--- বিজ্ঞাপন ---

অবশেষে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে ভয়ংকর পাবজি গেম

0

পাবজি গেম নিয়ে শেষপর্যন্ত টনক নড়েছে সব মহলে। ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো জনপ্রিয় দুই গেম বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সুপারিশ করেছে শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয় থেকে এমন সুপারিশ পেয়ে এ নিয়ে আলোচনা করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে সূত্র জানায়।

পাবজি খেলা নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবারের ভেতরে অশান্তির শেষ নেই। এটি এমন একটি নেশা যা দুর করা আসলে কঠিন। অনেক দেশে পাবজি নিষিদ্ধ। এ গেম এ থাকে যেমন খুনাখুনি তেমন বাস্তবেও এর প্রভাব পড়ে। বলা হয়ে থাকে, গেমটির ধারণা আসে কিমজি ফুকাসাকু পরিচালিত ব্যাটেল রয়্যাল নামক জাপানী একটি চলচ্চিত্র থেকে। ২০০০ সালে প্রচারিত এর কাহিনী বেশ চমকপ্রদ। কাহিনীতে দেখা যায়, স্কুল পড়ুয়া একদল ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অজানা দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। দেয়া হয় কিছু খাবার, পানি। সাথে রয়েছে নানা অস্ত্রও। তাদের সবার গলায় একটি করে ব্যান্ড বেঁধে দেয়া হয়।তার মানে কেউ যদি দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করে তাহলে সেই ব্যান্ড ফেটে সে মরে যাবে। সার্ভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট এর মতো দ্বীপ থেকে সে-ই ফিরে যেতে পারবে, যে সবাইকে হত্যা করে একা ঐ দ্বীপে বেঁচে থাকতে পারবে। এমন নৃশংস কাহিনী নির্ভর পাবজি গেম।
PLAYER UNKNOWN’S BATTLE GROUND গেমটাই সংক্ষেপে PUBG বা পাবজি নামে পরিচিত। গেমটার নাম শুনেনি, এমন লোক বর্তমানে বিশ্বে খুব কমই আছে। আর গেম সম্পর্কে খবরাখবর রাখেন কিন্তু পাবজি চেনেন না, এমন লোক বোধ হয় একজনও নেই। পাবজি হচ্ছে একটি MMO (Massively Multiplayer Online) গেম, যেটা বর্তমানে সারা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রচলিত মোবাইল গেমসগুলোর মধ্যে পাবজি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আর মোবাইল, পিসি অর্থাৎ সব ধরণের ডিভাইসের গেমগুলো হিসাব করলেও তর্কসাপেক্ষে এটাই আছে শীর্ষে। ভালো একটা ICT Device আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই প্রায় সবাইই এখন এই গেমটাই খেলে থাকেন। সব বয়সের মানুষই অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে খেলেন এই গেমটি।
“Tencent Games” নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরিকৃত এই গেমটি শুধুমাত্র গুগল প্লে স্টোরেই ১০০ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। বিগত এক বছরে এর আয় প্রায় ১৩৬% বেড়েছে। দ্রুত জনপ্রয়িতার কারণে পাবজি গেমটি একদিকে যেমন আলোচিত হচ্ছে, অন্যদিকে কিছু ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় গেমটি সমালোচিত হচ্ছে। কয়েকটি দেশে গেমটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আরো কিছু দেশেও এই গেম নিষিদ্ধ হওয়ার পথে রয়েছে।
কেবলমাত্র বিনোদনের জন্য এই গেমটি খেলা হলে এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা থাকত না। কিন্তু গেমটি যেভাবে মানুষজনকে আসক্ত করছে, সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পাবজি একটা চমৎকার গেম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু গেমটিতে আসক্তি একজন মানুষের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করে, এতেও কোনো সন্দেহ নেই।কোন কিছুতেই আসক্তি ভালো জিনিস নয়, পাবজির ক্ষেত্রেও এটা সত্য। আর শুধু আসক্তিই নয়, পাবজি গেমটির আরো কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা আমাদের সবারই জানা উচিত।
অন্যান্য অনেক ভিডিও গেমের মতো পাবজি গেমটার বিরুদ্ধেও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চীনে গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগেই। ভারতে নিষিদ্ধ করতে হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে নেপালে। গেমটির অত্যধিক সহিংসতা গেমারকে আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে। হিংসাত্মক কার্যক্রমে তাকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারে। পাশাপাশি গেমারের আচার আচরণকেও বিষিয়ে তুলতে পারে। অতীতেও অনেকবার এ রকম উগ্র গেম খেলা গেমারদের নানারূপ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা গিয়েছে।
পাবজি গেম অতিরিক্ত খেললে এটা সত্য যে গেমটি খেলোয়াড়কে সারাদিন ব্যস্ত রাখবে। আর এটাও ঠিক যে এই সময়ে কেউ লাভজনক কোন কাজ করতে পারবেন না। ভিডিও গেমে আসক্তি কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে আমাদের অবশ্যই আসক্তি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ ভিডিও গেমে আসক্তি আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।পাশাপাশি আমরা গেমের মূল্যহীন স্কোর অর্জনের জন্য আমাদের অমূল্য সম্পদ সময় ব্যাপকভাবে নষ্ট করি। যেটা বাস্তবজীবনে কোনো কাজেই আসবে না। কিন্তু বর্তমানে ভিডিও গেমসগুলোর সফলতা নির্ভর করে এটা কত দক্ষতার সাথে মানুষজনকে আসক্ত করতে পারে তার উপর। আর পাবজি গেমেরও জনপ্রিয়তার কারণ এটা সব বয়সী মানুষকেই দারুণভাবে আসক্ত করতে পারছে। ভয়টা এই আসক্তি নিয়েই। কারণ ছোটদেরকে সারাক্ষণ গেম খেলা থেকে ফিরিয়ে রাখার ৪টি উপায় থাকলেও, বড়দের ক্ষেত্রে এগুলো কার্যকর নয়। সত্যি বলতে কি, বড়দেরকে গেম খেলার আসক্তি থেকে ফেরানো অনেক কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে গেমার যদি নিজে তার গেম খেলার ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝে এবং নিজ থেকে বিরত থাকে, তবেই সম্ভব। না হয় আসলেই এটি অনেকটাই অসম্ভব।
পাবজির মতো একটি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমে আসক্তির কারণে একজন মানুষ দিনে রাতে প্রায় সব সময়ই এই গেমটি খেলে তার মহামূল্যবান সময় নষ্ট করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সে পরিবারের ও সমাজের অন্যদের সাথে সময় কাটাতে পারে না। বন্ধুবান্ধবের প্রয়োজনীয়তাও সে উপলব্ধি করে না। গেমটি এতই উত্তেজনাদায়ক যে যারা এই গেমে আসক্ত তারা সামাজিকভাবে মোটেই সক্রিয় নয়।
এই গেমটি এতই আকর্ষণীয় আর আসক্তিকারক হিসেবে তেরি করা হয়েছে যে এটি প্লেয়ারদের একটানা খেলতে থাকতে বাধ্য করে। অথচ একটানা মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কারণ এটি কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ নয়। তাছাড়াও এগুলোর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একটানা এইসব ডিভাইস ব্যবহার করলে মাথাব্যাথাও হতে পারে। এভাবে সারাদিন এসবের সামনে বসে থাকলে পিঠে ব্যাথা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ ২০১৮ সালে WHO (World Health Organization) ভিডিও গেমসে আসক্তিকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর পাবজিও একটি ভিডিও গেমস। ভিডিও গেমস অনেক মানুষের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার একটি বড় কারণ। গেমের ফলাফল নিজের পছন্দ মতো না হলে একজন মানুষ সহজেই বিষণ্ণ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অভাবে সামাজিক জীবনে চলাফেরার সময় মানুষটি উদ্বিগ্নতায় ভুগতে পারে।
পাবজি গেমটা ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম। গেম শেষ না হবার কারণে আপনি ঘুমাতে চাই না। এমনকি ঘুমের সময় হলেও। তাছাড়াও অনেকক্ষণ ধরে মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দার সামনে বসে থাকার কারণে সহজে ঘুমও আসবে না। ফলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ না ঘুমানোর কারণে মানুষ শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
কেউ যদি পাবজি গেমটা খেলে থাকেন, তবে অবশ্যই দেখেছেন যে একটা ম্যাচ শেষ করতে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বা আরো বেশি সময় লাগে। আর এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, খুব কমসংখ্যক মানুষই একটা ম্যাচ খেলেই থামে। যদি দিনে মাত্র ৫টা ম্যাচও খেলে, তারপরও কম করে হলেও আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট হবে, যে সময় অন্যান্য দরকারি কাজগুলো করা যেতো
“পাবজি” গেমটা সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে অত্যন্ত ব্যাপকভাবে। পাশাপাশি এই গেমে আসক্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। গেমটাতে আসক্তি জীবনটাকে বিষিয়ে তুলতে পারে অনেক সহজে। কর্মজীবনের ক্ষতিসাধন করতে এই গেমে আসক্তিই যথেষ্ট।যেইসব ছাত্ররা এই গেম খেলে, তাদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দিনদিন তাদের ফলাফল নিচের দিকে যাচ্ছে। তাই সবারই উচিৎ এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা, গেমটাতে আসক্তি পরিহার করা।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.