--- বিজ্ঞাপন ---

দেশ ছাড়ছে মেধাবীরা

0

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার হার ও প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এখন প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এখানে শুধু যে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন বিষয়টি তা কিন্তু মোটেও নয়। আসলে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত জীবন যাপন, ভালো বেতনে চাকুরি এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন আমাদের দেশের মেধাবী তরুণেরা।

জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো’র দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২২ সালে ৪৯,১৫১ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্বের ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০২১ আমাদের দেশ থেকে ৪৪,২৪৪ জন, ২০২০ সালে ৫০,০৭৮ জন, ২০১৯ সালে ৫৭,৯২০ এবং ২০১৮ সালে ৬২,১৯১ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। যদিও চলতি ২০২৩ সালের হালনাগাদ তথ্যটি এখনো প্রকাশ করেনি ইউনেস্কো। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের দেশের স্বচ্ছল চাকরিজীবীদের মধ্যেও দেশ ছাড়ার হার ও প্রবণতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

হতাশাজনক হলেও সত্য যে, দেশের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে আসার হার সাম্প্রতিক সময়ে কিন্তু অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া উন্নত দেশে শিক্ষা অর্জন করে দেশে ফিরে এসে তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন কিংবা সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অংশগ্রহণ তেমন একটা চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে এটা ঠিক যে, বিদেশে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে অনেকেই সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজেই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তবে সে হার কিন্তু অতি নগ্যনই বলা চলে।

আবার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চ স্তরের স্টাডি করতে যাওয়া তরুনের অধিকাংশ সেদেশে বৈধ বা অবৈধ যে ভাবেই হোক না কেন সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করাটাই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দেখা দিয়েছে। এখানে স্টাডির যে বিষয়টি বার বার বলা হচ্ছে তা আসলে সে দেশে বসবাসের একটি প্রাথমিক ধাপ বলা চলে। আবার অনেকেই দেশে ফিরে আসলেও তাদের থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশ সেভাবে কিন্তু উপকৃত হচ্ছে না। এতে করে মূল যে সমস্যাটা হচ্ছে তা হলো, দেশে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বড় ধরণের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে আমাদের দেশে।

অথচ সাধারণত চীনের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ইউরোপ বা আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য স্টাডি করতে গেলে তার এক সময় নিজ দেশে ফিরে এসে তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগিয়ে দেশের শিল্প বিপ্লব ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বড় ধরণের অবদান রাখছেন। আর বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় চীন ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেছে তাদের মেধার সঠিক ব্যবহারের জন্য।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গমনকারী মেধাবীর অনেকেই উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বড় অংকের স্কলারশিপ পেলেও তার হার কিন্তু খুবই কম হয়ে থাকে। আর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে নিজ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডলারে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। এতে করে বর্তমানে আমাদের দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে তাদের পেছনে।

মনে করা হয় বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি পরিমাণ অর্থ সরাসরি ব্যয় হয়ে যাচ্ছে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের পেছনে। যদিও এই তথ্যটি যৌক্তিকভাবে অনেকটাই কম বা বেশি হতে পারে। তবে ব্যয়ের এই তথ্যটি একেবারে যে ভূল তা কিন্তু বলার কোন সুযোগ নেই। আবার এই ব্যয়ের পরিমাণটি হয়ত এক বিলিয়ন ডলারের অধিক হলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

অথচ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গমনকারী আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মূল যে চাওয়াটা তা কিন্তু সেভাবে আমাদের দেশ পাচ্ছে বলে মনে হয় না। জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবার উপরে রয়েছে ভারত এবং তারপর কিন্তু পাকিস্তান। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের অর্জন তার আরও অনেক নিচেই রয়ে গেছে। আর তাই প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমাদের দেশের সম্মানিত মেধাবী তরুণের কাছে আরো বেশি কিছু আমরা প্রত্যাশা করি।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.