--- বিজ্ঞাপন ---

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডলারের আধিপত্য কী শেষের পথে?

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুৃর রহমান##

বিশ্বব্যাপি ডলারের আধিপত্য কমাতে উঠেপড়ে লেগেছে কয়েকটি দেশ। এসব দেশের তৎপরতায় ডলারের তেজীভাব আগের মতো নেই বললে চলে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য ও প্রভাব নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন ও ব্রাজিল। বিশেষ করে দেশ দুটির মধ্যে চলমান আমদানি রপ্তানি বানিজ্যে ডলারের প্রাধান্যকে খারিজ করতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে চীন ও ব্রাজিল। ডলারের লেনদেন পরিহার করে চীন ও ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাংক নিজস্ব মুদ্রায় আন্তঃবানিজ্য করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে ।
এদিকে ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাংক প্রকাশিত এক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা হিসেবে চীনের মুদ্রা ইউয়ানকে প্রতিস্থাপন করেছে। চলতি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৯৭.৩ বিলিয়ন ডলার এবং চীনের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১৩৩.২ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মধ্যে মার্কিন ডলার ছিল ৮০.৪%, চীনের ইউয়ান ছিল ৫.৩৭% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো ছিল ৪.৭৪%। কিছুটা ধীরে হলেও রেড জায়ান্ট চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। বর্তমানে ব্রাজিলের পাশাপাশি রাশিয়াও চীনের সাথে আমদানি রপ্তানি বানিজ্যে নিজস্ব দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন করতে সম্মত হয়েছে।
তাছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েল পর্যন্ত চীনের আন্তঃবানিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউয়ান মুদ্রা ব্যবহার শুরু করেছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশ ডলারের পাশাপাশি চীনের কারেন্সি ইউয়ান মজুত শুরু করেছে। চলতি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চীনের পিপল’স ব্যাংক অব চায়না এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তঃ মুদ্রা ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
এদিকে ভারতের নিজস্ব মুদ্রা রুপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে। বিশেষ করে বতসোয়ানা, ফিজি, জার্মানি, গায়ানা, ইসরায়েল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ওমান, রাশিয়া, সেশেলস, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, উগান্ডা,ইংল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশ আন্তঃবানিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে রুপিতে বানিজ্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তবে যাই হোক না কেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক বানিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে যে একটি দেশের কারেন্সির একছত্র অধিপত্য রয়েছে তা বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলর জন্য বড় বাধা হয়ে থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বৃটিশ মুদ্রা পাউন্ড সারাবিশ্বে রাজত্ব কায়েম করেছিল।
যা বর্তমানে আমেরিকার কারেন্সি ডলার করছে এবং আগামীতে হয়ত অন্য কোন দেশের মুদ্রা রাজত্ব করবে। তবে এখানে শুধুমাত্র একটি দেশের কারেন্সিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের একক আদর্শ হিসেবে না এনে কমপক্ষে ৫টি দেশের শক্তিশালী মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে অবাধ প্রচলনের বিষয়টিকে নিশ্চিত করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.