--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠছে জাপান

0

গত ২১শে আগস্ট রবিবার জাপানের ইয়োমিউরি নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়া এবং চীনের ক্রমোবর্ধমান সামরিক হুমকী ও আগ্রাসন মোকাবেলায় পাল্টা আক্রমণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জাপান ১ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ মিসাইল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুলত মার্কিন বাইডেন প্রশাসনের গ্রীন সিগনাল পেয়ে অনেক আগে থেকেই জাপান তার নিজস্ব প্রযুক্তির মিসাইলের রেঞ্জ ১০০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কিলোমিটারের ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের মিসাইল ডিজাইন ও তৈরি করছে। তাছাড়া বর্তমানে চীনকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং নতুন প্রজন্মের টাইপ-১০ সিরিজের মেইন ব্যাটল ট্যাংক সার্ভিসে এনেছে ২০১২ সালেই।

আসলে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু স্থানে অনেক আগে থেকেই ১০০ কিলোমিটার রেঞ্জের মিসাইল মোতায়েন করা ছিল। বর্তমানে সেসব স্থানে পর্যায়ক্রমে নতুন করে এক হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির ক্রুজ মিসাইল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নানসে দ্বীপপুঞ্জের আশপাশ জুড়ে মোতায়েন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। আর আমেরিকার হাত ধরে হয়ত নতুন অস্ত্র প্রকাশ্যে এনে জাগ্রত হতে যাচ্ছে বিশ্বের আরেক ‘ঘুমন্ত দানব’ জাপান। তবে বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, এক বিংশ শতাব্দীর এই ‘ঘুমন্ত দানব’ জাপানকে অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চীনের ফাঁকা সামরিক হুমকী ও পেশিশক্তি প্রদর্শন পরোক্ষভাবে হলেও দায়ী করা চলে।

জাপানকে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শান্তিপ্রিয়, প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে জাপানের অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য কিন্তু মোটেও শান্তিপ্রিয় বা মসৃণ ছিল না। গত বিংশ শতাব্দীর ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের আগ পর্যন্ত জাপানিজরা খুবই উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং অত্যন্ত যুদ্ধপ্রিয় একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চায়না থেকে বার্মা সীমান্ত পর্যন্ত সুবিশাল এলাকা ধ্বংস করে এবং অস্ত্রের মুখে দখল করে নেয়। আর জাপান আক্রমণ প্রতিহত করতেই মুলত আমাদের চট্টগ্রামের ভিতর দিয়ে তৎকালীন বৃটিশ সরকার আরাকান রোড তৈরি করে।

জাপানিজদের দীর্ঘ মেয়াদী ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসন, হত্যা, লুন্ঠন এবং অত্যন্ত নৃশংসতার প্রমাণ রেখে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। মনে করা হয় সুবিশাল চায়না, কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ সমগ্র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি সাধারণ মানুষ হত্যা করে এবং লক্ষ লক্ষ নারীদের ধর্ষণ ও কৃতদাস বানিয়ে এক কলঙ্কজনক অতীত ইতিহাস সৃষ্টি করে রেখেছে জাপানের সামরিক বাহিনী। তাছাড়া মালয়, ইন্দো-চায়না উপকূলে মুসলিম সালতানাত এলাকাগুলোতে জাপান ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালায়। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে কোন কারণ ছাড়াই।

জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে চায়নার উপর নানকিং সহ যেসব গণহত্যা চালিয়েছে তা ইতিহাসে জাপানের নৃশংস বর্বরতার প্রমাণ দেয়। বিশেষ করে আরাকান রাজ্যে জাপানের সেনাবাহিনীর সহায়তায় উগ্র রাখাইনরা মাত্র ১৯ দিনে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করে। অতীতে এরা এতটাই ধর্ষণ প্রিয় জাতি ছিল যে, এদের রেখে যাওয়া তথাকথিত কমফোর্ট উইমেন বা ধর্ষিতা কোরিয়ান নারীর সংখ্যা ঠিক এত বছর পরেও কয়েক লক্ষ হতে পারে। জাপানের সেনাবাহিনী আবার চায়নিজ, কোরিয়ানদের উপর বিভিন্ন ধরণের ভয়ঙ্কর জীবাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতো। যা কিনা ‘ডক্টর অব ডেথ’ নামে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি হিসেবে ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক ৭৭ বছর পরেও আজো জাপান উন্নত ও সুশৃঙ্খল জাতির মুখোশের আড়ালে উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন টিকে রয়েছে তাদের শিন্টোধর্মীয় অতি ভয়ঙ্কর কিছু অনুশাসনকে কেন্দ্র করে। এমনও কিছু শোনা যায় যে, জাপানের সেনারা চায়নিজ ও কোরিয়ানদের মারার প্রতিযোগিতা করতো। দিনশেষে গুনতো কে কয়জন চায়নিজকে মারতে পেরেছে। যদি কোন সৈনিক আশানুরূপ চায়নিজ নাগরিক হত্যা করতে না পারে, তবে তাদের ক্যাপ্টেন নিজেই সেই সেনাকে হত্যা করত। তবে অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই সময়ে যে চাইনিজ নাগরিককে হত্যা করা হতো, সেই হতভাগ্য চাইনিজকে দিয়েই তার নিজের কবর খুড়তে বাধ্য করত জাপানের সেনারা। যা হোক খুব অল্প সময়ে এতটা ভয়ানক এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের ইতিহাস এক চেঙ্গিস খান, সভিয়েত এবং জাপানিজরা ছাড়া আর কোন জাতির মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

বর্তমানে জাপানের সরকার চীনের সামরিক হুমকী প্রতিহত করার নামে আমেরিকার ইশারায় খুবই দ্রুত গতিতে জাপানিজ সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। ২০২২ সালে জাপান তার সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। যা কিনা ২০১৯ সালে ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে জাপান যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের কাছ থেকে মোট ১৪২টি নতুন প্রজন্মের এফ-৩৫এ/বি লাইটনিং স্টেলথ জেট ফাইটার ক্রয়ের বিষয়টি চীনের জন্য এক চরম অশুভ সংকেত বলা চলে। ভবিষ্যতে ১০০টি এফ-৩৫বি সিরিজের সর্ট টেক অফ ভার্টিকেল লিফটিং জেট ফাইটার বহনের জন্য জাপানিজ মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের বেশ কিছু বড় আকারের যুদ্ধ জাহাজকে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক উচ্চ প্রযুক্তির সমন্বয়ে হাইলী মডিফাইড করে মাঝারী আকারের এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ারে রূপান্তরের কাজ শেষ করেছে। তবে জাপানের দ্রুত গতিতে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরির পদক্ষেপেকে “জাপানকে আগ্রাসী সামরিক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করার জন্য দেশকে চালিত করবে” বলে ২০১৯ সালে প্রবল আশাঙ্খা প্রকাশ করেছিল চীন।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.