ভয়ানক তুষারঝড়ের কবলে আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া। হাজার হাজার মানুষ এরই মধ্যে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পাওয়ার আউটেজ ডট ইউএস জানিয়েছে, দেশটির প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার স্থাপনায় বিদ্যুৎ নেই। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মিশিগানে। ওই অঙ্গরাজ্যে তুষার, বৃষ্টি ও তীব্র বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ানের।
গত কয়েক দিন ধরেই তুষারঝড় আর তার সঙ্গে পাল্লা বৃষ্টিতে নাজেহাল অবস্থা আমেরিকার এই অঞ্চলের। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস-এর দাবি, দক্ষিণ-পশ্চিম ক্যালিফর্নিয়ায় এমন শক্তিশালী তুষারঝড় আগে কখনও দেখা যায়নি। বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও ঝড়ের দাপট বজায় রয়েছে গত কয়েক দিন ধরেই।ন্যাশনাল ওয়াদার সার্ভিস আরও জানিয়েছে যে, এই তুষারঝড়ের প্রভাব পড়বে পশ্চিম উপকূলে। রবিবার থেকে তুষারপাতের পরিমাণ বাড়বে ক্যাসকেডস, এবং সিয়েরা নেভাদার উপকূলীয় এলাকায়। শুধু ক্যালিফর্নিয়াই নয়, লস অ্যাঞ্জেলসেও তুষারঝড়ের দাপট চলছে। লস অ্যাঞ্জেলসের উত্তর অংশে সান্টা ক্ল্যারিটায় প্রবল তুষারপাত হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন রিজিওনাল ক্লাইমেট সেন্টার-এর গবেষক ড্যান ম্যাকিভয় বলেছেন, “দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় এ রকম ভয়ানক তুষারপাত আগে কখনও দেখিনি।”
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, রবিবার থেকে ঝড়ের দাপট বেড়েছে। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে স্যাক্রাম্যান্টো উপত্যকার উপর গিয়ে বয়ে যাবে। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টির ফলে ক্যালিফর্নিয়ার বহু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে লক্ষাধিক পরিবারকে এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে।উত্তর ক্যালিফর্নিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ নেমে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দফতর। বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টি এবং তুষারঝড়ের দাপট বজায় থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।বছরের শুরুতেই ‘বম্ব সাইক্লোন’ আছড়ে পড়েছিল আমেরিকায়। তুষারঝড়ের দাপটে আমেরিকার নানা প্রান্তে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল হিমাঙ্কের ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি নীচে। সেই তুষারঝড়ের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ফ্লরিডা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলিনা, নিউ ইয়র্ক এবং ক্যালিফর্নিয়া-সহ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে এমন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেখানকার স্কুল ও অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের আইন পরিষদও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ভ্রমণ করা কষ্টকর হচ্ছে। ফ্লাইট এওয়্যার জানিয়েছে, এমন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ১৬ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে।এসব ফ্লাইটের চার শতাধিক মিনিয়াপোলিস-সেইন্ট পল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ বা সেখান থেকে উড্ডয়ন করার কথা ছিল। এছাড়া দেশব্যাপী পাঁচ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
রাজ্যের স্যাক্রামেন্টোর বাসিন্দাদের রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত ভ্রমণ এড়াতে সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা। টুইটারে বিবৃতিতে সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারী তুষার ও ঝড়ো বাতাসের কারণে গাড়ি চলাচলে বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি পিচ্ছিল থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। রবিবার স্যাক্রামেন্টো উপত্যকায় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে তুষারঝড় আঘাত হানে।এমন পরিস্থিতিতে বিমান উঠা নামায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় একই প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পূর্বাভাস রয়েছে।
রয়টার্স বলছে, গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানে তুষারঝড় এবং সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পর্বতগুলোর জন্য বিরল একটি তুষারঝড় সতর্কতা জারি করা হয়, যা ১৯৮৯ সালের পর জারি করা প্রথম সতর্কতা।#