--- বিজ্ঞাপন ---

কতদূর যাবে চীন?

0

চীন এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০.৫ শতাংশ বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইতিবাচকভাবে চীনে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তাতে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যতের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখা যায়। চীনের নিংশিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চং ওয়েইতে, মার্কিন পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ক্লাউড টেকনোলজি তাদের সহযোগি প্রকল্প বাড়াতে যাচ্ছে। এ কোম্পানির কর্মকর্তা জানান, নিংশিয়ার ভৌগলিক অবস্থান, ও অবহাওয়া তথ্য কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনেক উপযুক্ত।

এ বছর থেকে চীন বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপাত্ত অনুসারে, এ বছরের প্রথম চার মাসে চীনে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৭৮.৬ বিলিয়ন ইউয়ান, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০.৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তি খাতে বিদেশি পুঁজির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫.৬ শতাংশ বেশি ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সু ইউ টিং জানান, এ বছরের প্রথম চার মাসে চীনে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বড় প্রকল্পের পরিমাণ নতুন করে ১৮৫টি বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, বহুজাতিক কর্পোরেশন চীনে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তাতে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যতের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্পোরেশের গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান চাং চিয়ান পিং জানান, মহামারী দেখা দেয়ার পর সরবরাহ চেইন ও শিল্প চেইনের স্থিতিশিলতা নিশ্চিত করার জন্য চীন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাতে বিদেশি পুঁজি শিল্প্রতিষ্ঠান চীনে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের খাতে তাদের সংকল্প আরো বেশি দৃঢ় করেছে। তিনি বলেন, গত দু বছরে আমাদের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ও মুক্ত বাণিজ্য বন্দর নির্মাণে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো বেশি সুযোগসুবিধা বয়ে এনেছে। সংশ্লিষ্ট নীতিও বাস্তবায়িত হয়েছে। তাতে চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশের উপর বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মূল্যায়ন বয়ে এনেছে। মহামারী এখনো চলছে। এ বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিদেশি পুঁজি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্বেগের জবাবে চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাতে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের স্থিতিশিল উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র সু ইউ থিং বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বৈশ্বিক শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের জন্য করোনা মহামারী চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। চীনের অর্থনীতি বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে প্রাণশক্তি প্রদান করবে। তিনি বলেন, “চীনের অর্থনীতির পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে তার সুষ্ঠু অবস্থা পরিবর্তন হবে না। চীনের অর্থনীতি বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে শক্তিশালি প্রাণশক্তি প্রদান করবে। উন্মুক্ত চীনের বড় বাজার চীনে বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আরো বেশি সুযোগসুবিধা প্রদান করবে। আমরা উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করব, বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের সেবা ব্যবস্থা আরো উন্নত করব, বিদেশি পুঁজি শিল্প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো বেশি উন্নয়নের সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করব।”

মূলত গত ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী রেড জায়ান্ট চীনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদার কর্মীর সংখ্যা ২০ কোটির সীমাকে অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে চীনে উচ্চ সুদক্ষ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ মিলিয়নের কাছাকাছি। চীনে সার্বিকভাবে বিভিন্ন খাতে মোট কর্মরত মানুষের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৬%। যা কিনা শতকরার হিসেবে বিশ্বের যে কোন দেশের চাইতে অনেক বেশি। ২০২০ সালে জাতীয় পদক পাওয়া প্রথম লাইনের কর্মী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিবিদদের অনুপাত ছিল ৭১.১%।

বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা এবং তৈরিতে আমেরিকার পাশাপাশি চীন ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। তাছাড়া চীনের শি জিং পিং সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে দেশটি আজ প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উচ্চশিখরে উঠে এসেছে।

আবার মহাকাশ গবেষণায় চীন তার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে চীন তাদের একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তিয়াংগন স্পেস স্টেশন উন্মোচন করে বিশ্বের বুকে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে চীনের গবেষণামুলক মহাকাশ স্টেশনে স্থায়ীভাবে ৩ জন এবং স্বল্প সময়ের জন্য ৬ জন মহাকাশচারী বা ক্রু অবস্থান করতে পারবেন। চলতি ২০২২ সালের শেষের দিকে কাঠামোগতভাবে এটি সম্পূর্ণভাবে গবেষণার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী চীন।

এদিকে অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে বিশ্বের প্রথম সারির অধিকাংশ দেশকে পিছনে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা এবং করোনা অতিমারির মধ্যেও ২০২২ সালের এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩,২০০ বিলিয়ন ডলার এবং সোনার রিজার্ভ ছিল প্রায় ২ হাজার টন। যা কিনা একক কোন দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

তাছাড়া চীনের বৈদেশিক রপ্তানির পরিমাণ ৩.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩,৩৬০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১৮ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪১৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে চীনের জিডিপির আকার ছিল ১৫.৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সাল শেষ নাগাদ ১৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী দেশটি। যদিও ২৩.০ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে আমেরিকা বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকলেও তাদের শুধু বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ প্রায় ৮.০০ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করেছে। যা কিনা দেশটিকে একক বৃহত্তম ঋনগ্রস্থ দেশের পরিণত করেছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.