--- বিজ্ঞাপন ---

ভারত-পাকিস্তানকে টপকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে নতুন তারকা বাংলাদেশ, বলছে ভারতের গণমাধ্যম

0

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বাংলাদেশের বেশ গুনগান গাইলো ভারতীয় মিডিয়া ‘এই সময়’। বাংলাদেশের কোন কিছুর প্রশংসা ভারত সাধারনত করে না। তবে আন্তর্জাতিকভাবে যখন কোন ইস্যুতে বাংলাদেশ হাইলাইট হয় তখন টনক নড়ে ভারতের। গণমাধ্যমগুলো মাঝে মাঝে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো বেশ সাবধানে কথা বলে।

কি লিখেছে এই সময়

অর্ধ শতক। একটা দেশের বয়সের হিসেবে নেহাতই শিশু। সেই ‘শিশু’ই উন্নয়নের নিরিখে এককালের শাসককে গেল টপকে। টক্কর দিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দাবিদার পড়শিকে। অর্থনৈতিক উন্নতির হিসেবে পাকিস্তান এবং ভারত, দু’দেশকেই পিছনে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ার ‘নতুন তারকা’র তকমা ছিনিয়ে নিল বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, অর্থাৎ সহজ করে বলতে গেলে দেশের মোট আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে গড় হয়, সে হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের থেকে অনেকখানি এগিয়ে বাংলাদেশ।

বিতর্ক থাকলেও কোনও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সূচক হিসেবে দেখা যেতে পারে মাথাপিছু আয়কে। এ ছাড়াও অন্যান্য নিরিখে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে বাংলাদেশ।কিন্তু পরিস্থিতি এখন একেবারেই উল্টো। সে দেশের ক্যাবিনেট সচিব গত মাসে জানিয়েছেন, গত এক বছরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯ শতাংশেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ মার্কিন ডলার। সে জায়গায় পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১,৫৪৩ মার্কিন ডলার। আর গত অর্থবর্ষে ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল ১,৯৪৭ মার্কিন ডলার। অনেকেই মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে তারাই একমাত্র নেতা বলে ভারতের যে দীর্ঘকালের গর্ব, তা এখন কার্যত ধূলিস্যাৎ। আবার, পঞ্চাশ বছর আগে পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল। সে জায়গায় এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি বিত্তবান! এক পাক অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘২০৩০ সালে হয়তো দেখা গেল, আমরা বাংলাদেশের থেকে সাহায্য নিলাম।

‘’ভারত অবশ্য বাংলাদেশের এই সাফল্য খোলা মনে স্বীকার করতে নারাজ। বিজেপির অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে। যদিও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই অভিযোগ অপ্রাসঙ্গিক বলে অনেকের মত।কিন্তু ভারত যা-ই বলুক, তাতে বাস্তব বদলাচ্ছে না। সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে – রপ্তানি, সামাজিক অগ্রগতি এবং আর্থিক সংযম। ঢাকার রপ্তানি ২০১১ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে প্রতি বছর ৮.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে বিশ্বে রপ্তানি বৃদ্ধির গড় হার ছিল ০.৪ শতাংশ। এই সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ পোশাকের মতো ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যেখানে বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশে মোট শ্রমিক সংখ্যায় মহিলাদের অংশীদারি ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো চিত্র ভারত ও পাকিস্তানে। দু’দেশেই মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা কমছে বলে খবর। উৎপাদনে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ঢাকার ঋণ ও আয়ের অনুপাত দিল্লি ও ইসলামাবাদের চেয় অনেকখানি কম। এই অনুপাতকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। সে জায়গায় ভারত ও পাকিস্তানে এই অনুপাত প্রায় ৯০ শতাংশ। যেমন কোনও ব্যক্তির ঋণের অঙ্ক কম থাকলে তা পরিশোধের সম্ভাবনা বেশি বলে ধরা হয়, তেমনই ধারণা কাজ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে। যার প্রভাব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পড়তে পারে। তা ছাড়া দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার বেশি হলে এই অনুপাত অতটা সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় না। কিন্তু এই করোনাকালে পরিস্থিতি তেমনটা নয়।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের আর্থিক নীতির কারণে ঋণ ও লগ্নি – দু’ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ ভালো। যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের এই সাফল্য তাদের জন্য সমস্যাও নিয়ে আসতে চলেছে। প্রথমত, উন্নত দেশগুলিতে তারা এখন মাসুল ছাড়াই রপ্তানির সুবিধা পায়। উন্নয়নের কারণে ২০২৬ থেকে সেটা আর পাবে না। বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের সবথেকে কম উন্নত দেশগুলি এই সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু এই সুবিধা না-পেলে রপ্তানি ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার পোশাকের বদলে অপেক্ষাকৃত দামি পণ্যের দিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। সেই প্রতিযোগিতা মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকা দরকার। তা করতে হলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের সঙ্গে মুক্ত এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারের আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.