--- বিজ্ঞাপন ---

কোন পথে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন?

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান#

গত ৯ই নভেম্বর বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনে দখলকৃত মূল শহর খেরসন থেকে সেনা ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে। এর আগে খেরসন থেকে সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনের লোকজন সরিয়ে নিয়েছিল রাশিয়া। যদিও এদিকে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা রাশিয়ার খেরসন থেকে পশ্চাদপসরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বড় ধরণের যড়যন্ত্রের আশংকা করছেন।

মনে করা হচ্ছে, আসন্ন শীতকালে ইউক্রেনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করতে এবং সামরিক দিক দিয়ে একেবারে দূর্বল করে দিতে রাশিয়া খুব সম্ভবত আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেন ভয়াবহ আকারের মিসাইল হামলা শুরু করতে পারে। যার মূল টার্গেট হবে ইউক্রেনের সকল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সুপেয় পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, ব্রিজ, জ্বালানি ও অস্ত্র গুদামসহ অসংখ্য সামরিক অবস্থান। এসব জন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে রাশিয়া কার্যত আসন্ন শীতকালে ইউক্রেনকে সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আসন্ন বিদ্যুৎ বিহীন শীতকালটি ইউক্রেনের অস্তিত্বের রক্ষার এক নতুন লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে বলে আকাঙ্খা করা হয়। তাই খেরসন শহর থেকে সরে যাওয়াটাকে রাশিয়া তার ভাষায় কৌশলগত পশ্চাদপসরণ বলে মনে করে। এতে করে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হওয়ার মতো ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

চলতি ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে ঠিক কতজন সেনা হতাহত হয়েছেন তা নিয়ে রাশিয়ার সরকারের তরফে কোন তথ্যই প্রকাশ করা না হলেও আমেরিকার এক প্রভাবশালী জেনারেল মিলি মিডিয়ায় জানিয়েছেন যে, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় ১ লক্ষ সেনা হতাহত হয়েছে। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রায় ৪ হাজারের অধিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, বোম্বার বিমান এবং অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া আজ অব্ধি ইউক্রেনের আকাশে বড় ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক সামরিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রায় তিন হাজারের অধিক বিভিন্ন সিরিজের ক্ষুদ্র আকারের শাহেদ-১৩৬ কামিকাজে এবং অন্যান্য কমব্যাট ড্রোন আমদানি করেছে ইরান থেকে। এখন এবার ইরান নাকি নতুন করে ১ হাজারের কাছাকাছি অতি ভয়ঙ্কর আরশ-২ কমব্যাট ড্রোন, ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ফাতেহ-১১০ এবং ৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জের জুলফিকার মিসাইল রাশিয়ার উদ্দেশ্যে শিপমেন্ট করেছে।

তাছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ আর্টিলারি সেল ও অন্যান্য অস্ত্র বোঝাই করে রেলপথে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। স্যাটালাইট থেকে ধারণকৃত ছবি বিশ্লেষণ করে এমনটাই দাবি করেছে মার্কিন পেন্টাগন। যা দিয়েই হয়ত রাশিয়া এবার ইউক্রেনে নতুন করে ইউক্রেনের উপর ব্যাপক আকারের হামলা শুরু করতে পারে।

যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ভান্ডারে ১২০টির কাছাকাছি ইস্কেন্দার-এম সিরিজের ট্যাক্টিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল মজুত ছিল বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই এই মিসাইলের মধ্যে ৪০টি বা তার বেশি সংখ্যক ইস্কেন্দার-এম মিসাইল ব্যবহার করে ফেলেছে। তাছাড়া বিশ্বের প্রথম কোন দেশ হিসেবে ইউক্রেনে ‘কিনঝাল’ হাইপারসনিক গতির মিসাইল ব্যবহার করে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেও বর্তমানে এই জাতীয় মিসাইলের ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না।

এদিকে সোস্যাল মিডিয়ায় খবর রটেছে যে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে থাকা কমব্যাট এ্যাটাক হেলিকপ্টারের এক তৃতীয়াংশ নাকি ইউক্রেন যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন নাকি আবার ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া রাশিয়ার নিজ দেশের সেনাদের গুলি করে হত্যা করার জন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনী স্পেশাল কামান্ড ফোর্স মোতায়েন করেছে। অবশ্য এই তথ্যটির ভিত্তি পশ্চিমা মিডিয়া হওয়ায় তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ থেকে যায়।

রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে ৬ হাজারের অধিক নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকার বিষয়টি বার বার রাশিয়ার মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে তা কিন্তু অতি মাত্রায় প্রোপাগাণ্ডা হলেও আশ্চর্যের কিছু হবে না। এদিকে আরও একটি খবর রটেছে যে, রাশিয়া নাকি ভারতের জন্য আপগ্রেড করা টি-৯০ মেইন ব্যাটল ট্যাংকের ভারতকে না সরবরাহ করে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর এই হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সুপার পাওয়ার রাশিয়ার বর্তমান অবস্থা।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.