--- বিজ্ঞাপন ---

ক্রিমিয়ার জলসীমা নিয়ে বৃটেন-রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থা

0

ক্রিমিয়ার জলসীমা নিয়ে বৃটেন-রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থান। কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে ছড়াল তীব্র উত্তেজনা। সম্মুখসমরে রাশিয়া (Russia) এবং গ্রেট ব্রিটেন (Great Britain)। রাশিয়ান যুদ্ধবিমান এবং রণতরী থেকে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হল গোলা। তবে যুদ্ধের জন্য নয়, জলসীমা লঙ্ঘন করায় সতর্ক করার জন্যই বুধবার ওই গোলা ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। ক্রিমিয়ার জলসীমায় ব্রিটেন আর কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালালে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজের ওপর বোমা ফেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। রয়টার্স জানায়, ক্রিমিয়ার জলসীমায় ব্রিটেনের ‘এইচএমএস ডিফেন্ডার’ যুদ্ধজাহাজ অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

TASS-সহ রাশিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, কৃষ্ণ সাগরে বিতর্কিত ক্রিমিয়া দ্বীপের কাছাকাছি রুশ জলসীমা লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ HMS Defender। এরপরই নিয়মমাফিক সেই ব্রিটিশ রণতরীটিকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করে গোলা ছোঁড়ে সীমান্তে টহলদারি রুশ যুদ্ধজাহাজ। পরবর্তীতে রুশ এয়ারক্রাফ্ট কেরিয়ারের যুদ্ধবিমান সুখোই-৪৪ থেকে চারটি গোলা ছোঁড়া হয়। যদিও রাশিয়াকে পালটা জবাব দেয়নি ব্রিটিশ রণতরী। শুধু তাই নয়, এরপরই নিজের পথও বদলে ফেলে HMS Defender। পাশাপাশি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোনওরকম আন্তর্জাতিক নিয়মই ভাঙা হয়নি। তাঁরা আন্তর্জাতিক জলসীমানার সমস্ত নিয়ম মেনেই ইউক্রেনের পাশ থেকে যাতায়াত করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রুশ জলসীমায় ব্রিটিশ জাহাজ প্রবেশের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে মস্কো। মস্কোতে রাষ্ট্রদূত দেবোরাহ ব্রোনার্টকে তলবের পর ক্রেমলিন জানায়, ব্রিটেন কৃষ্ণ সাগরে বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়কভ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো সাধারণ বিষয়গুলোকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানাতে পারি। কিন্তু, তারা যদি বিষয়টি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তবে প্রয়োজনে শুধু জাহাজের পথেই নয়, লক্ষ্যবস্তুতেও বোমার আঘাত করতে পারি।’
গতকাল বুধবার ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়ার উপকূলে কৃষ্ণ সাগরে ব্রিটিশ নৌবাহিনী ও রাশিয়ার বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মস্কোর প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে, ক্রিমিয়ার জলসীমায় ব্রিটেনের ‘এইচএমএস ডিফেন্ডার’ যুদ্ধজাহাজ অনুপ্রবেশ করেছিল। সেসময় রুশ টহল জাহাজ থেকে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজকে সতর্ক করে দুটি গোলা ছোঁড়া হয় এবং জাহাজের পথের সামনে জঙ্গিবিমান থেকে একটি বোমাও ফেলা হয়েছে।
তবে, মস্কোর অভিযোগের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এসব কিছুই ঘটেনি। রাশিয়া ঘটনার মিথ্যা বর্ণনা দিচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ইউক্রেনীয় বন্দর ওডেসা থেকে বাতুমির জর্জিয়ান বন্দরে যাচ্ছিল। আইন মেনেই জাহাজটি যাত্রা করেছে। এটি আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই ছিল।
তিনি বলেন, ‘এটি ইউক্রেনের জলসীমা। সেখানে এ বিন্দু থেকে বি বিন্দুতে যাওয়ার জন্য যে পথটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি পুরোপুরি সঠিক ছিল।’
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস অভিযোগ করেন যে, ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের ৫০০ ফুট (১৫২ মিটার) ওপরে রুশ বিমান বিপজ্জনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল। ওয়ালেস বলেন, ‘রয়েল নেভি সবসময় আন্তর্জাতিক আইনকে সমর্থন করবে এবং কোনো “ইনোসেন্ট প্যাসেজ”-এ বেআইনি হস্তক্ষেপ গ্রহণ করবে না।’
আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী, ‘ইনোসেন্ট প্যাসেজ’ হলো এমন জলপথ, যেখানে একটি জাহাজ কোনো রাজ্যের নিরাপত্তায় প্রভাবিত না করে তার আঞ্চলিক জলসীমার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও পাল্টা লন্ডনের বিরুদ্ধে ‘নিছক মিথ্যাচারে’র অভিযোগ করেন।

২০১৪ সাল থেকে ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এসেছে রুশরা। অন্যদিকে, দ্বীপটি যে ইউক্রেনের অংশ, এমনটাই মনে করে ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি। এই নিয়েই মস্কোর সঙ্গে বিবাদ ব্রিটেন-আমেরিকার মতো দেশগুলির। এখন এই ঘটনা ফের একবার বিতর্কের আগুন উসকে দিয়েছে। অবশ্য ব্রিটেন ও পশ্চিমা দেশগুলো একে ইউক্রেনের অংশ বলে দাবি করে। কৃষ্ণসাগর, যেখানে রাশিয়া ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে তার শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য দেখিয়ে থাকে, সেটি নিয়ে বহু শতাব্দী ধরে রাশিয়া ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ তুরস্ক, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.