--- বিজ্ঞাপন ---

কে হচ্ছেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট

0

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ১ততম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্তভাবে সাত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থীরা হলেন, সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি, মোহসেন রেজায়ি, মোহসেন মেহের আলীজাদে, সাঈদ জালিলি, আলী রেজা যাকানি, আব্দুন নাসের হেম্মাতি ও সাইয়্যেদ আমির হোসেন কাজিজাদে হাশেমি। আগামী ১৮ জুন শুক্রবার ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশজুড়ে এখন সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জল্পনা চলছে। ইরানে মূলত দু’টি রাজনৈতিক ধারা সক্রিয় রয়েছে। একটি ‘রক্ষণশীল’ আর অপরটি ‘সংস্কারকামী’ নামে পরিচিত। এ দু’ধারার প্রার্থী রয়েছে নির্বাচনে।

১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন আবুল হাসান বানি সাদ্‌র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিপ্লবী আদর্শে অটল থাকতে পারেননি। বিপ্লববিরোধী চক্রের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার হন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ঘোর শত্রু নিষিদ্ধ সংগঠন এমকেও’র সঙ্গে তার যোগসাজশ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে পড়ে। সে সময় ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তার মধ্যে আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিলাসিতার মতো বিপ্লবের চেতনাবিরোধী নানা দোষ বানি সাদ্‌রের মধ্যে প্রবল হয়ে দেখা দেয়। এর ফলে ১৯৮১ সালের জুনে বানি সাদ্‌রকে প্রথমে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খোমেনী (রহ.) এবং পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ তাকে প্রেসিডেন্টের পদের জন্যও অযোগ্য ঘোষণা করে। এক পর্যায়ে তিনি ইরান থেকে পালিয়ে যান। এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মাদ আলী রাজায়ি। এক মাসের মাথায় তাকে হত্যা করে বানি সাদ্‌রের ঘনিষ্ঠ নিষিদ্ধ সংগঠন এমকেও। এই ছিল ইরানের প্রথম প্রেসিডেন্ট সংক্রান্ত তিক্ত ইতিহাস। প্রথম প্রেসিডেন্ট গোটা জাতির বহু বছরের সাধনার ফসল ইসলামী বিপ্লবকে প্রায় অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিয়েছিলেন। ঐ ঘটনার পর ইরানে প্রার্থী বাছাইয়ে স্পর্শকাতরতা বেড়েছে।

সূত্র মতে, এবারের নির্বাচনে রক্ষণশীল ধারার প্রধান প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি। বর্তমানে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই বিজ্ঞ আলেম। এর আগে ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন। টানা ১০ বিচার বিভাগের উপ-প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় নিরীক্ষণ দপ্তরের চেয়ারম্যান ছিলেন। দুই বছর আগে বিচার বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এমন কিছু বিপ্লবী পদক্ষেপ নিয়েছেন যা গোটা দেশেই আলোড়ন তুলেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে আগের চেয়ে তার ভাবমর্যাদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি ইরানের বিশেষজ্ঞ পরিষদ বা অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টেরও সদস্য। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন রক্ষণশীল ধারার আরেক প্রভাবশালী প্রার্থী বাকের কলিবফ। তিনি এখন ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার।

সাবেক প্রধান কমান্ডার মোহসেন রেজায়িও অন্যতম প্রার্থী। তিনি বর্তমানে ইরানের নীতি নির্ধারণী পরিষদের সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেছেন। তিন বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তবে আশানুরূপ ফল পাননি। মোহসেন রেজায়ি রক্ষণশীল ধারার মানুষ। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সচিব জালিলি অন্যতম প্রার্থী।

ইরানে আট বছর পরপর সংস্কারপন্থী ও রক্ষণশীলদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। টানা দুই নির্বাচনে সংস্কারপন্থীরা জয় পেলে পরের দুই নির্বাচনে রক্ষণশীলরা জেতে। জনগণ এই রীতির ব্যত্যয় না ঘটালে এবার রক্ষণশীলদের পালা। সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দুই মেয়াদে ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ কারণে ইরানিদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে যা সংস্কারপন্থীদের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা এনেছে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি সংস্কারপন্থীরা। ঐ নির্বাচনে রক্ষণশীলরা সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতেছে। তবে বর্তমান সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট রুহানির প্রশাসন বিদায়ের আগ মুহূর্তে মার্কিন কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করে নতুন চমক সৃষ্টির সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই প্রচেষ্টা সফল হলে সংস্কারপন্থীদের জনপ্রিয়তাও আবার বেড়ে যেতে পারে এবং আসন্ন নির্বাচন অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। জনমত জরিপ অনুযায়ী এবারের এই নির্বাচনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি। একজন বড় আলেম ও বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি জনকল্যাণমূলক অনেক তৎপরতার রেকর্ডের কারণে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার এইসব তৎপরতার মধ্যে রয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া নানা কল-কারখানা পুনরায় খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং দুর্নীতি বিরোধী নানা পদক্ষেপ।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-অভিযান ও সমর্থক মহলে উত্তেজনা। সোশাল মিডিয়াসহ নানা ধরনের প্রচার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বক্তব্য, ওয়াদা, পরিকল্পনা ও নানা বিষয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্যও উঠে আসছে ব্যাপক মাত্রায়। আগামী ১৮ জুন শুক্রবার দেশটিতে ১৩ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.