--- বিজ্ঞাপন ---

আধুনিক যুদ্ধ বিমান নিয়ে বিশ্বের অস্ত্র বাজারে ঢুকতে চাইছে চীন

0

বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক এবং সামরিক পরাশক্তি রেড জায়ান্ট চীন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের আধিপত্য এবং সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তির এভিয়েশন সিস্টেম বিশ্বের সামনে উম্মোচন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চীন তার একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জে-১০সি ৪++ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মাল্টিরোল জেট ফাইটার সার্ভিসে এনেছে। এটি মুলত পূর্বের জে-১০এ/বি সিরিজের জেট ফাইটারের সকল সীমাবদ্ধতা এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি বিচ্যুতি সমাধান করে সেমি স্টিলথ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ, উন্নত (এইএসএ) রাডার এবং অত্যাধুনিক এভিয়নিক সিস্টম ইনস্টল করেছে।

চাইনিজ চেংডু এভিয়েশন কর্পোরেশন তাদের জে-১০সি সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারের ডিজাইন কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে যতটা সম্ভব রাডার ক্রস সেকশন কমিয়ে এনে সেমি স্টিলথ টেকনোলজি সক্ষমতা সম্পন্ন করে তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে এবং এই সিরিজের জেট ফাইটারটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার হিসেবে বিশেষ ভাবে উচ্চ মাত্রায় ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ডিজাইন করেছে।

তবে প্রকাশ থাকে যে, চাইনিজ জে-১০সি সিরিজের জেট ফাইটারটিকে তাদের পূর্বের সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-/জে-৭ লাইট জেট ফাইটারের সফল ব্যবসার পরে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক সফল ব্যবসার উদ্দেশ্যে সার্ভিসে আনলেও এখনো পর্যন্ত তার শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে এটিতে যতই সুপার এডভান্স প্রযুক্তি ব্যহার করা হোক না কেন এর বাস্তবতা হলো কোন যুদ্ধে এয়ার কমব্যাট মিশনের অভিজ্ঞতা নেই। তার মানে জে-১০ আজ অবধি কোন যুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ হয় নি বা ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না।

যেখানে শুধুমাত্র মার্কিন লকহীড কর্পোরেশনের এফ-১৬ ১৯৭৮ সালে সার্ভিসে আসার পর শতাধিকবার আপগ্রেড করা হয়েছে এবং এফ-১৬ সফল এয়ার কমব্যাট মিশন রেকর্ড রয়েছে হাজার বার। আর জে-১০ এর রেকর্ড এক রকম শুন্যের কোঠায় বলা চলে। মহড়া আর নিয়মিত যুদ্ধ বিহীন উড্ডয়ন এবং নজরদারি ছাড়া এর আর কোন রেকর্ড আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া চাইনিজ বিমান বাহিনী কারিগরি ও ইঞ্জিন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন আপগ্রডিং এর নামে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সে বহরে থাকা সকল জে-১০ ফ্লীটের এর একটি বড় অংশ বিমান গ্রাউন্ডেড করে রাখে।

২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুমানিক প্রায় ২০টি জে-১০ সুপার এডভান্স জেট ফাইটার কোন রকম কমব্যাট মিশন ছাড়াই শুধুমাত্র উড্ডয়নরত অবস্থায় কারিগরি ত্রুটি বা ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে ধ্বংস হয় বা মারাত্বকভাবে ক্রাস ল্যান্ডিং করে। কোন রকম কম্ব্যাট অপারেশন বা মিশন ব্যতিত ২০১৭ সালে ২ বার এবং ২০১৬ সালে খুব সম্ভবত একবার ল্যান্ডিং ক্রাস করে। এছাড়া, শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই জে-১০বি জেট ফাইটার সর্বোচ্চ ৪ বার ক্রাশ করেছে। ২০১৪ সালে ১ বার, ২০১০ এ ১ বার, ২০০৯ এ ২ বার ও ২০০৭ ও ২০০৫ এ ১ বার করে ক্রাশ করেছে জে-১০ ফাইটার জেট। চাইনিজ এয়ার ফোর্স অফিসিয়ালী জে-১০ এর এই ক্রাসিং রিপোর্ট প্রকাশ করলেও চায়নিজ বিমানবাহিনীতে কিন্তু এর প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশী হতে পারে।

এদিকে রাশিয়ান সামরিক ও এভিয়েশন প্রযুক্তিবীদদের ভাষ্যমতে, প্রায় ১২ টন ওজনের জে-১০ বিমানটি সিঙ্গেল রাশিয়ান এসইউ-২৭ এর এএল-৩১এফ ইঞ্জিন বা চীনের নিজস্ব উৎপাদিত এডভান্স ডাব্লিউএস-১০এ আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহারের উপযুক্ত বা কম্পিটেবল নয়। তার মানে এই মানের সিঙ্গেল ইঞ্জিন দ্বারা তুলনামুলক ভারি প্রায় লোডেড অবস্থায় প্রায় ১২ টন ওজনের জে-১০ জেট ফাইটার স্বাভাবিকভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ বেশ ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তাছাড়া চাইনিজ এভিয়েশন প্রযুক্তিবীদেরা ইতোমধ্যে জে-১০ এর বেশ কিছু ডিজাইন সংক্রান্ত কিছু জটিল ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন এবং সমস্যা অনেকটা সমাধান করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। চীনের জেট ইঞ্জিন তৈরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা থাকলেও চীন কিন্তু নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিন উৎপাদন এবং ডেভলপমেন্টের জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত ২০২২ সাল নাগাদ চাইনিজ এভিয়েশন ইনডাস্ট্রিজ ডেডিকেটেড এবং নতুন প্রজন্মের জেট ইঞ্জিন সার্ভিসে আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হয়।

তবে চীন জে-১০ সিরিজের এ, বি, সি, ডি ও ই যাই সার্ভিসে আনুক না কেন ব্যাপক যুদ্ধ অভিজ্ঞতা বিহীন এসব জেট ফাইটাক ক্রয়ে আমাদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া, জে-১০ এর প্রিভিয়াস ক্রাসিং রেকর্ড কিন্তু খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের পূর্বের জে/এফ-৭ সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলো ব্যাপক ব্যবসা করতে সক্ষম হয় এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ এর কাছাকাছি বিমান উৎপাদন করা হয়েছিল। বর্তমানে চাইনিজ জে-৭ সিরিজের প্রডাকশন লাইন বন্ধ করা হয়েছে এবং এর বিকল্প হিসেবে নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরার জন্য চীন পাকিস্তান যৌথভাবে জেএফ-১৭ থান্ডার লাইট মাল্টিরোল জেট ফাইটার উৎপাদন শুরু করে। তবে মজার বিষয় চীন কিন্তু তার নিজস্ব বিমান বাহিনীতে জেএফ-১৭/ এফসি-১ সিরিজের কোন যুদ্ববিমান অন্তভুক্ত করেনি।

বর্তমানে চীনের উৎপাদিত জে-১০ সিরিজের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান তার নিজস্ব বিমান ও নৌ বাহিনীতে ব্যবহার করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতা ধরার জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা চলে, চীনের জেএফ-১৭/ এফসি-১ স্বল্প দামে ৬টি মিয়ানমার এবং ৬টি নাইজেরি্যার কাছে রপ্তানি করা ছাড়া জেএফ-১৭ কিংবা জে-১০ কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের পূর্বের এফ-৭ এর মতো মোটেও সফল হতে পারছেনা এবং ব্যাপকভাবে নতুন ক্রেতা দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে এক রকম ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে।#

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.