভয়ঙ্কর ১১ টন টিএনটি বিস্ফোরণ ক্ষমতা থাকায় বিশ্বের যে কোন অপারমানবিক বোমা এর কাছে একেবারেই তুচ্ছ হয়ে যাবে। প্রতি ইউনিট মোয়াব এর উৎপাদন খরচ প্রায় ২.২৫ মিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি।

অত্যন্ত ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি “মাদার অব অল বোম্বস” বিস্ফোরণ হওয়ার মুহুর্তের মধ্যেই প্রবল ভূমিকম্পের মতো একটা শক ওয়েভ সৃষ্টি করে। মোয়াব এর বিস্ফোরণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি মাটির নিচে থাকা ৩০০ ফুটের মধ্যে যে কোন ব্যাংকার বা স্থাপনা নিমিশেই ধংস করতে সক্ষম । তাছাড়া মোয়াব এর আঘাতে এক মাইল ব্যাসের মধ্যে থাকা যে কোন ধরণের বাড়ি, স্থাপনা, যানবাহণ ধ্বংস করতে পারে। আবার মোয়াব এর শক ওয়েভের আঘাতে ১.৭ মাইল ব্যাসের মধ্যে থাকা মানুষ বা অন্য প্রাণির নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে এবং দুই মাইল পর্যন্ত এলাকার মধ্যে থাকা মানুষের শ্রবণশক্তি মারাত্বক ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স এয়ার ব্লাস্ট (মোয়াব) জিইউবি-৪৩/বি “মাদার অব অল বোম্বস” এর একাধিক গোপন পরীক্ষা সম্পন্ন করলেও তা বাস্তব কোন যুদ্ধে প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসায় তাদের সামরিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ১৩ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মানব যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গির আস্তানায় সরাসরি মোয়াব নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজের সামরিক সক্ষমতা বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরে।

মোয়াব আক্রমনে তাৎক্ষনিক ভাবে ৯৪ জঙ্গিসহ শতাধিক মানুষ মারা যায়। তাছাড়া, মোয়াব আক্রমন যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানে জঙ্গি দমনে ব্যবহার করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। আসলে মোয়াব প্রকাশ্যে এনে মার্কিন প্রশাসন কার্যত রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছে যে, ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মার্কিন বাহিনী মোয়াব বা এর চেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র প্রয়োগে কোন রকম দ্বিধা করবেনা। আর এভাবে সামরিক সক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম সারির দেশগুলো বিশ্বের বুকে শান্তি স্থাপন করতে না পারলেও ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র তৈরি করে মানব জাতিকে ধ্বংস এবং মানবতাকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করার সব কৌশল আয়ত্ত করে রেখেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.