--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তি বাড়াতে মরিয়া ভারত

0

 

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

বিশ্বে সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে দাপটের সাথে বিচরনের জন্য ভারত নিজেদের সামরিক অস্ত্রের যোগান বাড়িয়ে চলেছে। মূলত পাকিস্তান ও চীনের আধিপত্য যেন ভারতকে ছাড়িয়ে না যায় সে চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছে। নানামূখি সমস্যার পরও ভারত সামরিকখাতে বিপুল বাজেট রেখেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করছে নানা অত্যাধুনিক অস্ত্র। রাশিয়া, ফ্রান্স, আমেরিকার দিকে নজর সবচেয়ে বেশি। এমনকি ভারি অস্ত্র বানানোর জন্য ভারত তৈরি করছে সামরিক কারখানা। ভারতের অনেক পুরানো সামগ্রির মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। এসব সামগ্রি বাতিল হলে নতুন প্রযুক্তির সব অস্ত্রই সংযোজন করা হবে। এ লক্ষে এগুচ্ছে ভারত।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন পাকিস্তানের সাথে তীব্র মাত্রায় ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকি এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারতের বর্তমান মোদি সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফিক্সড এয়ার কমব্যাট এরিয়্যাল ক্যাপাবিলিটি বৃদ্ধি করার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে । তাদের কমব্যাট এয়ার ফ্লীটের পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কোয়াডোনের ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রথম সারির জেট ফাইটার ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশনের সাথে যৌথভাবে মেইক ইন ইন্ডিয়ার নীতিতে নিজ দেশের মাটিতে জেট ফাইটার উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ২০.০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের (এমএমআরসিএ) ২.০ প্রজেক্টের আওতায় ১১৪টি এডভান্স চতুর্থ প্রজন্মের জেট ফাইটার সংগ্রহে চেষ্টা করে গেলেও বিষয়টি এখনো পুরো মাত্রায় প্রক্রিয়াধীন এবং আলোচনার স্তরেই রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। তবে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩৬টি সুপার এডভান্স এবং চতুর্থ প্রজন্মের রাফায়েল ক্রয়ের চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যেই ২৪টি রাফায়েল এডভান্স জেট ফাইটার ভারতের মাটিতে এসে পৌছেছে এবং অবশিষ্ট ১২টি চলতি ২০২১ সালের মে এবং জুন মাসের মধ্যে চলে আসবে।

এদিকে ভারত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২২টি সুপার এডভান্স এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি এট্যাক হেলিকপ্টার সংগ্রহ করেছে। অবশ্য অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনী এ জাতীয় ৪৮-৬০টি পর্যন্ত এডভান্স এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি এট্যাক হেলিকপ্টার সার্ভিসে রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। যদিও আপাতত ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য মোট ২২টি এট্যাক হেলিকপ্টারের পাশাপাশি সেনা বাহিনীর জন্য ৬টি এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি এট্যাক হেলিকপ্টার অর্ডার দেওয়া রয়েছে। আবার ৩.০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০টি কমব্যাট এমকিউ-৯বি গার্ডিয়ান ড্রোন (ইউএভি) ক্রয়ের বিষয়টি এখনো চলমান রয়েছে।

ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং কোস্টাল গার্ড মিলিয়ে মোট প্রায় ২,৪৩০টি জেট ফাইটার, বোম্বার, সামরিক পরিবহণ বিমান ও হেলিকপ্টার, মেরিটাইম পেট্রোল ক্রাফট, কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) পূর্ণ মাত্রায় সার্ভিসে রয়েছে। যদিও অবশ্য তার মধ্যে আনুমানিক ৭০০ টির কাছাকাছি ফাইটার/ইন্টারসেপ্টর ও ৮০০ অধিক গ্রাউন্ড এট্যাক বা বোম্বারসহ বিশ্ব মানের আরোটি সামরিক পরিবহন বিমান সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি ২৬০টি সামরিক পরিবহণ হেলিকপ্টার এবং আনুমানিক ৬০টি কমব্যাট হেলিকপ্টার ভারতের আকাশ সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে সুবিশাল ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতি এবং গোপন পরমাণু সাবমেরিন ও ড্রোনের ব্যাপক উপস্থিতির পেক্ষাপটে ভারত সরকার খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আর সুবিশাল ভারত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে মার্কিন বোয়িং ৮টি পি-৮আই লং রেঞ্জের সাবমেরিন হান্টার ব্যবহার করে যাচ্ছে এবং নতুন করে আরো ৪টি অর্ডার দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সামরতিক সময়ে মার্কিন বাইডেন প্রশাসন ভারতের কাছে নতুন করে ৬টি পি-৮আই নেপচুন এন্টিশীপ এণ্ড সাবমেরিন হান্টার কিলার বিমান বিক্রির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে রেখেছে বর্তমান মার্কিন বাইডেন প্রশাসন। আবার আকাশ পথে এরিয়্যাল রিফুয়েলিং এর জন্য ৬টি ইলুসিন ইএল-৮৭ হেভী ট্যাংকার, ৫টি উন্নত প্রযুক্তির এডাব্লিউএসিএস এবং ৪টি ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার এরিয়াল সিস্টেম অপারেট করে ভারতের বিমান বাহিনী।

তাছাড়া, ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ৬৮টি মিগ-২৯, ৫৭টি মিগ-২৭, ৪২টি মিরেজ-২০০০, ২৩১টি মিগ-২১, ৯১টির মতো জাগুয়ার ফাস্ট এটাক জেট ফাইটার সার্ভিসে রয়েছে। অন্যদিকে ভারত তার একমাত্র যুদ্ধ বিমানবাহী ক্যারিয়ারে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার ৩৬টি মিগ-২৯কে এবং ৮টি মিগ-২৯কেইউবি এডভান্স জেট ফাইটার রয়েছে। তার পাশাপাশি ১৪টি ক্যামভ কে-৩১ হেলিকপ্টার অপারেট করে যাচ্ছে এবং তাদের বহরে থাকা পুরোনো সকল সী হ্যারিয়ারকে সম্পূর্ণভাবে ইতোমধ্যেই অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের জন্য ৫৭টি ক্যারিয়ার ব্রোন মার্কিন বোয়িং এফ/এ-১৮ সুপার হরনেট কিংবা ফ্রান্সের রাফাল এম সিরিজের ক্যারিয়ার বেসড জেট ফাইটার সার্ভিসে আসার সমুহ সম্ভবনা রয়েছে।

এ মুহুর্তে ভারতের সামরিক বাহিনীর কাছে ২৪০টি এর কাছাকাছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন অপারেট করে। যার মধ্যে অজানা সংখ্যক ইসরাইলের হারোপ সুসাইডাল ড্রোনও রয়েছে ভারতের সামরিক বাহিনীর হাতে।

তবে প্রকাশ থাকে যে, আগামী ২০২৫-২৮ সালের দিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বহরে থাকা মিগ-২১, মিগ-২৩, মিগ-২৭ এবং মিগ-২৯ সিরিজের সকল বিমান এবং তার পাশাপাশি জাগুয়ার এবং মিরেজ-২০০০ সহ তিন দশকের অতি পুরনো প্রায় ছয় শতাধিক বিমানগুলোকে এক রকম বাধ্যতামুলকভাবেই অবসরে পাঠাতে হবে। সেক্ষেত্রে নতুন বিমান ধারাবাহিকভাবে এবং পরিকল্পনা মাফিক অন্তভুক্ত করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার কম্ব্যাট ফিক্সড ইউংস এণ্ড এরিয়্যাল ক্যাপাবিলিটি ৪০% হ্রাস পেতে পারে এবং এয়ার স্কোয়াডন অর্ধেকে নেমে আসার বড় ধরণের সমুহ সম্ভবনা রয়েছে।

যেখানে কিনা চীনের বিমান বাহিনীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিক জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, ড্রোন, বোম্বার সামরিক পরিবহণ বিমান পর্যায়ক্রমে অন্তভূক্ত করে গেলেও ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এ মুহুর্তে ভারতের আকাশ সক্ষমতা রেড জায়ান্ট চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রসরতা বিবেচনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

এক পরিসংখ্যানের হিসেব মতে ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের বিমান বাহিনী প্রায় ৩২৫টি জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, পরিবহণ এবং সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান আকাশেই ক্রাস বা একেবারে ধ্বংস কিম্বা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে গ্রাউণ্ডেড হয়ে পরে রয়েছে। আর শুধুমাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২৫শে মে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫টি এরিয়াল সিস্টেম ক্রাস বা ধ্বংস হয়েছে। এভাবে বিপদজনকভাবে বিমান ধ্বংস বা দূর্ঘটনা চলতে থাকলে এবং ঠিক একই সময়ে এর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক জেট ফাইটার সার্ভিসে আনা সম্ভব না হলে ২০২৫-২৮ সালের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে থাকা এয়ার ফ্লীট ৩২ স্কোয়াডন এর নিচে নেমে যাওয়ার প্রবল আশাঙ্খা থেকেই যাচ্ছে।

অথচ মনে করা হয়, ২০২৮ সালের মধ্যেই বিশ্বের বুকে এভিয়েশন টেকনোলজি এবং ডেভলপমেন্টে চীন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে রেড জায়ান্ট চাইনিজ এয়ার এণ্ড নেভাল ফোর্সের হাতে আনুমানিক বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫,৫০০টি পর্যন্ত জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, ড্রোন, সামরিক এবং প্রশিক্ষণ বিমানের এক বিশাল সম্ভার গড়ে তুলতে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যাচ্ছে চীনের শি জিং পিং সরকার। মানের দিক দিয়ে যাই হোক না কেন বর্তমানে চীনের সামরিক বাহিনী বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক ১,২২০ এর কাছাকাছি কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন, স্পাই, নজরদারি বা আক্রমনাত্বক ড্রোন অপারেট করে থাকে। তাছাড়া, নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চীন ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ এর পর আর কোন জেট ফাইটার বা এরিয়াল সিস্টেম আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার থেকে আমদানি করবে না এবং নিজস্ব প্রযুক্তিগত বা উতপাদন সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে চীনের অস্ত্র আমদানি ১০% এর নিচে নেমে এসেছে।

আবার দীর্ঘ মেয়াদী বৈরিতা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে ভারতকে কৌশলগতভাবে প্রবল চাপের মুখে রাখার নীতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে চীন। আর তার অংশ হিসেবে ভারতের চীরবৈরি পাকিস্তানকে তার চাহিদা মাফিক সামরিক সাজ সরঞ্জাম এবং যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (এইচকিউ-১৬) এমনকী আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে হলেও গোপনেই ব্যালেস্টিক এণ্ড ক্রুজ মিসাইল পর্যন্ত সরবরাহ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছে বলে মনে হয় ন। যা কিনা পাকিস্তান অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি সামরিক সাজ সরঞ্জামের নামে চালিয়ে দিয়ে থাকে।

বিশ্বের এক নম্বর ক্লোন কপিবাজ মাস্টার মাইন্ড চীন এক রকম নিরবেই কল্পনাতীতভাবেই প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং এভিয়েশন ডেভলপমেন্ট অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার একাধিক এবং স্পর্শকাতর প্রযুক্তি চুরি করে বা হস্তগত করে হলেও নিত্য নতুন জেট ফাইটার, বোম্বার, স্টিলথ ফাইটার, হেলিকপ্টার, ড্রোন এরিয়াল এন্ড ডিফেন্স সিস্টেম প্রতি নিয়ত বিশ্ববাসীর সামনে নজিরবিহীন ভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছে। যদিও প্রযুক্তিগত মান নিয়ে প্রশ্নের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায়।

আবার অন্যদিকে কেন জানি মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ চাপ এবং জটিল কূটকৌশলের মুখে সঠিক ভাবে এগোতে পারছে না ভারতের বহুল প্রতীক্ষিত ২০.০০ বিলিয়ন ডলারের (এমএমআরসিএ) ২.০ নতুন প্রজন্মের ১১৪টি জেট ফাইটার ক্রয় প্রজেক্ট। এখানে মার্কিন প্রশাসনের মুল টার্গেট যে ভাবেই হোক ভারতকে মার্কিন এফ-১৮ সুপার হরনেট বা এফ-১৬ এর বিকল্প এফ-২১ জেট ফাইটার ক্রয়ে এক রকম বাধ্য করা। অথচ ভারতকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের ১.৫৩ ট্রিলিয়ন প্রজেক্টের জয়েন্ট স্টাইক এফ-৩৫ লাইটনিং স্টিলথ জেট ফাইটার প্রজেক্টে আন্তর্জাতিক ক্রেতা হিসেবে অন্তভুক্ত করার বিষয়ে কোন ধরণের সুযোগ করে দেয়নি। অবশ্য এদিকে লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন তার অত্যাধুনিক এফ-১৬ এর আপগ্রেডেড ভার্সন এফ-২১ অথবা বোয়িং কর্পোরেশনের এফ-১৮ সুপার হরনেট ফাইটার জেট প্রয়োজন হলে ভারতের মাটিতে মেইক ইন ইণ্ডিয়া নীতিতে ভারতের মাটিতে তৈরি করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে তারা।

এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের সরকার এখনও নিশ্চিত হতে পারছে না তারা কোন পথে এগোবে। যদি আমেরিকার জেট ফাইটার না কিনে রাশিয়ার সুপার এডভান্স এসিউ-৩৫ বা ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল কেনা হলে, সেক্ষেত্রে অতি মাত্রায় কূট কৌশলী এবং যুদ্ধপ্রিয় মার্কিন প্রশাসন ভারতকে বিভিন্নভাবে ট্রাপে ফেলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে ফেলার ভয়ঙ্কর কৌশল প্রয়োগ করে বসতে পারে। যদিও ভারতের বিমান বাহিনীর অধিক পছন্দের জেট ফাইটার ফ্রান্সের রাফায়েল, রাশিয়ার এসিউ-৩৫ কিম্বা অন্য কোন দেশের যে কোন জেট ফাইটার হতে পারে।

হয়ত আজ কালের স্রোতে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক এবং গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যামান রয়েছে। তবে যে কোন কারণে বিশেষ করে ভবিষ্যতে রাশিয়ার এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে বা অন্য যে কোন কারণে সম্পর্কের অবনতি হওয়া মাত্রই জেট ফাইটার বা সার্ভিসে থাকা সকল হেলিকপ্টার বা ড্রোনের প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ এবং কারিগরি সহায়তা একেবারেই বন্ধ করে দিতে দু বার ভাববে না দেশটি।

ভবিষ্যতে ভারতের ঠিক একই পথে রাশিয়ার এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় বিষয়টিকে মার্কিন প্রশাসন যে মোটেও সুনজরে দেখছে না, তা কিন্তু এখনিই এক রকম স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অবশ্য ভবিষ্যতে মার্কিন বা রাশিয়ার এডভান্স জেট ফাইটার এর বিকল্প হিসেবে ফ্রান্সের ৪++ প্রজন্মের নুন্যতম মোট ১৮০টি বা ১০ স্কোয়াডন রাফাল জেট ফাইটারের প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ ক্রয়ের ডিল যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে পারলে এক্ষত্রে ভবিষ্যত ঝুঁকী থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। যেহেতু ভারত ইতোমধ্যেই ফ্রান্সের কাছ থেকে ৮.৮৭ বিলিয়ন ডলার চুক্তি মূল্যে ৩৬টি রাফাল জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো অধিক সংখ্যক একই জাতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় করার ক্ষেত্রে এর দাম এবং অপারেটিং কস্ট ৪০% পর্যন্ত কমে আসবে। তাই সব দিক বিবেচনায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নুন্যতম ১৮০টি বা পূর্ণ ১০ স্কোয়াডন ফ্রান্সের ৪++ প্রজন্মের রাফায়েল এডভান্স সেমি স্টিলথ ফাইটার জেট পর্যায়ক্রমে অন্তভুক্ত করার বিকল্প কোন রাস্তা খোলা আছে বলে মনে হয় না।

তাছাড়া ভারত তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি হাল তেজাসের বার্ষিক প্রডাকশন ক্যাপাবিলিটি ১৬ থকে ৩০ এ উন্নীত করে ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে নুন্যতম ৩২০টি তেজাস মার্ক-১ এবং মার্ক-২ সিরিজের লাইট জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে হবে এবং এসইউ-৩০ এমকেআই ফ্লীটকে আরো বর্ধিত করে ৩৬০-৪০০ এ উন্নীত করা উচিত। এদিকে ঠিক একই সময়ে বিমান বহরে থাকা সবগুলো এসইউ-৩০ এমকেই জেট ফাইটারকে উচ্চ পর্যায়ে আপগ্রেডেড করাসহ নুন্যতম ৮০টি জেট ফাইটার সুপার সুখোই এ রুপান্তর করার বিষয়টি সুপরিকল্পিত ভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করে যাচ্ছে ভারতের বিমান বাহিনী। যদিও ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট ফাইটার (এএমসিএ) প্রজেক্টের প্রটোটাইপ কপির প্রথম উড্ডয়ন আগামী ২০২৬-২৮ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী ভারত।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.