--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়ার কি এই শক্তিশালী শর্ট রেঞ্জের ইস্কেন্দার-এম ট্যাক্টিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান #

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বেশ কিছু নতুন নতুন নামের অস্ত্রের কথা বিশ্ববাসী জানতে পারছে। আগে কখনও শুনা যায়নি এমন কিছু অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে পরিচিত হচ্ছে অনেক দেশ। রাশিয়া এরই মধ্যে অনেক অস্ত্রের প্রয়োগ করেও ফেলেছে। ইউক্রেনের পর এবার ফিনল্যান্ডকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে রাশিয়া। ফিনল্যান্ডকে অনেকটা ভয়ের উপর রেখেছে রাশিয়ার পুতিন।

রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের সীমান্তের পাশাপাশি ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছাকাছি অত্যন্ত শক্তিশালী শর্ট রেঞ্জের ইস্কেন্দার-এম ট্যাক্টিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে। যা কিনা কনভেনশনাল ওয়ারহেডের পাশাপাশি ভয়ঙ্কর নিউক্লিয়ার ওভারহেড ব্যবহার করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত রাশিয়া বেশ কয়েকটি ইস্কেন্দার-এম ট্যাক্টিক্যাল মিসাইল দিয়ে কিয়েভের অভ্যন্তরে ভয়াবহ হামলা চালালেও বেশ কয়েকটি মিসাইল কিন্তু অবিস্ফোরিত অবস্থায় ইউক্রেনে গিয়ে পড়েছে।

মুলত ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর অনেকটা আগেই পূর্ব ইউরোপ সংলগ্ন সীমান্তে অজানা সংখ্যক শর্ট রেঞ্জের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল ট্যাক্টিক্যাল ৯কে৭২০ ইস্কেন্দার (এসএস-২৬ স্টোন) ব্যালেস্টিক মিসাইল মোতায়েন করে রাশিয়া। তবে তা কোথায় এবং কোন সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে তা স্পর্ষ্ট করে প্রকাশ করেনি। ইস্কেন্দার মিসাইল মোতায়েন করা নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর তরফে প্রবল আপত্তি জানানো হলেও তাতে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন।

কনভেনশনাল এণ্ড নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল ইস্কেন্দার ব্যালেস্টিক মিসাইল হচ্ছে রাশিয়ার তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী সর্ট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল। যার ন্যাটো রিপোর্টেড কোড নেম এসএস-২৬ স্টোন। ১৯৮৮ সালে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করলেও ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে এই প্রজেক্ট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে রাশিয়া অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রথম ৯কে৭২০ ইস্কেন্দার ব্যালেস্টিক মিসাইলের পরীক্ষামূলক সফল লাউঞ্জিং সম্পন্ন করে। ব্যাপক গবেষণা ও সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে ইস্কেন্দার ট্যাক্টিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল প্রথম বারের মতো ২০০৬ সালে রাশিয়ার গ্রাউন্ড ফোর্সের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনির হাতে ২ থেকে ৩ ব্যাটলিয়ন এই জাতীয় মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করা হয় এবং এজন্য নতুন একটি ব্রিগেট সৃষ্টি করে রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে মোট আনুমানিক ১৬০ ইউনিট বিভিন্ন সিরিজের ইস্কেন্দার মিসাইলের বিশাল মজুত রয়েছে। যা নিশ্চিতভাবে অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি বড় ধরণের বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশাঙ্কা করা হয়।

ইস্কেন্দার ব্যালেস্টিক মিসাইল সিস্টেম আসলে একটি শর্ট রেঞ্জ মোবাইল মিসাইল লাউঞ্জিং সিস্টেম। যাতে দুটি ৯কে৭২০ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র সংযুক্ত করা থাকে এবং প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র সিঙ্গেল স্টেজ সলিড প্রপোলেন্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ৪৩০০ কেজি ওজনের রাশিয়া ইস্কেন্দার ব্যালেস্টিক মিসাইলের দুটি ভার্সন উৎপাদন করে। একটি হচ্ছে ইস্কেন্দার-এম যা রাশিয়ার নিজস্ব সেনাবাহিনীর কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ ট্যাক্টিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। যার রেঞ্জ ৫০ কিলোমিটার থেকে ৫০০ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৪৮০ কেজি পর্যন্ত নিউক্লিয়ার এণ্ড কনভেনশনাল উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। ৩,৮০০ কেজি ওজনের এই মিসাইলের দৈর্ঘ্য ৭.৩ মিটার, ডায়ামিটার ০.৯২ মিটার। এটি তার টার্গেটের ৫ থেকে ৭ মিটারের মধ্যে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ওয়ারহেড হীট করতে সক্ষম বলে জানিয়েছে রাশিয়া।

ইস্কেন্দার-ই মিসাইল সিস্টেম হচ্ছে এর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি ভার্সন। যা রাশিয়ার ব্যবহৃত ইস্কেন্দার-এম সিরিজের মিসাইল থেকে অনেকটাই আলাদ করে ডিজাইন করেছে রাশিয়া। এক্সপোর্ট ভার্সনের এস্কেন্দার-ই সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইলে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ইনস্টল করা যায় না এবং এর সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২৮০ কিলোমিটার। এটিকে একটি ৪০০ কেজি ওজনের কনভেনশনাল পর্যন্ত প্রচলিত ওয়ারহেড (হাই এক্সপ্লুসিভ ফ্রেগমেন্টেশন) বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে।

তবে উভয় ভার্সনের ইস্কেন্দার সর্ট রেঞ্জ ট্যাকটিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের গতি হাইপারসনিক অর্থ্যাৎ সর্বোচ্চ ৬.৭ ম্যাক গতিতে নিদিষ্ট দূরত্বে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভূলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এর আগে রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারে সিরিয়ার কাছে ২৬টি ইউনিট ইস্কেন্দার-ই এক্সপোর্ট ভার্সন সরবরাহ করে বলে জানা গিয়েছে। রাশিয়া ছাড়াও এই ব্যালেস্টিক মিসাইলের এক্সপোর্ট ভার্সন সিরিয়া ২৬ ইউনিট, আলজেরিয়া ৪ রেজিমেন্ট (৪৮টি লাউঞ্চার সহ) এবং আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীতে ২৫ ইউনিট ইস্কেন্দার-ই সিরিজের ট্যাক্টিক্যাল শর্ট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল অপারেশনাল রয়েছে।

তিন জন ক্রু দ্বারা পরিচালিত ইস্কেন্দার একটি মোবাইল লাউঞ্জার বেসড ট্যাক্টিক্যাল মিসাইল সিস্টেম। এটি একটি ৫০০ হর্স ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইএএমজেট-৮৪৬ ডিজেল ইঞ্জিন চালিত হেভি সামরিক যানের মাধ্যমে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এর অপারেশন রেঞ্জ সর্বোচ্চ ১০০০ কিলোমিটার। ইস্কেন্দার-এম চলন্ত অবস্থায় মাত্র ১৬ মিনিটের মধ্যে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র লাউঞ্জিং করতে সক্ষম। আবার সম্পুর্ন তৈরি অবস্থায় ইস্কেন্দার-এম মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরবর্তী এক মিনিটের মধ্যে অপর ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁত ভাবে ফায়ার করতে সক্ষম। এটিকে কিন্তু এএন-১২৪ সামরিক পরিবহণ বিমানে করেও একে যে কোন স্থানে খুব সহজেই মোতায়েন করা সম্ভব।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.