--- বিজ্ঞাপন ---

ভয়ংকর সব অস্ত্র নির্মানে দেশগুলোর মাঝে চলছে প্রতিযোগিতা

0

তুরস্কের সাম্প্রতিক সময়ে তার নতুন প্রজন্মের টিএফ-এক্স স্টেলথ জেট ফাইটার প্রজেক্টে আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে পাকিস্তানকে যুক্ত করেছে। এখন থেকে তুরস্ক এবং পাকিস্থান যৌথভাবে টিএফ-এক্স প্রজেক্ট উন্নয়নে কাজ করবে। কিন্তু এখানে আমার মূল প্রশ্ন হলো তুরস্ক যেখানে একেবারে স্বাধীনভাবে একেবারেই নিজস্ব প্রযুক্তির এফ-১৬ এর কাছাকাছি বা সমজাতীয় মানের কোন যুদ্ধবিমান তৈরির যোগ্যতা রাখে না, সেখানে কিভাবে সরাসরি এক লাফে নতুন প্রজন্মের টিএফ-এক্স সুপার স্টেলথ জেট ফাইটার সার্ভিসে আনবে?

এখানে উল্লেখ যে, আমেরিকার লাইসেন্স নিয়ে তুরস্ক তার নিজ দেশেই এফ-১৬ ফ্যালকন যুদ্ধবিমান তৈরি বা এসেম্বলি করলেও এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন, রাডার এবং এভিয়নিক্স সিস্টেম, মিসাইল আমেরিকার লকহীড মার্টিনের কাছ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। আর তুরস্ক এখন যে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট “হুরজেট” তৈরি করছে তারও প্রযুক্তি কিন্তু অনেকটাই আমদানি নির্ভর এবং এটি এখনো পর্যন্ত এটি উন্নয়নের চূড়ান্ত স্তরে রয়েছে এবং এটি আজও সার্ভিসে প্রবেশ করেনি। অথচ বিশ্ব বাজারে বিক্রি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

অথচ এদিকে কিনা আমেরিকা এফ-১৬ এর মর্ডানাইজেশন কিটস এণ্ড ডিভাইস সরবরাহ বন্ধ করার কারণে তুরস্ক তার বিমান বাহিনীর পুরনো এফ-১৬সি/ডি ব্লক-৫০ জেট ফাইটারের আপগ্রেডেশন এণ্ড মর্ডানাইজেশনের চলমান প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থেকে আটকে রয়েছে।

তাই যুদ্ধবিমান ম্যানুফ্যাকচারিং এ অনেকটাই অভিজ্ঞতা বিহীন এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের টিএফ-এক্স ২০৩৫ সালের আগে আকাশে উড়তে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই তাদের প্রজেক্ট আজম নামের একটি ৫ম প্রজন্মের ফাইটার প্রজেক্টে কাজ করে গেলেও তা কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে মুসলিম বিশ্বের আরেক সুপার পাওয়ার ইরান প্রায় ২০ বছর আগে থেকেই তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির কাহার-৪২০ স্টিলথ জেট ফাইটার তৈরির নাম করে বিশ্ববাসীর হাসির খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছে। এক আজব ধরনের ও বিদঘুটে ডেমো আকাশযান বানিয়ে তাতে চীনের শিয়ান মেশিন লাগিয়ে কিংবা দূর থেকে রশি দিয়ে রানওয়েতে টেনে নিয়ে গিয়ে বিশ্বকে ঠিক কি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। এদিকে আকাশে ড্রোন উড়িয়ে তার ভিডিওকে আবার নিজের স্টিলথ জেট ফাইটার বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে ধরা খাওয়ার মতো হাস্যকর রেকর্ড গড়ে তুলতে ইরান।

মুসলিম বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং সক্ষমতার বাস্তব চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে । এদিকে জেএফ-১৭ লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটকে পাকিস্তানের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি যুদ্ধবিমান হিসেবে চালানো হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু কথা। পাকিস্তানের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন, রাডার, এভিয়নিক্স সিস্টেম, অস্ত্র,মিসাইল সবকিছুই দেখা যায় চীনের প্রযুক্তির তৈরি এবং চীন বা অন্য কোন দেশ থেকে আমদানি করে ইনস্টল করা হয়েছে।

ঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এর চাকাটিও হয়ত চীন থেকে আমদানি করে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই শুধু যুদ্ধবিমানের এয়ারফ্রেম, কিছু প্রযুক্তি, মিউনেশন সংযুক্ত করা এবং রং করা ছাড়া আর ঠিক কি কি নিজস্ব প্রযুক্তি পাকিস্তান ব্যবহার করে তা কিন্তু আমার পক্ষে কিন্তু বলা সম্ভব নয়।
অনুসন্ধান বলছে, এক বিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগে সাগর ও মহাসাগরের বুকে রাজত্ব করে যাচ্ছে নিউক্লিয়ার ও কনভেনশনাল পাওয়ারড বিভিন্ন ক্যাটাগরির সাবমেরিন। বর্তমানে সারা বিশ্বের ৪১টি দেশের নৌবাহিনীতে মোট প্রায় ৫১৩টি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে। আবার সংখ্যার বিচারে ৫৪% সাবমেরিন রয়েছে মাত্র ৫টি দেশের নৌবাহিনীর কাছে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইরান।

প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং মান যাই হোক না কেন সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাবমেরিন রয়েছে (পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভাল ফোর্স) চীনের নৌবাহিনীর বহরে। বর্তমানে চীনের নৌবাহিনীতে মোট ৭৯টি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে। যার পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে রয়েছে ৬৮টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন। তাছাড়া রাশিয়ার নৌবাহিনীতে ৬৪টি, উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে ৩৬টি এবং ইরানের নৌবাহিনীতে মোট ২৯টি সাবমেরিন রয়েছে।

তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর সাবমেরিনটি হচ্ছে সভিয়েত আমলে তৈরি বর্তমানে রাশিয়ার প্রজেক্ট ৯৪১ আকুলা ক্লাস সাবমেরিন (ন্যাটো রিপোর্টেড কোড নেম তাইফুন)। যার ওজন কিনা অবিশ্বস্যভাবে সাবমার্জড অবস্থায় ৪৮ হাজার টন এবং দৈর্ঘ্য ৫৭৪ ফুট।

বিশ্বের মোট ৪১টি দেশ সাবমেরিন ব্যবহার করলেও নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন ব্যবহার করে মাত্র ৬টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ভারত। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে সার্ভিসে থাকা শতভাগ সাবমেরিন হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাওয়ারড স্ট্যাটিজিক (এসএলবিএম) এবং এ্যাটাক (এসএসএন) সাবমেরিন।

উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে বর্তমানে মোট ৭৮টি অধিক বিভিন্ন সিরিজের অতি পুরনো সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে শতভাগ কমব্যাট অপারেশন রয়েছে মাত্র ৩৫-৩৬টি। আবার অধিকাংশ সাবমেরিনের প্রযুক্তি পঞ্চাশ কিংবা ষাট ও সত্তর দশকের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনী এখনো পর্যন্ত অতি পুরনো সাবমেরিনের বিশাল বহর সার্ভিসে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৯টি সাবমেরিন সার্ভিসে রয়েছে রেড জায়ান্ট চীনের নৌবাহিনীতে। পিপলস লিবারেশ আর্মির নেভাল ফোর্সের হাতে নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড চালিত ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন ৪টি, নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন ৬টি এবং বিভিন্ন সিরিজের অন্যান্য কনভেনশনাল পাওয়ারড বা ডিজেল ইলেকট্রিক ৬৯টি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।

তবে প্রকাশ থাকে ৮০ দশক থেকে ১২টি মিং ক্লাস সাবমেরিন সার্ভিসে আনলেও এর দূর্বল প্রযুক্তিগত সক্ষমতার জন্য চীন রাশিয়া থেকে ১২টি কিলোক্লাস ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন ক্রয় করে। তাছাড়া ২০০৩ সালে চীনের একটি মিং ক্লাস সাবমেরিন সাগরের বুকে ধ্বংস হয়ে ৭০ জন অফিসার নাবিক মৃত্যুবরণ করলে চীন মিং ক্লাসের সকল সাবমেরিনের কমব্যাট অপারেশন একেবারে সীমিত বা বন্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র মোট সাবমেরিনের সংখ্যা সারা বিশ্বকে বেশি করে দেখাতে এগুলো রিজার্ভে রয়েছে বলে প্রচার করে থাকে।

বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে মোট নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ৬৮টি সাবমেরিন রয়েছে। তার মধ্যে ৫২টি নিউক স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন) এবং ১৬টি নিউক এ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন)। তাছাড়া রাশিয়ার নৌবাহিনীতে রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী মোট ৬৪টি সাবমেরিন। যার মধ্যে ১২টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন), ১০টি নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসজিএন) এবং ১৪টি (এসএসএন) এবং ২১টি ডিজেল ইলেক্ট্রিক চালিত কনভেনশনাল সাবমেরিন।

ইরানের নৌবাহিতে রয়েছে মোট ২৯টি ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন। তবে প্রকাশ থাকে যে, সংখ্যার দিক দিয়ে ইরানের হাতে বড় আকারের মাত্র ৩টি কিলোক্লাস সাবমেরিন থাকলেও অবশিষ্ট ২৪-২৫টি সাবমেরিন হচ্ছে একেবারেই ছোট আকারের মিটগেট ক্লাস বা উত্তর কোরিয়ার সরবরাহকৃত প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ১১০-১২৫ টন ওজনের একেবারে ছোট আকারের গাধির ক্লাস সাবমেরিন। তবে একটি ৬০০ টন ওজনের একটি ফাতেহ ক্লাস কনভেনশনাল পাওয়ারড সাবমেরিন রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীতে রয়েছে ২২টি এবং জাপানের নৌবাহিনীতে ২০টি কনভেনশনাল পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন। তাছাড়া ভারতের ১৭টি (১টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড), তুরস্কের ১২টি এবং কলাম্বিয়ার নৌবাহিতে ১১টি করে কনভেনশনাল পাওয়ারড সাবমেরিন সার্ভিসে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীতে মোট ১১টি সাবমেরিন রয়েছে। যার মধ্যে ৮টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন) এবং ৪টি স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন)। ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে মোট সাবমেরিন রয়েছে ১০টি। যার মধ্যে ৬টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এ্যাটাক সাবমেরিন (এসএসএন) এবং ৪টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন)।

তাছাড়া গ্রীসের নৌবাহিনীতে ১১টি, পাকিস্তানের ৯টি, আলজেরিয়ার ৮টি, মিশরের ৮টি, ইতালির ৮টি, জার্মানীর ৬টি, নরওয়ের ৬টি, আস্ট্রেলিয়ার ৬টি, ভিয়েতনামের ৬টি এবং ব্রাজিলের নৌবাহিনীতে ৬টি করে কনভেনশনাল পাওয়ারড ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন রয়েছে।

ইসরাইলের নৌবাহিতে ৫টি, পেরুর ৫টি, ইন্দোনেশিয়ার ৫টি এবং সুইডেনের ৫টি করে সাবমেরিন রয়েছে। তাহাড়া চিলি, কানাডা, নেদারল্যাণ্ডস, তাইওয়ান, আজারবাইজান নৌবাহিনীর কাছে ৪টি করে ডিজেল ইলেক্ট্রিক বা কনভেনশনাল পাওয়ারড সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।

এদিকে ২টি করে কনভেনশনাল পাওয়ারড মধ্যম আকারের সাবমেরিন রয়েছে বাংলাদেশ, পোল্যাণ্ড, মিয়ানমার, ইকুয়েডর, পুর্তুগাল, মালয়েশিয়া, স্পেন, আর্জেন্টিনা এবং ভেনিজুয়েলার নৌবাহিনীতে। আর মিয়ানমার নৌবাহিনীতে ভারতের দেয়া একটি পুরনো কিলোক্লাস সাবমেরিন এবং চীনের উপহার দেয়া মিং ক্লাস টাইপ-০৩৫বি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.