--- বিজ্ঞাপন ---

বাবা হত্যার বিচার প্রতিষ্ঠায় তাবাসসুমের ১৬ বছরের যুদ্ধ

এ যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়

0

এ যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। কতটা দুঃখবোধ থাকলে, কতটা বিপর্যস্ত হলে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে একজন তরুনী তা বলাবাহুল্য। নিজে আইনজীবী হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পরিশ্রম করে নিজের বাবার হত্যার রায় প্রতিষ্ঠা করলেন। লড়াকু এ নারী আইনজীবীর নাম সেগুফতা তাবাসসুম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত অধ্যাপক তাহের এর কন্যা তিনি। তারঁ বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্ত বিচারের জন্য হন্য হয়ে ঘুরতে ঘুরতে নিজেই আইনজীবী হয়ে বাবা হত্যার বিচারের লড়াই শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি লড়াই শেষে মনে শান্তি পান আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম।

তিনি ছিলেন তার পিতার খুনের মামলার একজন আইনজীবী। দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি লড়াই শেষে গতকাল তিনি তার পিতা হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে। তার দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই স্বার্থক তাই রায় পরবর্তী তার মাকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে এসে তার কান্না লুকিয়ে রাখতে পারেননি। তার এই কান্নার মধ্যে যেমন আছে চাপা কষ্ট, তেমন আছে স্বপ্ন পূরণের স্বার্থকতার আনন্দ।

তাবাসসুমের বাবা তাহের আহমেদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তার বাবাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। বাবা হত্যার ঘটনায় প্রত্যাশিত বিচার নিশ্চিতের জন্য তিনি তার জীবনের লক্ষ্য পাল্টিয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের রায় সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে গেলে সেখানে যাতে বাবা হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় তার জন্য তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন শুরু করেন।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তাবাসসুমের বাবা হত্যার বিচারের রায় প্রদান করেছে। অধ্যাপক তাহের আহমেদকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরো দুই আসামিক যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ। অবাক করা ব্যাপার হলো অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার মূল আসামী তারই ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন যিনি কিনা একসময় অধ্যাপক তাহেরের ছাত্র ছিলেন।

শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির পথে বাধা হওয়ায় মহিউদ্দিন, তাহেরের বাসার কেয়ারটেকারকে সাথে নিয়ে তাহেরকে খুন করে তার লাশ শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে ফেলে দেয়।

বাবা হত্যার বিচারের সঠিক রায় পেতে কণ্যা তাবাসসুমের দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্লান্তিহীন অবিশ্বাস্য লড়াই বাংলাদেশের ইতিহাস অনন্য নজির হয়ে থাকবে। বাবার প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধতা থাকলে কিংবা বাবা হত্যার বিচার পেতে কতটুকু দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলে দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতা ডিঙিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা করে দেখালেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা তাবাসসুম। তাবাসসুমের এ সাহসী পদক্ষেপ সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে প্রশংসিত হয়েছে। প্রমান হয়েছে, মানুষের ইচ্ছে শক্তির কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.