--- বিজ্ঞাপন ---

কি এই নেক্সড জেনারেশন মেইন ব্যাটল ট্যাংক ?

0

এক বিংশ শতাব্দীতে এসে যুদ্ধক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তির কমব্যাট ড্রোন এবং নেক্সড জেনারেশন এন্টি-ট্যাংক মিসাইল (এটিজিএম) সিস্টেমের দাপটে ট্যাংকের উপযোগিতা অনেকটাই হ্রাস পেলেও এর ব্যবহার এবং গ্রহণ যোগ্যতা এখনো একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। তবে ২০১০ সাল থেকে ব্যাপক গবেষণা, আধুনিকায়ন এবং উচ্চ প্রযুক্তির সমন্বয়ে আরো অত্যাধুনিক এবং শক্তিশালী চতুর্থ প্রজন্ম বা নেক্সড জেনারেশনের মেইন ব্যাটল ট্যাংক (এমবিটি) বেশকিছু দেশ সীমিত পরিসরে সার্ভিসে আনতে শুরু করেছে এবং কোন দেশ আবার উন্নয়নের চূড়ান্ত স্তরে পৌছে গেছে। তাছাড়া চতুর্থ প্রজন্মের বা নেক্সড জেনারেশনের ট্যাংক ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং তুরস্কের মতো দেশ কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক ডিজাইন ও তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে এশিয়ার এক ঘুমন্ত দানব জাপান। জাপান তার নতুন প্রজন্মের টাইপ-১০ সিরিজের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেইন ব্যাটল ট্যাংক (এমবিটি) সার্ভিসে এনেছে ২০১২ সালে। ৪০ টন ওজনের প্রতিটি টাইপ-১০ সিরিজের ট্যাংকের দাম প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ৪৪ ক্যালিবারের ১২০ এমএম স্মুথবোর মেইন ক্যানন সজ্জিত মোট প্রায় ১১০টি টাইপ-১০ নেক্সড জেনারেশন মেইন ব্যাটল ট্যাংক ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সার্ভিসে এনেছে জাপান।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সুপরিচিত থাকলেও বিশ্ব মানের ডিফেন্স সিস্টেম তৈরিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি বেশ সাফল্য লাভ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি চতুর্থ প্রজন্ম বা নেক্সড জেনারেশনের কে-২ ব্লাক প্যান্থার মেইন ব্যাটল ট্যাংক পর্যায়ক্রমে সার্ভিসে এনেছে। আসলে দক্ষিণ কোরিয়া কে-২ ব্লাক প্যান্থার মেইন ব্যাটল ট্যাংক ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ডিজাইন চূড়ান্ত করলেও প্রথম সার্ভিসে আনে ২০১৪ সালে। দক্ষিণ কোরিয়ার কে-২ ব্লাক প্যান্থার মেইন ব্যাটল ট্যাংকের প্রতি ইউনিট কস্ট বর্তমানে ১০-১২ মিলিয়ন ডলা্রের কাছাকাছি হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রটেম কোম্পানি ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত লট-১ ও লট-২ এর আওতায় মোট ২০০টি এই জাতীয় সুপার এডভান্স ট্যাংক তৈরি সম্পন্ন করেছে এবং নতুন করে লট-৩ তে আরো ৬০-১০০টি কে-২ ব্লাক প্যান্থার মেইন ব্যাটল ট্যাংক ২০২৫ সালের মধ্যে তৈরি করবে। ৫৫ টন ওজনের কে-২ ব্লাক প্যান্থার নেক্সড জেনারেশন মেইন ব্যাটল ট্যাংকে দক্ষিণ কোরিয়ার নিজস্ব প্রযুক্তির ১,৫০০ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অটো লোডিং টেকনোলজি সমৃদ্ধ এই অত্যাধুনিক ট্যাংকের মেইন গান হিসেবে একটি হুন্দাই ডাব্লিউআইএ সিএন-০৮ সিরিজের ১২০ এমএম স্মুথবোর ক্যানন সংযুক্ত করা হয়েছে (৪০ রাউণ্ড)। এর রেঞ্জ ৪৫০ কিলোমিটার এবং পার আওয়ার স্পিড ৭০ কিলোমিটার।

২০০৮ সালে দক্ষিন কোরিয়ার হুন্দাই রটেম তার কে-২ ব্লাক প্যান্থারের ট্র্যান্সমিশনসহ গুরত্বপূর্ণ প্রযুক্তি তুরস্কে সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন করেছিল। আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় তুরস্ক তার নতুন প্রজন্মের আলতাই মেইন ব্যাটল ট্যাংক তৈরি করছে। তাছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক বাজারে এডভান্স এই ট্যাংক রপ্তানির পথ উম্মোচন করে দিয়েছে। এখন দক্ষিণ করিয়ার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন যে কোন দেশই চতুর্থ প্রজন্মের কে-২ ব্লাক প্যান্থার মেইন ব্যাটল ট্যাংক ক্রয় বা সংগ্রহ করতে পারবে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকার সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অতি দরিদ্র কিম জন উনের দেশ উত্তর কোরিয়া কিন্তু তার নিজস্ব প্রযুক্তির ৫০ টন ওজনের এম-২০২০ সিরিজের নেক্সড জেনারেশনের মেইন ব্যাটল ট্যাংক নিয়ে গবেষনা করে যাচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯টি এই জাতীয় ১২৫ এমএম মেইন গান সজ্জিত ট্যাংকের প্রটোটাইপ কপি তৈরি করেছে। তবে এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে উত্তর কোরিয়া এখনো পর্যন্ত তেমন কোন তথ্য প্রকাশ করেনি।

বিশ্বের অন্যতম এবং প্রথম সারির সামরিক পরাশক্তিধর দেশ রাশিয়া তাদের নতুন প্রজন্মেরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির টি-১৪ আরমাটা মেইন ব্যাটল ট্যাংকের উতপাদন শুরু করে ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষামুলক মোট ২০টি সার্ভিসে এনেছে রাশিয়া। এর প্রতিটি ইউনিট কস্ট মাত্র ৩.৮-৪.০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটি। তবে রাশিয়া আগামী ২০২৩-২৫ সালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে নতুন প্রজন্মের মোট ১০০টি টি-১৪ আরমাটা মেইন ব্যাটল ট্যাংক সার্ভিসে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। রাশিয়ার তৈরি ৫৫ টন ওজনের টি-১৪ আরমাটা নেক্সড জেনারেশন মেইন ব্যাটল ট্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো একেবারে নতুন প্রযুক্তির মেইন গান। সম্পূর্ণ অটোলডিং সিস্টেমের পাশাপাশি এই ট্যাংকের মেইন গান হিসেবে অত্যাধুনিক ১২৫ এমএম ২এ৮২-১এম স্মুথবোর গান (৪৫ রাউণ্ড) ব্যবহার করে। তবে রাশিয়া ভবিষ্যতে এই ট্যাংকে মেইন গান হিসেবে অত্যন্ত শক্তিশালী ২এ৮৩ ১৫২ এমএম নতুন প্রজন্মের ক্যানন ব্যবহার করবে। যা এটিকে সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মেইন ব্যাটল ট্যাংকে পরিণত করবে। রাশিয়ার ভাষ্যমতে,  এই ট্যাংকে একটি হাইলী এডভান্স এ-৮৫-৩এ টার্বোচার্জ ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এর ম্যাক্সিমাম ক্রুইজিং রেঞ্জ ৫০০ কিলোমিটার এবং এটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে যেতে সক্ষম।

তুরস্ক তার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় তাদের নিজস্ব ডিজাইনের চতুর্থ প্রজন্মের আলটাই ট্যাংক তৈরির প্রজেক্ট হাতে নেয় ২০১০ সালে। তবে তুরস্ক ২০১৭ সালে একেবারে সীমিত পরিসরে তাদের আলটাই মেইন ব্যাটল ট্যাংকের পরীক্ষামুলক উতপাদন শুরু করলেও তুরস্ককে কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির জন্য অন্য কোন দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১০টি এই জাতীয় ট্যাংকের প্রটোটাইপ কপি তৈরি করতে সক্ষম হলেও এর ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। #

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.