--- বিজ্ঞাপন ---

ইতিহাসের পালা বদল??

0

কাজী ফেরদৌস#
পর্তুগিজ আর ডাচ ব্যবসায়ীরা উত্তর আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের ধরে নিয়ে আমেরিকায় দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত।আমেরিকার নুতন আবিস্কৃত ভূমি আবাদ করতে শ্রমিকের প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন মেটাতে অমানবিক দাস ব্যবসার জন্ম যার হৃদয় বিদারক বর্ননা পাওয়া যায় আলেক্সহ্যালির দ্যা রুটস বইতে। অবশ্য পৃথিবীতে দাস ব্যবসা অনেক আদিম একটা ব্যবসা।বলা যায় মানব সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল দাস প্রথার উপর ভিত্তি করে। গ্রীক সভ্যতা রোমান সভ্যতা বা তারো আগের সুমেরীয় বা ব্যাবিলেনীয় বা মিসরীয় সভ্যতা সব গুলো ছিল দাস প্রথা ভিত্তিক। এই প্রথার বিলোপ করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হলো ইসলাম ধর্ম। পুরোপুরি নিষিদ্ধ না করলে ও এটাকে সমর্থন করে নি ইসলাম। এবং দাস মুক্তি কে উৎসাহিত করেছেন এবং দাস দাসীর সাথে মানবিক আচরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে ইসলাম ধর্মে। ফলে ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাসপ্রথা বলতে গেলে প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু উমাইয়া বা আব্বাসী খেলাফতের যুগে সেটা আবার জেঁকে বসেছিল।আসলে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত গড়ে উঠেছিল দাস প্রথার উপর ভিত্তি করে। সুতরাং এটার মূলোৎপাটন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি আধুনিক রেনেসাঁস পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত।

তবে আমেরিকার নিউ কলোনিস্টরা ও দাস প্রথার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কারণ বিশাল আমেরিকার ভূ-খণ্ড আবাদ করতে শ্রমিক প্রয়োজন ছিল যা তাদের ছিল না । তাই তারা আফ্রিকার কালো মানুষদের বেছে নেয় দাস হিসেবে। কারণ হলো তাদের দেহগত ও জিন গত বৈশিষ্ট্য। তারা অল্প খেয়ে বা না খেয়ে অধিক পরিশ্রম করতে পারতো। উত্তর আমেরিকার বিশাল বিশাল কৃষি খামার গুলো গড়ে উঠেছিল এসব দাস শ্রমিকদের ঘাম ঝরা অমানবিক শ্রমের বিনিময়ে যার মর্মন্তুদ বর্ননা পাওয়া যায় Harrier Beecher Stowe এর বই Uncle Tom’s Cabin এর পাতায় পাতায়।
কিন্তু ১৭৭৬ সালে আমেরিকা বৃটিশ সাসন থেকে মুক্ত হলে এবং একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্হা প্রবর্তন হলে ক্রমশ দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠে। এতে আমেরিকার উত্তর আর দক্ষিণ অংশের সাথে মতবিরোধ দেখা দেয়। উত্তরের প্রদেশ গুলো ছিল কৃষি অর্থনীতি ভিত্তিক যেটা ছিল দাস শ্রমিক নির্ভর। আর দক্ষিণ ছিল শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতির অঞ্চল। তারা ছিল দাস প্রথা বিরোধী। এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে শুরু হয় আমেরিকার গৃহযুদ্ধ। তখন আমেরিকার প্রসিডেন্ট ছিলেন দাসপ্রথার বিরোধী মহান রাষ্ট্র নায়ক আব্রাহাম লিংকন। যুদ্ধে আব্রাহাম লিংকন এর দাসপ্রথার বিরোধীরা জয় লাভ করে। ১৮৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় দাস প্রথা বিলুপ্ত করে আইন পাশ করে। তবে দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও সাদা আর কালো মানুষের প্রভেদ ঘুঁছেনি মোটেও বরং কর্ম ও রুটি রোজির নিশ্চয়তা হারিয়ে আরো দুরবস্থায় পতিত হয় আমেরিকার কালো মানুষ গুলো । কালো মানুষের সম অধিকার ছিল না আমেরিকায়। তারা ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিল। তারা সাদা মানুষের সাথে পাশাপাশি বাস ট্রেনে চলাচল করতে পারতো না।সাদা মানুষের সাথে পাশাপাশি একই স্কুল কলেজে লেখা পড়া করতে পারতো না।এমনকি পাব্লিক প্লেস ও রাস্তা ঘাটে ও চলাফেরা করতে হতো সাদা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে। শিক্ষা দিক্ষায় ও অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর কালো মানুষ গুলো দাসত্ব মুক্ত হলেও সামাজিক রাজনৈতিক সৃঙ্খলে ছিল বন্দী। তাদের জীবন ছিল মানবেতর। এরই মধ্যে গড়ে উঠে সিভিল রাইট মুভমেন্ট। নেতৃত্বদেন একজন মহান কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং । আন্দোলন গড়ে তোলেন ম্যালকম এক্স ও এলিজা মোহাম্মদের এর নেশনস অব ইসলাম সংগঠন ও। ম্যালকম এক্স ছিলেন কিছু টা চরম পন্থী । তিনি শেতাঙ্গদের সাথে কোন আপোষ করার চেয়ে মৃত্যু কে শ্রেয় মনে করতেন। আমেরিকার নীতিনির্ধারকদের টনক নড়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত অনেক কাটখড় পুড়িয়ে অবশেষে ১৯৬৩ সালে লিংকনের মতো আর একজন মানবিক রাষ্ট্রনায়ক প্রসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সময় সিভিল রাইট বিল প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপন হয় এবং পরের বছর ১৯৬৪ সালে কেনেডির মৃত্যুর পর বিলটি সংসদে পাস হয় এবং নিশ্চিত হয় কালো মানুষের সম অধিকার। তবে আব্রাহাম লিংকন এবং জন এফ কেনেডি দুজনকেই ঘাতকের বুলেটে প্রান দিতে হয়। যারা দুজন মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছিল তারা ছিল কুখ্যাত KU KLUX KLAN সংক্ষেপে kkk গ্রুপের সদস্য। তারা শেতাঙ্গ স্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী একটি টেরোরিস্ট সংগঠন ।এখনো আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ ঐ শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্বের বিশ্বাসী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।
তবে সময় বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। আমেরিকানরা আর শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্ব ধরে রাখতে পারছে কি? যেই কলো আফ্রিকানদের তারা মানুষ মনে করতো না শেষ পর্যন্ত তাদের একজন প্রতিনিধি কালো আফ্রিকার আদিবাসী একজন বারাক ওবামা কে দু-দুবার আমেরিকার প্রসিডেন্ট মানতে হয়েছিল। কন্ডোলিৎসা রাইস কে বানাতে হয়েছিল নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং শেষ বার ২০২০ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস কে করতে হলো ভাইস প্রেসিডেন্ট। শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্বের বিশ্বাসীরা প্রানপন চেষ্টা করে ছিলেন বর্ণবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্প কে নির্বাচনে ছলেবলে কৌশলে জিতিয়ে আনতে। কিন্তু সফল হয়নি। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর রিপাবলিকান সমর্থকরা যে আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে সেটা বন্ধ না হলে আমেরিকার গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এমনকি অস্তিত্ব ও হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিজ্ঞ আমেরিকানরা।

পৃথিবী যে ক্রমে বদলে যাচ্ছে এবং অনেক টা গেছে এটা কি মার্কিনীরা বুঝতে মনে হয় এখনো অক্ষম?
ওদিকে আমেরিকার আর এক দোসর বৃটেনের অবস্থা ও শোচনীয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকা কে নগ্ন ভাবে সমর্থন করতে গিয়ে এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। একের পর এক প্রধানমন্ত্রী আসে আর যায় কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক কে বেছে নিতে হলো প্রধানমন্রী হিসেবে। একদা এই বৃটিশ জাতি দোর্দন্ডপ্রতাপে ভারত শাসন করে ছিল প্রায় দুশ বছর। তারা ভারতের জনগণকে মনে করতো সাব হিউম্যান হিসেবে। যাযাবর এর উপন্যাস দৃষ্টিপাতে বলেছেন ইউরোপীয়রা তাদের স্বগোত্রীয় মানুষের সামনে যে সভ্য আচরণ করতো ভারতীয় নিম্ন শ্রেণির মানুষের সামনে তারা সেই মূল্যবোধ প্রদর্শন করতোনা। নারী পুরুষ প্রকাশ্যে ভারতীয়দের সামনে বেলেল্লাপনা করতে মোটেই লজ্জা বোধ করতো না। কারণ তারা তাদের অধীনস্থ নিম্ন শ্রেণির ভারতীয়দের ঠিক মানুষ মনে করতো না। তাদের হাতি ঘোড়া কুকুর বিড়ালের সমগোত্রীয় কোন জীব মনে করতো।

কিন্তু কি দু্র্ভাগ্য তাদের! সেই সাব হিউম্যান ভারতীয় একজনকে এখন তাদের মেনে নিতে হলো বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে!
ক্রমে এখন তারা নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাচ্ছে। এশিয়া আফ্রিকার মানুষে ভরে যাচ্ছে বৃটেন। বাড়ছে ক্রমাগত ভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠী। বাড়ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা। অথচ করার কিছু নেই। কারণ তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে এদের ছাড়া উপায় নেই। ফলে নিজ দেশের উপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে বৃটিশ জাতি।
একসময় শেতাঙ্গ বৃটিশরাও ছিল বৃটেনের বহিরাগত জনগোষ্ঠী ভাইকিং বর্বরদের উওরসূরী যারা রোমান সাম্রাজ্যের এই অংশে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।এখন অশেতাংঙ্গরা ও বলতে পারে তোমরা ও আমাদের মতো বহিরাগত। আমেরিকার বহিরাগতরা ও বলতে পারে শেতাঙ্গরা তোমরা ও ইউরোপীয় বহিরাগত লুটেরাদের উত্তরসূরী । আমরা অন্তত তা নই।আমরা এসেছি তোমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে। আমাদের বাদ দিয়ে তোমরা এখন অচল।তোমাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। খুব ধ্রুত।বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর চালচিত্র। সুতরাং মানসিক প্রস্তুতি শুরু করো নুতন পরিস্থিতি কে স্বাগত জানাতে।
একজন এফবি ফ্রেন্ডের কাছ থেকে দারুণ সুন্দর একটা মেসেজ পেয়েছিলাম গতকাল। মেসেজ টা ছিল -The British handed over India to the Indians in 1947 in a terrible economic conditions and in 2022 the British handed over Britain to an indian in a same terrible condition.History repeats itself with a slight twist !!
একসময় ইংরেজ মোঘল সম্রাটদের দিল্লির লাল কেল্লার ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে পুরো ভারত শাসন করেছিল।মনে হয় সময় এখন নিকটবর্তী বৃটিশ রাজতন্ত্র কে বাকিংহাম প্যালেসের ঘেরাটোপে বন্দী করে বৃটেন শাসনের??##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.