--- বিজ্ঞাপন ---

ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতে যাচ্ছে বেলজিয়াম!

0

সিরাজুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধি#

ইউরোপের দেশ নরওয়ে, নেদার‍ল্যান্ডস এবং ডেনমার্কের পর এবার ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতে যাচ্ছে বেলজিয়াম। মূলত ইউক্রেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আলোকে বেলজিয়াম বিমান বাহিনীর হাতে থাকা বেশ পুরোনো ৩০টি এফ-১৬ এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান দিতে চায় রয়্যাল বেলজিয়াম সরকার। মূলত গত ২৮শে মে মঙ্গলবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকসান্দার দ্য ক্রু এই যুদ্ধবিমান সরবরাহ ও সামরিক সহায়তা চুক্তিতে সই করেন।

আসলে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের ইশারায় এই চুক্তির আলোকে ইউক্রেনকে পর্যায়ক্রমে ৯৭.৭০ কোটি ইউরো বা ১০৫.৫ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করে বেলজিয়ামের সরকার। তবে বিশাল আকারের এই সামরিক চুক্তিকে ইউক্রেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও বাস্তবে এর মূল সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে কিন্তু বেলজিয়াম নিজেই। কারণ ইউক্রেনকে ৩০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেবার পরিবর্তে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকার কাছ থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অনেকটাই সহজ শর্তে ও ছাড়কৃত দামে ওয়েপন্স প্যাকেজসহ নতুন প্রজন্মের ৩৪টি এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেটসহ অন্যান্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের বিশেষ সুযোগ পাবে দেশটি।

বর্তমানে রয়্যাল বেলজিয়াম এয়ার ফোর্সে ৪৪টি পুরোনো এফ-১৬এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান অ্যাক্টিভ রয়েছে। সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে ইউক্রেনের হাতে ৩০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে চায় তার। আর প্রথম ব্যাচে খুব সম্ভবত চলতি ২০২৪ সালের শেষের দিকেই ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর কাছে সরবরাহ করা হবে। রুটিন মাফিক প্রশিক্ষণ শেষে চলতি ২০২৪ সালের জুন মাস থেকেই হয়ত প্রথম ব্যাচে ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু করা হতে পারে। তাছাড়া এই যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়ার পূর্বে আধুনিকায়ন ও নতুন অস্ত্রে সজ্জিত করার ব্যয় নির্বাহ করা হবে পশ্চিমা বিশ্বের ইউক্রেনকে দেয়া সামরিক সহায়তা তহবিল থেকে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন রুখে দিতে আমেরিকার সাথে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে ডেনমার্ক ১৯টি, নরওয়ে ২২টি, নেদারল্যান্ডস ২৪টি এবং বর্তমানে বেলজিয়াম ৩০টি পুরোনো এফ-১৬এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর কাছে পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করতে চায়। বর্তমানে রোমানিয়ার কোন এক গোপন সামরিক ঘাঁটিতে চলমান ইউক্রেনের পাইলট ও ক্রুদের প্রশিক্ষণ শেষে এগুলো যত দ্রুত সম্ভব কিয়েভের হাতে তুলে দিতে চায়। এর আগে পোল্যান্ডের বিমান বাহিনীর কাছে থাকা বেশ পুরোনো মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করলেও এখন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের হাতে তুলে দেবার প্রস্তাব করা হলে পোল্যান্ডের সরকার তা সরাসরি নাকচ করে দেয়।

এদিকে আমেরিকার মাস্টার প্লানে ইউক্রেনের কাছে পশ্চিমা বিশ্বের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়ে অনেক আগেই চরম সতর্ক বার্তা দিয়ে রেখেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় যে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কোন অবস্থাতেই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে না। এগুলো ইউক্রেনে পৌঁছানোর পর একে একে পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য কথিত শক্তিশালী অস্ত্রের মতোই আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হবে।

তবে রাশিয়া যাই বলুক না কেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেনের হাতে নতুন করে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আসার পর যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানরত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য হয়ত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। আমেরিকা আসলে রাশিয়াকে যতটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এবার পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে আপগ্রেড করার পাশাপাশি অত্যাধুনিক এয়ার টু এয়ার এবং গ্রাউন্ড অ্যাটাক মিসাইল দ্বারা সজ্জিত করেই ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। যা অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আকাশ পথে সামরিক অভিযান হয়ত অনেকটাই সীমিত করে ফেলবে বলে মনে করে আমেরিকা।#

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.