--- বিজ্ঞাপন ---

এডভান্স যুদ্ধবিমান দিয়ে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন শুরু করেছে ইরান

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

ইরান সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া থেকে প্রথম ব্যাচে সুখোই চতুর্থ প্রজন্মের এসইউ-৩৫ (ফ্ল্যাংকার-ই) সিরিজের এডভান্স যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে। খুব সম্ভবত প্রথম চালানে হয়ত ৩টি এই জাতীয় অত্যাধুনিক টুইন ইঞ্জিন যুদ্ধবিমান ইরানের বিমান বাহিনীর কাছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই হস্তান্তর সম্পন্ন করেছে রাশিয়ার সুখোই কর্পোরেশন। ইরান খুব সম্ভবত রাশিয়ার সাথে ২৪ থেকে ৩৬টি এসইউ-৩৫ এডভান্স যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে বছর খানেক আগেই। এদিকে ইরান তার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পরিকল্পনা মাফিক পর্যায়ক্রমে ভবিষ্যতে কমপক্ষে ৬০টি এই জাতীয় ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা করেছে বলে তথ্য দিয়েছে আমেরিকার অনুদানে পরিচালিত একটি সামরিক গবেষণামূলক থিকং ট্যাংক। তাছাড়া ইরানের বেশ কয়েকজন পাইলট ইতোমধ্যেই চতুর্থ প্রজন্মের এই এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান পরিচালনার দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফিরে এসেছেন।

বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটে খুব ভালো মানের ও এডভান্স জেট ফাইটার এক রকম নেই বললেই চলে। ৮০ এর দশকে ইরানের সাবেক রেজা শাহ পাহেলভী সরকার আমেরিকা থেকে ৭৯টি এফ-১৪ টমক্যাট টুইন ইঞ্জিন যুদ্ধবিমানসহ প্রায় ৭০০ এর কাছাকাছি ফনিক্স এয়ার টু এয়ার মিসাইল ক্রয় করে। তবে বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনীতে মাত্র ১৮-২২টি এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান অপারেশনাল থাকতে পারে। আমেরিকার ‘নরথ্রপ গ্রুম্যান’ কোম্পনি এই যুদ্ধবিমানের প্রডাকশন লাইন ১৯৯১ সালে ও স্পেয়ার পার্টস উৎপাদন ২০০৫ সালের দিকে চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দিলে ইরান নিজস্ব রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ত কিছু সংখ্যক এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান এখনো পর্যন্ত অপারেশনাল রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর বর্তমানে কিন্তু এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমানের একমাত্র ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে ইরান।

ইরানের বিমান বাহিনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এয়ার স্টাইক কমব্যাট এয়ারক্রাফটের মধ্যে মিগ-২৯ রয়েছে ৪০টি এবং এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান আছে ৬০টি, এফ-৫ টাইগার যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯টি। রাশিয়ার তৈরি ২৮টি এসইউ-২৪, ২০টি এসইউ-২২ এবং চীনের তৈরি জে-৭ লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২৪টি। ফ্রান্সের তৈরি অতি পুরনো মিরেজ-এফ১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ২২টি। তবে প্রকাশ থাকে যে, ইরানের এয়ার ফ্লীটের মধ্যে আবার ২০% এর কাছাকাছি যুদ্ধবিমান হচ্ছে ইরাকের সাবেক সাদ্দান হোসেন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান। যা কিনা ১৯৯০-৯১ সালের দিকে গলফ ওয়ার চলাকালে ইরাক থেকে পালিয়ে ইরানে চলে আসে।

ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি হেসা কাউসার সিরিজের ৪টি, হেসা শিক্কা ৬টি এবং হেসা আজরাখশ নামের ২টি গ্রাউন্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির যুদ্ধবিমান সার্ভিসে এনেছে। তবে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এই জাতীয় যুদ্ধবিমানের প্রডাকশন ক্যাপাবিলিটি চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে মনে করা হয়। তাছাড়া ইরানের বিমান বাহিনীতে আপাতত আরো কোন ধরণের এয়ার স্টাইক ফাইটার জেট নেই। এদিকে ইরান গত ২০০৬ সাল থেকে নিজস্ব প্রযুক্তির নতুন প্রজন্মের কাহার-৩১৩ যুদ্ধবিমান প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করলেও তা কিন্তু এখনো পর্যন্ত আকাশে উড্ডয়ন করার মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করেনি। যদিও সর্বশেষ ২০১৭ সালে রানওয়েতে পরীক্ষামূলক ট্যাক্সি এন্ড রানিং টেস্ট সম্পন্ন করলেও এখনো পর্যন্ত তা সার্ভিসে আসেনি।

ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটের বর্তমান আকার ও সংখ্যা অনেকটাই কম ও প্রযুক্তি অনেক পুরনো বলে মনে করা হলেও ইরান কিন্তু ঠিকই তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বিশাল আকারের নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট এন্ড সুসাইডাল ড্রোন (ইউসিএভি) বহর গড়ে তুলেছে। কিছু পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক গবেষণামূলক থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, ইরানের সামরিক বাহিনীর কাছে প্রায় ৪ হাজারের কাছাকাছি কমব্যাট এন্ড সুসাইডাল কামিকাজে ড্রোন এবং প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি বিভিন্ন সিরিজ ও রেঞ্জের ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের সুবিশাল ভান্ডার গড়ে তুলেছে। যা ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিমানের বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে ইরানের বিপ্লবী (আইআরজিসি) বাহিনী।

এদিকে ইরানের সাম্প্রতিক সময়ে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি একটি শক্তিশালী কামিকাজে সুসাইডাল ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। মিরাজ-৫৩২ নামের এই অত্যাধুনিক কামিকাজে ড্রোনের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৪৫০ কিলোমিটার এবং এটিকে যে কোন প্লটফর্ম থেক খুব সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যেই রেডি করে শত্রু পক্ষের টার্গেটের দিকে নিক্ষেপ করা যায়। পিস্টন ইঞ্জিন চালিত এই ড্রোন কিন্তু একমুখী আক্রমণাত্মক কমব্যাট এরিয়াল সিস্টেম। এটি ১২ হাজার ফিট উচ্চতায় টার্গেটের দিকে উড়ে গিয়ে নিজেই সুসাইডাল এ্যাটাক করে বসে। এটি আকাশে একাধারে ৩ ঘন্টা উড্ডয়ন করার উপযোগী করে ডিজাইন করেছে ইরান। এটি সর্বোচ্চ ৫০ কেজি ওজনের হাই এক্সপ্লুসিভ ওয়ারহেড বহন করে একেবারে নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত করতে সক্ষম। বেশ স্বল্প খরচে তৈরি মিরাজ-৫৩২ কামিকাজে সুসাইডাল ড্রোন খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা যায় এবং এটিকে এমনকি যে কোন গাড়ি থেকেও লঞ্চ করা যায়। মোট কথা ড্রোন টেকনোলজি ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ বর্তমানে বিশ্বের সেরা মাত্র ৫টি দেশের মধ্যে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে ইরান। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ব্যাপকভাবে ইরানের তৈরি কমব্যাট এন্ড কামিকাজে ড্রোন ব্যাবহার করে ইরানের নিজস্ব ড্রোন প্রযুক্তির দক্ষতা ও সক্ষমতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.