--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান কি দেউলিয়া হতে চলেছে ?

0

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসপিবি) এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত বিষয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, চলতি ২০২৩ সালের ২০শে জানুয়ারিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল এটি। মূলত চলতি জানুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। তার পাশাপাশি সর্বশেষ চীনের কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋনের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের দায় মেটানোর পর পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এতে করে বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি এই মুদ্রার দর দাঁড়িয়েছে ২৫৫ রুপিতে। পাকিস্তানি মুদ্রার দামে এটিই সর্বনিম্ন পতন। আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। তাই শর্ত মেনে মুদ্রা বিনিময় হার বা এক্সচেঞ্জ রেট শিথিল করেছে দেশটি। এরপরই বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি মুদ্রামানে ব্যাপক পতন হয়েছে। এর আগে গত বুধবার পাকিস্তান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশটির মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো ডলার থেকে রুপিতে বিনিময় হারের ওপরে সীমা তুলে নেয়। খোলা বাজারে পাকিস্তানি মুদ্রার দাম কমাতেই পরিকল্পনামাফিক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি মুদ্রার মানে ২৪ রুপি পতন হয়। এতে করে প্রতি ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার দাম ২৫৫.৪৩ রুপিতে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার সমান ২৫৫.৪৩ পাকিস্তানি রুপি।

জানা গেছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্যমতে, দেশটির রিজার্ভ শেষবার গত ২০১৯ সালের ১৮ই জানুয়ারি রেকর্ড পরিমাণ ৬.৬৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। তবে গত ২০শে জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী দেশটির বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে মজুত থাকা নেট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৫.৭৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে পাকিস্তানের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার। যেখানে কিনা দেশটির চরম শত্রুভাবাপন্ন দেশ ভারতের কাছে ১৩ই জানুয়ারি ২০২৩ এর হিসেব অনুযায়ী ৫৭২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল রিজার্ভ রয়েছে।

এদিকে, আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে সম্প্রতি আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল পাকিস্তান। তবে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান সরকার যেন মুদ্রার দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়। এতে করে খোলা বাজারেই ধার্য হবে পাকিস্তানি মুদ্রার মূল্য বা রেট। পাকিস্তানি মুদ্রার দামের ব্যাপক পতনের কারণে শুধু আর্থিক সংকট নয়, খাদ্যদ্রব্যেরও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশে এক প্যাকেট আটা ৩ হাজার রুপিতে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি ঘন ঘন ব্ল্যাকআউটও শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। আর তাই খরচ কমাতে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। দেশটিতে নতুন যে প্রস্তাব আনা হয়েছে তাতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ১৫ শতাংশ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনার সুপারিশও করা হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা ৭৮ জন।

দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভ বাংলাদেশে

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৩.৭৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও ‘আইএমএফ’ এর সূত্রমতে বাংলাদেশের প্রকৃত ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ২৬.৫৫ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া শ্রীলঙ্কার ২ বিলিয়ন ডলার, নেপালের ১০ বিলিয়ন ডলার এবং ভুটানের কাছে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।

কি অবস্থা অন্যান্য দেশগুলোর

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মানের বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মুদ্রা রুপীর মানের ব্যাপক মাত্রায় দরপতন হয়েছে। চলতি ২০২৩ সালের ২৬শে জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী এক ডলারের বিপরীতে ভারতের মুদ্রা ৮১.৫২৫ রুপি, পাকিস্তানের মুদ্রা ২৩০.৬২ রুপি, শ্রীলঙ্কার মুদ্রা ৩৬২.১৭৪ রুপি এবং বাংলাদেশের মুদ্রা ১০৩.৩৪২ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

তবে বিশ্বের মধ্যে একক কোন দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে রেড জায়ান্ট চীনের কাছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে চীনের ভান্ডারে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ছিল ৩.৩০৬ ট্রিলিয়ন ডলার, জাপানের ১.২২৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪২.৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।

পূর্ব এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি ভিয়েতনামের গত ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯২.১০১ বিলিয়ন ডলার। যদিও দেশটি তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে ২০২৩ শুরু থেকেই শক্তিশালী অবস্থানে চলে এসেছে।  ২০২৩ সালের শেষের দিকে ভিয়েতনামের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.