--- বিজ্ঞাপন ---

শুন্য হাতে আলাদা করে দেয়া ধনী দেশ সিঙ্গাপুর

0

পৃথিবীতে এমন একটি দেশ রয়েছে যাকে কিনা ষাটের দশকে জোর করে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছিল। প্রথমে দেশটি বৃটিশ সম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে মালয়েশিয়ান ফেডারেশনে যোগ দেয়। তবে ১৯৬৫ সালে সেই দেশের রাজনীতিবিদসহ সকল স্তরের মানুষ স্বাধীন হওয়ার বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানালেও তাকে মালয়েশিয়া ফেডারেশন থেকে একেবারে শুন্য হাতে আলাদা করে দেয়া হয়। আর সেই দেশটি হচ্ছে সিঙ্গাপুর।

৭২৮.৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ছোট্ট দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৫৮ লক্ষ। সমুদ্রের নোনা জল এবং মাছ বাদে নেই তেমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ। এমনকি বর্তমানে নতুন করে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার মতো নেই এক একর জেয়গা। ১৯৬৫ সালে একেবারে ভগ্নদশা ও শুন্য অর্থনীতি নিয়ে স্বাধীন সিঙ্গাপুরের যাত্রা শুরু করে। তবে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ইউসুফ বিন ইসহাক অত্যন্ত সৎ ও দক্ষ শাসক হলেও সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক উত্থানের জনক হিসেবে লি কুয়ান ইউকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মুলত লি কুয়ান ইউ (Lee Kuan Yew) সিঙ্গাপুরকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেলের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেন। তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে দেশটিকে একেবারে উন্নত বিশ্বের দেশের কাতারে নিয়ে যান। বর্তমানে দেশটির সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন চাইনিজ গোষ্ঠীভুক্ত লি হেসেন লুং (Lee Hsien Loong) এবং প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন মালয় গোষ্ঠীভুক্ত একজন মুসলিম নারী হালিমা ইয়াকুব।

এক সময়ের সমুদ্রে মাছ আহরণ করে সিঙ্গাপুরের বেশির ভাগ মানুষ জীবন ধারণ করলেও বর্তমানে দেশটির সার্বিক অর্থনীতির আকার ও সক্ষমতা দেখলে যে কেউ চমকে যেতে পারে। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের নমিনাল জিডিপি ৩৮০ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৪,২১৭ ডলার। ছোট্ট এই দেশটির করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে মোট ৬২৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। যদিও দেশটি ২০১৯ সালে ৫৩৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করেছিল। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৪৬২.৩০ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভিত্তিতে যা কিনা বাংলাদেশের প্রায় ১০ গুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে দেশটির হাতে।

৩০০ থেকে ২৮০ খ্রিষ্টাপূর্বে গ্রীক সভত্যার সোনালী যুগে অসংখ্য নগর রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তবে বর্তমানে পৃথিবীতে একক কোন শক্তিশালী নগর রাষ্ট্রের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও সিঙ্গাপুর এক বিংশ শতাব্দীর আধুনিক যুগের নগর রাষ্ট্রের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে টিকে রয়েছে। এদিকে দেশটি অর্থনীতিতে ব্যাপক সাফল্য লাভ করলেও তার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর আধু্নিক শিক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য অনেক আগেই সারা বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর পর্যায়ে চলে গেছে।

হায়ার এডুকেশন রিলেটেড অর্গানাইজেশন ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবীর সেরা ২০০টি বিশ্ববিদ্যালইয়ের র‍্যাংকিং প্রকাশ করে। তাদের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক ওয়েব সাইট ইউনি র‍্যাংক ২০২১ এ বিশ্বের সেরা ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রাধান্য থাকলেও সেই তালিকায় কিন্তু সিঙ্গাপুরের ২টি বিশ্ববিদ্যালয় তার যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বের সেরা ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর রয়েছে ৯৬ তম স্থানে এবং নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ১৩৫ তম স্থানে রয়েছে।

এদিকে এশিয়া মহাদেশের সেরা ও বিশ্ব মানের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার ৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের নাম। দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও এর মান ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সারা বিশ্বব্যাপী। এমনকি আমাদের দেশের এলিট শ্রেণির নাগরিকদের একটি বড় অংশ ভারতের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের বেশকিছু নামকরা হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.