--- বিজ্ঞাপন ---

ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ‘চিটাগাং টু দ্যা ফোর’

0

কাজী আবুল মনসুর##
সমুদ্রমেখলা, সরৎমালিনী ও বনরাজিনীলা চট্টগ্রাম। আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক লীলাক্ষেত্র এ চট্টলা। প্রকৃতির বিচিত্র পরিবেশ এ অঞ্চলের অধিবাসিদের একদিকে করেছে সৌর্ন্দযপিপাসু, আবার অন্য দিকে সৌন্দর্যের অন্তরায় সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে করেছে সংগ্রামী। সমুদ্রের উন্মত্ত তরঙ্গরাজি, কর্নফুলি ও শঙ্খ নদীর তীব্র স্্েরাতধারা যখন জনপদে তান্ডব সৃষ্টি করে, তখন তার সঙ্গে সংগ্রামের বলিষ্ঠ মানসিকতা কাজ করে চট্টলবাসীর মধ্যে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধমীর্য় অনাচারের বিরুদ্ধে চিরকাল উন্নতশির চট্টলবাসী। চট্টগ্রামের এ বিচিত্র ইতিহাস গৌরবের, এ ইতিহাস গর্বের। চলমান ইতিহাসে চট্টলবাসীর সংগ্রাম সহিংস এবং অহিংস দু’ধারায় প্রবাহিত। ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামে চট্টগ্রামের সহিংস কর্মধারার ইতিহাস বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবের বহ্নিশিখা যখন সারা ভারতবর্ষে জ্বলে উঠতে শুরু করছিল-তার আগেই আন্দোলন শুরু হয়ে যায় চট্টগ্রামেই। চট্টগ্রামের সিংহ পুরুষ বৃটিশ বিপ্লবী সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলন শুরু হয়ে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষে এর আগে কোথাও অসহযোগ আন্দোলন হয়নি। ১৯২০ সালে নাগপুর কংগ্রেসে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহিত হওয়ার পূর্বেই চট্টগ্রামে অসহযোগের সূচনায় মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন-‘চিটাগাং টু দ্যা ফোর’ অর্থাৎ ‘চট্টগ্রাম এগিয়ে’।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে হয়ে গেলো এক অনন্য ঘটনা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ খ্যাত আন্দোলন করতে গিয়ে হাজারো মানুষ প্রাণ হারায়। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপনে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ আন্দোলনটি চরম আকার ধারণ করেছিল ৩১ জুলাই। যখন চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা আদালত ভবন ঘেরাও করে প্রচন্ড সাহসিকতার পরিচয় দেন। প্রায় লাখো মানুষের এ গণজাগরণ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। পরবর্তিতে সরকারের পতন হলে দেশকে রক্ষার জন্য এমন একজন মানুষ এগিয়ে আসেন যার জম্ম চট্টগ্রামে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস, সারা বিশ^ যাকে মাথায় তুলে রাখেন। নিজের জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে সুদুর ফ্রান্স থেকে এসে ‘প্রধান উপদেষ্টা’র দায়িত্ব নিজের কাঁেধ তুলে নেন। আবার প্রমান হলো, ‘চিটাগাং টু দ্যা ফোর’। ড. ইউনুস নিজের উপর দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামের আরও কিছু মানুষকে উপদেষ্টা হিসেবে দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় হাল ধরতে বলেন। এরা হলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ–-কমান্ডো ফারুক ই আজম বীর প্রতীক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হাসান, লেখক ও গবেষক ফরিদা আকতার, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এখানে থেমে থাকেননি। চট্টগ্রামের আরও তিন জন গুনি মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন, যা ছিল কল্পনার বাইরে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় চট্টগ্রামের সন্তান অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে। একই সাথে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রামের সন্তান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল নিয়োগ পান। পরবর্তিতে সবচেয়ে যে চমকপ্রদ খবরটি আসে তা হলো, রাষ্টায়াত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে। তিনিও চট্টগ্রামের।
দেশের ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রামের সন্তানরা ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুস যাদের কাধেঁ এসব দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তারা সবাই নিজ গুনে গুনান্বিত। সততা ও সাধারনভাবে নিজেরা জীবন যাপনে অভ্যস্ত। কোন রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব পালন না করলেও সাহস ও ধৈর্য্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষের ভালোবাসা, আন্তরিকতাক সাথে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন কঠিন পথ। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নেই। এমন নিখুঁতভাবে এ সময় গুনি এসব মানুষকে খুজেঁ বের করা ছিল কঠিন কাজ। যেখানে দেশের প্রতিটি স্তর ধংসের দ্বারপ্রান্তে সেখানে চট্টগ্রামের এ সন্তানরা অনন্যা উপদেষ্টাদের সাথে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশের উপজেলা হাটহাজারী। এ হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে ১৯৪০ সালের ২৮ জুন জম্মগ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। পিতা হাজী দুলা মিয়া ও মাতা সুফিয়া খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ড. ইউনুসের শিক্ষা জীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের স্বনামধন্য চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে। তিনি মেধাতালিকায় ১৬তম স্থান অধিকার করেন। কলেজ ছিল চট্টগ্রামের সেরা ‘চট্টগ্রাম কলেজ’। জীবনের শুরু থেকে নাটক, লেখালেখি, পত্রিকা সম্পাদনা অনেক কিছুতে যুক্ত থেকে প্রতিবার স্বাক্ষর রাখেন। যুক্ত ছিলেন স্কাউটের সাথে। স্কাউটিং করে ১৫ বছর বয়সেই তিনি আমেরিকা,কানাডাসহ ইউরোপের নানা দেশ ঘুরেন। অসম্ভব মেধাবীর অধিকারী ড.ইউনুস কলেজ জীবন থেকে প্রস্ততি নেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। ১৯৫৭ সালে তিনি সফলভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সম্মান শ্রেনীতে ভর্তি হন। এখান থেকে নেন সর্বোচ্চ ডিগ্রী। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে থাকার পর ১৯৬৫ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্করারশীপ পান। যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেনে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ড. ইউনুস বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য সাংগঠনিকভাবে নানা কাজে লিপ্ত থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। নোবেল প্রাপ্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের ড. ইউনুসের নাম উচ্চারিত হলো সারা বিশ্বে। ১৯৮৬ সালে গরীর মানুষের জন্য তিনি প্রতিষ্টা করেন গ্রামীন ব্যাংক। ক্ষুদ্রঋনের মাধ্যমে গরীব মানুষের জীবন মানের উন্নতিই ছিল প্রধান লক্ষ্য। পরবর্তিতে তারঁ এ উদ্যোগ বর্হিঃবিশে^ প্রশংসিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলো ড. ইউনুসের গ্রামীনের এ মডেল ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি সারা বিশে^র কাছে একজন সম্মানিত ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। একই সাথে বাংলাদেশের নামও উজ্জ্বল হতে থাকে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সাগরে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ খ্যাত এক অপারেশনের অন্যতম নায়ক মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম।। হাটহাজারীর ফরহাদাবাদের মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী এবং জান্নাতুল ফেরদৌসের পুত্র ফারুক ই আজম বীর প্রতীক। যুদ্ধের সময় ভারতের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। যুদ্ধকালীন সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে বঙ্গোপসাগরে থাকা পাকিস্তানি জাহাজ টার্গেট করে ‘অপারেশন জ্যাকপটে’ অংশ নেন। দুঃসাহসি এ অভিযানের কারনে উপাধি পান বীর প্রতিক। তিনি এখন এ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।
আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ (আ ফ ম) খালিদ হাসানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। উপদেষ্টা হওয়ার আগে গুনি এ মানুষটির নাম অনেকে শুনেন নি। ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণকারী খালিদ হাসানের পিতা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহও একজন ইসলামি পন্ডিত ছিলেন। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা, একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক গবেষণা ’ বিষয়ের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্র্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খন্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দেড় বছর খন্ডকালীন অধ্যাপক, হারুন ইসলামাবাদীর আমলে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগে ৪ বছর, সুলতান যওক নদভীর আহ্বানে জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া ‘ওসিলাতুল ইলাম’ বিষয়ে এক বছর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে করেন সাংবাদিকতা। তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণীসহ একাধিক পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর এবং ২০২১ সালের ২ জানুয়ারী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।
ফরিদা আখতার একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী। তিনি বর্তমানে উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষণা) নামক একটি এনজিও সংস্থার পরিচালক। ১৯৫৩ সালে চন্দনাইশের হারলা গ্রামে ফরিদা আখতারের জম্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফরিদা আখতার বহু বছর ধরে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখি করে আসছেন। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে তিনি গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ফরিদা আক্তারের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা।
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের হরিশপুর ইউনিয়নের সন্তান প্রফসর ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ইডকলের প্রতিষ্ঠাতা সিইও হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সোলার হোম সিস্টেম সফলভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন চট্টগ্রামের আরেক কৃতি সন্তান ড. নিয়াজ আহমেদ খান। এক সময় পড়াশুনা করেছেন অক্সর্ফোডে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) উপ-উপচার্য। নিয়াজ আহমেদ খানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে। তিনি ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালেও একই বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে ফার্স্ট ডিভিশনে ফার্স্ট হয়েছেন। এইচএসসিতেও তিনি একই ফলাফল অর্জন করে চমক দেখিয়েছেন। অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র একাডেমিক অ্যাডভাইজার। বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল ফরেস্ট কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং বইগুলোতে ১৬০ টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম যখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে তখন ড. মুহাম্মদ ইউনুস রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিলেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে। মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ফতেহ আলী চৌধুরী বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মরহুম নুরুল আলম চৌধুরী ও মরহুমা খালেদা বেগমের জ্যেষ্ঠপুত্র। তিনি চট্টগ্রামের জনহিতৈষী প্রখ্যাত জমিদার মরহুম সুলতান আহমদ চৌধুরীর নাতি।
ঢাবি’র উপাচার্যের পর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার কৃতি সন্তান ড. মোহাম্মদ ইসমাইলকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক। পড়াশুনা করেছেন ক্যামব্রিজে।
সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে এখন বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্টে হাজারো মানুষের লাশের উপর দাড়িয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের মানুষ। একদিকে নানা ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে ৮৪ বছর বয়সে কঠিন সমস্যাগুলো মাথায় নিয়ে সামনের দিকে অনেক ঝুকিঁ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন চট্টগ্রামের সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এক সময় চট্টগ্রামের মানুষ মনে করতেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিশে^র কাছে এত বড় মাপের মানুষ, কিন্ত দেশের জন্য কিছুই করেন নি। আসলে দেশের জন্য তিনি কিছু করার সুযোগও পাননি। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে নিজ দেশে মামলা, হয়রানির শিকার ড. মুহাম্মদ ইউনুস যে দেশের এতবড় উপকারে আসবেন তা কেউ ভাবেন নি। শেষপর্যন্ত জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ড. মুহাম্মদ ইউনুস তারঁ অর্জিত দীর্ঘ জীবনের মেধা-শ্রমগুলো দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যয় করছেন। দেশের মানুষের ভরসার জায়গা এখন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সবার আশা, চট্টগ্রামের সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হাত ধরে আগামীতে ‘বৈষম্যহীন নতুন একটি বাংলাদেশ’ সৃষ্টি হবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.