--- বিজ্ঞাপন ---

আফগানিস্তানে কি আবারো তালেবান সরকার?

৩৯৮টি জেলার মধ্যে ২৫০টিই তাদের দখল দাবি

0

বিশ্বের নজর আবারও আফগানিস্তানের দিকে। তালেবান যে আবারও ক্ষমতায় আসছে এটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে আসছে। তবে সে ক্ষমতা দখল কতটা রক্তক্ষয়ী হবে এটাই এখন দেখার বিষয়। আমেরিকান সেনারা চলে যাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে দুর্বল নজিবুল্লাহ সরকারের পতন ঘটে । ১৯৯২ সালে ক্ষমতার পালাবদল হয় অনেক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে। এবারও কি তাই হচ্ছে। এরই মধ্যে তালেবানরা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কাবুলে আশরাফ গানি সরকারের পতন ঘটানো। মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন বাহিনী সরে যাবার ছয় মাসের মধ্যে তালেবানদের হাতে কাবুলের পতন ঘটবে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে তালেবানরা আবার আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তবে ৬৫০ জনকে রাখা হচ্ছে সেখানে মার্কিন দূতাবাস পাহারা দেওয়ার জন্য। আমেরিকান সেনারা চলে যাবার পর শূন্য স্থানগুলো এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। অনেকাংশে চলছে সরকারী বাহিনীর সাথে লড়াই। আমেরিকান সেনারা যাবার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগ্রাসী হয়ে উঠেছে তালিবান, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সারা দেশে।

রাশিয়ার মস্কোয় তালিবানের এক প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, দেশের ৩৯৮টি জেলার মধ্যে ২৫০টিই তাদের দখলে চলে এসেছে। কোন কোন জেলা এর মধ্য পড়ছে, আফগান সরকার এখনও পর্যন্ত তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি। তবে ওই সব এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী তারেক আরিয়ান। দীর্ঘ দু’দশক পর আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাচ্ছে আমেরিকা। ৩১ অগাস্টের মধ্যেই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। তবে তারপর আফগান সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে যে সন্দেহ রয়েছে, সে কথা মেনে নেন বাইডেন।

আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার একই সময়ে দেশটির সরকার কার্য নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখিন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ হানিফ আতমার সম্প্রতি কাবুলে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, অনেক জেলার নিয়ন্ত্রণ তালেবান গ্রহণ করেছে। আতমার বলেন, কোনো কোনো জেলা তালেবানরা জোর করে দখল করেছে এবং কোনো কোনো জেলা থেকে সরকারি সেনাদের ‘কৌশলগত কারণে’ সরিয়ে আনা হয়েছে। ‘সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের বহু জেলার পতন হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও এই প্রথম দেশটির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত খবরের সত্যতা নিশ্চিত করলেন। তালেবান অবশ্য ২৫০টির বেশি জেলা দখল করার দাবি করেছে। আর আফগান জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ দাবি করেছে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী গত দু’সপ্তাহে ১৪ জেলার নিয়ন্ত্রণ তালেবানের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আফগানিস্তানের মোট জেলা সংখ্যা ৩৮৮ টি।

এদিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেছেন, দেশের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে ছেড়ে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা কাবুল সরকারের নেই। তিনি বলেন, “তালেবান যদি মনে করে আমরা আত্মসমর্পন করব তাহলে আগামী ১০০ বছরেও তাদের সে আশা পূরণ হবে না।বিগত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আফগান জনগণের এই জল্পনা জোরেসোরে প্রচারিত হচ্ছে যে, আশরাফ গনি সরকার বিনা যুদ্ধে একের পর এক জেলা তালেবানের হাতে তুলে দিচ্ছে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয় যাতে লেখা ছিল, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশের কয়েকটি জেলা তালেবানের হামলার আগেই খালি করে দেয়া হয়েছে।তালেবানের মুখপাত্ররা সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমগুলোতে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করছেন যাতে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন, আত্মসমর্পনের কোনো ঘটনা ঘটবে না বরং এখন ‘শক্তিমত্তা, প্রত্যয় ও জাতীয় সংহতি’ প্রদর্শনের সময় এসেছে। তিনি বলেন, সকল রক্তপাত ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার তালেবানকে বহন করতে হবে

কারা এই তালেবান ? কি তাদের ইতিহাস
মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চলজুড়ে তৎপরতা চালানো প্রধান জঙ্গি সংগঠন তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের কার্যত প্রধান ছিলেন তিনি। তাকে বলা হতো সরকারের সর্বোচ্চ পরিষদের প্রধান। তালেবান শাসিত ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানে আমির উল মুমেনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) বলে মানা হতো তাকে। পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাকে ও তার সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। মোল্লা ওমর প্রথম অস্ত্র ধরেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। নেক মোহাম্মদের নেতৃত্বে মুজাহেদিন গ্রুপ হরকাত-ই-ইনকিলাব-ই-ইসলাম এ যোগ দেন তিনি। সোভিয়েতদের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা নজিবুল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে চারবার আহত হন ওমর। সোভিয়েত বিরোধী আফগান যুদ্ধে পানজোয়াই জেলার সাংসারে এক সংঘর্ষের সময় তিনি এক চোখ হারান। অন্য এক সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে জালালাবাদ যুদ্ধে তিনি চোখ হারান। এরপর যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের সীমান্ত শহর কোয়েটায় একটি মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা করেন ওমর। তখন থেকে তিনি মোল্লা নামে পরিচিত। পরে তিনি করাচিতে বিনুরি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর সেখানেই প্রথমবারের মতো ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার, পরে ঘনিষ্টতা। বিখ্যাত মিশরীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব শেখ আব্দুল্লাহ আজ্জামের একজন বড় ভক্ত তিনি।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে দুর্বল নজিবুল্লাহ সরকারের পতন ঘটে ১৯৯২ সালে। এরপরেই আফগানিস্তান জুড়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা আর নৈরাজ্য। আফগান মুজাহিদিন বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। ওই সঙ্কট মুহুর্তে মোল্লা ওমর সিঙ্গেসরে ফিরে আসেন। প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসা ছাত্র নিয়ে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। এ দলটিই তালেবান (ছাত্র) নামে পরিচিত। সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করা হতো আফগানিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শরণার্থী শিবির থেকে। গৃহযুদ্ধের সময় ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলায় খুব শিগগির দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তালেবান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে কান্দাহার প্রদেশ এবং পরের বছর সেপ্টেম্বরে হেরাত দখল করে নেয় তালেবান। তালেবানের কর্মী-সমর্থক দিন দিন বাড়তে থাকে। আফগানিস্তানের অনেক এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সমর্থকরা ওমরকে আমির-উল-মুমেনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর ১৯৯৬ সালে তার হাতে কাবুলের পতন ঘটে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আরব দেশের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং পাকিস্তান তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।ওমরের একটি বিখ্যাত উক্তি এখানে উলে­খযোগ্য; তিনি বলতেন, ‘সব তালেবানই প্রগতিশীল। দুইটি বিষয়: চরমপন্থা এবং রক্ষণশীলতা। এ দুটি থেকে আমরা মুক্ত। এর ভিত্তিতে আমরা সবাই প্রগতিশীল, মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।’

১৯৯৬ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহান উদ্দিন রাব্বানিকে হটিয়ে সেখানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তালেবানের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া পাকিস্তানি উপজাতীয় নেতারা তখন আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে এসে কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ওয়াজিরিস্তান টিটিপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২০০১ সালে ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার পর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে আফগানিস্তান দখলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। মোল্লা ওমরের মাথার দাম এক কোটি ডলার ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন সেনাদের নাকের ডগায় অবস্থিত একটি বাড়িতে ১২ বছর অবস্থান করেন মোল্লা ওমর। মার্কিন বাহিনী দুবার তাঁর খুব কাছাকাছি এলেও তাঁকে খুঁজে পায়নি। একবার মার্কিন বাহিনী ঘাঁটির খুব কাছাকাছি এসে চলে যায়। আরেকবার মার্কিন সেনারা ওই বাড়িতেই তল্লাশি চালায়। কিন্তু তাঁরা মোল্লা ওমরের ঘরের গোপন কুঠুরি না খুলেই চলে যায়। ফলে, সে যাত্রাতেও ধরা পড়েন না ওমর। ২০০৪ সালে একবার স্থান পরিবর্তন করেন ওমর। তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দূরে নির্মাণকাজ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি তাঁর দ্বিতীয় বাড়িতে চলে যান। ধরা পড়ার ভয়ে কখনো ওই জায়গা থেকে সরে যেতে সাহস করেননি ওমর। খুব কম বাইরে যেতেন। মার্কিন বিমান বাড়ির ওপর দিয়ে গেলে তিনি টানেলে লুকিয়ে থাকতেন। ২০১৩ সালে পাকিস্তানে মৃত্যু অবধি সেখানেই ছিলেন তিনি।

মার্কিন চাপের মুখে ২০০৩-০৪ সালে ওয়াজিরিস্তানে টিটিপিকে দমনে অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এরপরই পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় টিটিপি। নিয়মতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে পাকিস্থানে ‘ইসলামি শাসন’ প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেয় তারা। ২০০৯ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় বায়তুল্লাহ মেহসুদ নিহত হলে টিটিপির নেতৃত্বে আসেন হাকিমুল্লাহ মেহসুদ। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে টিটিপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ১২০ জনকে হত্যা করে টিটিপি। একই বছরের নভেম্বরে মার্কিন ড্রোন হামলায় টিটিপি প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদ প্রাণ হারান বলে খবর রটে। তবে খবরটি ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেয় টিটিপি। তবে হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে ওই ঘটনার পর আর কোথাও দেখা যায়নি। এরপর থেকে মূলত মাওলানা ফয়জুল্লাহ নেতৃত্বে চলছে টিটিপি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র সৃষ্ঠি কট্টরপন্থী তালেবান জঙ্গিরা। ১৯৮০ সালের শুরুতে সোভিয়েত রাশিয়াকে রুখতে সিআইএ-ই তালেবানদের অস্ত্র সাহায্য দেয়। ১৯৮৭ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বছরে ৬৫ হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানরা যে সিআইএ’র সৃষ্টি তা স্বয়ং রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডন রোহরাবেচার বিভিন্ন সময় প্রকাশ করেছেন। যিনি একটা সময় এই তালেবান জঙ্গিদের সাথে সময় কাটিয়েছেন। এমনকি অস্ত্রধারী তালেবান জঙ্গিদের সাথে তার ছবি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে দেখতে পাওয়া যায়। এই রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান তার মুখেই স্বীকার করেছেন যে, ‘তালেবানরা সিআইএ কর্তৃক গঠিত এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহও করেছে সিআইএ।’ গত ২০০৯ সালের ৭ই অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন তালেবানরা এবং ওসামা বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অস্ত্র সাহায্য লাভ করত।

২০০১ সালের ৭ মার্চ ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘জঙ্গি সংগঠন তালেবানদের তৈরি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এই কট্টর মৌলবাদীদের আফগান ক্ষমতায় আনার জন্য ১৯৯৪ থেকে ৯৬ পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি।’ আরো উল্লেখ্য মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সাথে হোয়াইট হাউসে তালেবান নেতাদের গোপন বৈঠকের ছবি ও টেক্সাসে বুশের খামার বাড়িতে তালেবানদের বেড়াতে যাওয়ার ইতিহাস বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যা এখনও মুছে যায়নি।

সেই যা হোক। যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধরে আফগানিস্তানে তাদের রাজত্ব চালিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আফগানিস্তান সরকার নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছিল। তালেবান যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আফগানিস্তানের চর্তুদিকে থাকা য়ুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে নিহত হয় বহু তালেবান। আমেরিকান সৈন্যও কম মারা যায় নি। কিন্ত আমেরিকান সেনাদের পেছনে যে পাহাড় সমান ব্যয় হচ্ছে তা অঅর বহন করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া সেনাদের ফিরিয়ে নিতে অভ্যন্তরিন চাপও ছিল যথেষ্ট। কারন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তানে থেকেই বা কি করবে এমনতর প্রশ্ন উঠতে থাকে বারবার।

অবশেষে রণে ভঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রের

অবশেষে আফগানিস্থানে রণে ভঙ্গ দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের চূড়ান্ত ঘোষণা দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মুলত গত ৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার তিনি হোয়াইট হাউজে ঘোষণা দেন যে, “আফগানিস্তানে আমাদের সামরিক অভিযান ৩১শে আগস্ট শেষ হবে”। আর এর মাধ্যমে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়নের পর আফগানিস্থানে তালেবানের কাছে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে দেশটি থেকে নিরবে প্রস্থান করছে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সী ভবন হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্থানে ২০ বছরের দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের অবসানের সিদ্ধান্তের পক্ষে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, “স্থিতাবস্থা কোনও বিকল্প নয়”। ২০২০ সাল থেকে ভয়াবহ করোনা মহামারির ছোবলে মারাত্বকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে মার্কিন অর্থনীতি। এ থেকে যে কোনভাবেই মুক্তি পেতে মড়িয়া হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী অকার্যকর ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাইছে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন। এদিকে অনেকটাই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই মার্কিন প্রশাসনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করে যেতে হয়েছে আফগানিস্থানে তালেবানদের প্রতিহত করতে। যা ছিল একেবারেই ফলাফল শুন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্র।

তিনি আরো বলেন যে, “আফগানিস্থানে দীর্ঘ ২০ বছরে প্রায় ৩ হাজার আমেরিকানের মৃত্যু এবং প্রায় ১.০ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পর দুই দশক আগে যে নীতি নির্ধারণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র তাতে আর যুক্ত থাকতে পারে না। আমেরিকাকে এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা মহামারী মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করছে। তার সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র”।

এর আগে গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিসকে আফগানিস্তানের সর্বশেষ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানায় যে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আফগানিস্তান থেকে তাদের ৯০% সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং চলতি ২০২১ সালের আগস্টের শেষ নাগাদ আফগানিস্থান থেকে শতভাগ মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। তাছাড়া আফগানিস্থান থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর পথ অনুসরণ করে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো তাদের বেশিরভাগই সেনা নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।#

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.