--- বিজ্ঞাপন ---

ইরানের নৌবাহিনীর বৃহত্তম একটি জাহাজ হরমুজ প্রণালীর কাছে ডুবে গেছে

আগুন লাগার পর জাহাজটির শেষ রক্ষা হলো না

0

বিশেষ প্রতিনিধি

হরমুজ প্রণালীর কাছে ইরানের নৌবাহিনীর বৃহত্তম একটি জাহাজ অগ্নিকাণ্ডের পর ডুবে গেছে। গতকাল ভোরে ইরানের Kharg-431 নামের জাহাজটি অগ্নিকাণ্ডের পর সাগরে ডুবে যায়। নৌবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় এতে প্রায় ৪০০ ক্রু ছিলেন। ২০ ঘন্টাব্যাপী অভিযানে সবাইকে উদ্ধার করা গেলেও জাহাজটিকে রক্ষা করা যায়নি, সাগরে ডুবে যায় সেটি। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২০ জন ক্রু সামান্য দগ্ধ হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
তেলবাহী জাহাজ হিসেবে কাজ করলেও ইরানের নৌবাহিনীতে একে ‘ট্রেনিং শীপ’ বলা হতো। এছাড়া এটি ৩টি হেলিকপ্টারও বহন করতে পারতো। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগে ব্রিটেনের কাছে অর্ডার করা হলেও বিপ্লব-পরবর্তী নানা জটিলতার পর শেষপর্যন্ত ১৯৮৪ সালে এটি যুক্ত হয়েছিল।

ইরানের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে খার্গ নামের ওই জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়। ইরানের অন্যতম প্রধান তেল টার্মিনাল হিসেবে পরিচিত হরমুজ প্রণালীর খার্গ দ্বীপের নাম অনুসারে জাহাজটি নামকরণ করা হয়েছিল।শেষ রাতে ধারণকৃত একটি ছবিতে দেখা যায়, জাহাজটির ক্রুরা জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেট পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। এ সময় জাহাজটির পেছনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে দিনের আলোতে ধারণকৃত অপর একটি ছবিতে দেখা যায়, জাহাজটি জ্বলছে এবং কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে সেখানকার আকাশ।
ইরানের সেনাবাহিনী অবশ্য খার্গকে প্রশিক্ষণ জাহাজ হিসেবে দাবি করে বলেছে, জাহাজটিতে প্রায় ৪০০ ক্রু এবং প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তাদের সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা তাসনিম নিউজ অ্যাজেন্সিকে বলেছেন, জাহাজে অগ্নিকাণ্ডে ২০ জন হালকা আহত হয়েছেন।
তবে এখন পর্যন্ত এই জাহাজে আগুনের কোনও কারণ জানায়নি ইরানের সেনাবাহিনী। দেশটির সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে জাহাজটির ইঞ্জিন কক্ষ এবং অবয়ব গলে সাগরে ডুবে গেছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালীর কাছের ইরানের জাস্ক বন্দরের কাছে জাহাজটি ডুবে যায়। ব্রিটেনে তৈরি এই জাহাজ ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আগ মুহূর্তে উদ্বোধন করা হয়। কয়েক বছরের বোঝাপড়া শেষে ১৯৮৪ সালে ইরানের নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয় এটি।

উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালী একটি সরু জলপথ যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ইরানকে পৃথক করেছে। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রণালীটি পারস্য উপসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওমান ও ইরানকে সংযুক্ত করেছে।

এই সামুদ্রিক পথটি আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ খনিজতেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ। বিশ্বব্যাপী পেট্রোলিয়াম পরিবহনে প্রণালীটির কৌশলগত গুরুত্ব অত্যধিক। জলপথটির সবচেয়ে সরু অংশের দৈর্ঘ্য ২১ মাইল এবং প্রস্থ দুই মাইল। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন কর্তৃপক্ষের মতে, ২০০৯ সালে সমুদ্রপথে বৈশ্বিক খনিজ তেল বাণিজ্যের ৩৩ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে সম্পাদিত হয়। ২০১৯ সালে হরমুজ প্রণালী দিয়ে এক দিনে এক কোটি ৯০ লক্ষ ব্যারেল খনিজ তেল পরিবাহিত হয়। এ অঞ্চল দিয়ে তেল পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত পাহারা দিচ্ছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত তেলের বেশির ভাগই এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায়। জাপানের আমদানিকৃত তেলের তিন-চতুর্থাংশ হরমুজের ওপর দিয়ে নিয়ে যায়। আর চীনের আমদানিকৃত তেলের অর্ধেকই আসে হরমুজ প্রণালী হয়ে। হরমুজ দিয়ে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের মতো তেলজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এর সঙ্গে আছে তরলীকৃত গ্যাসও।##

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.