--- বিজ্ঞাপন ---

নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় জামায়াত-শিবির

0

বিশেষ প্রতিনিধি##
চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে ব্যাপকভাবে সক্রিয় এখন জামায়াতে ইসলামী। দল গুছিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্ততি চলছে প্রত্যক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। সাধারন মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত ও বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নগরীর প্রত্যক ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের কাজও শেষের দিকে। নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে জামায়াতের নেতারা সাক্ষাত করেছেন চট্টগ্রামের নতুন দায়িত্ব জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সাথে। নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজেও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির কার্যক্রম শুরু করেছে।
চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।
মাওলানা শাহজাহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর পর্যন্ত দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষানীতি, আইনের শাসনসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের শোষণ জুলুম নির্যাতনের জবাব দিয়েছে ছাত্র-জনতা। অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করেনি। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ছাত্র-জনতা জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়বেই।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির মাঠে ময়দানে কার্যত নামতে পারেনি। অনেকটা অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিল এ সংগঠনের কাজ-কর্ম। ভেতরে ভেতরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। আওয়ামী লীগের আমলে সরকারের রোষানলে থাকা এ সংগঠন কোন মিটিং মিছিল করতে গেলে পুলিশী হয়রানির শিকারে পরিনত হয়েছিল। অন্যদিকে ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ও কলেজগুলোতে ছাত্রলীগের কারণে সংগঠনকে দাড় করানো কবঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া নেতা -কর্মীদের অনেকে ছিলেন হয় কারাবন্দী, না হয় আত্মগোপনে। দীর্ঘদিন মাঠে ময়দানে অনুপস্থিত থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ছিল জামায়াত-শিবির অঅর কোনদিন প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্ত সকলের ধারনাকে মিথ্যা প্রমান করে জামায়াত-শিবির এখন প্রকাশ্যে সাধারন মানুষের কাছে তাদের রাজনীতি ও আগামী দিনে একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থার কথা প্রচার করে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে চলেছে।
এদিকে দীর্ঘ ছয় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলা হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের কার্যালয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রতি কার্যালয়টির উদ্বোধন করেন। উপস্থিত শিবির কর্মীরা উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর ৬টি ককটেল ও বেশ কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর ওই কার্যালয়ে ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ দুর্বৃত্তদের লুটপাটের অভিযোগ করে শিবির। তারা বলেন, বিগত সরকারের পেটুয়া বাহিনীর কারণে এই অফিসে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ওরা প্রায় চার কোটি টাকার জিনিস লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না। ছাত্রশিবির মাফ করতে জানে। কারণ মাফ করা মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ ভোগ করছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। উত্তরের এ অফিস হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনীদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। তাওহীদি জনতার নেতৃত্বে আজ আবার নতুন করে এই কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।’ এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে শিবিরের এ নেতা আরও বলেন, আপনারা সত্যের পক্ষে থাকবেন। আপনারা জাতির বিবেক। জাতিকে সত্যটা পৌঁছিয়ে দিবেন।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এসেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি নগরীর সাফা আর্কেডে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম জোনের উদ্যোগে আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অংশ জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ সময় উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মজলুম সংগঠন জামায়াতে ইসলামীসহ গোটা দেশের প্রতি গত ৫ আগস্ট করুণা করেছেন। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবি, ওলামায়ে কেরাম, সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণি পেশার ওপর গত সাড়ে ১৫ বছরের যে অত্যাচার ও নির্যাতন, সেইসব থেকে আল্লাহ তায়ালা সকলকে মুক্তি দিয়েছেন, আমাদের বুকের ওপরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসকের জগদ্দল পাথর সরে গিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ আমরা উপহার পেয়েছি। এই ফ্যাসিবাদি দুঃশাসনের অবসানের জন্য কোটি কোটি মানুষ যে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে তা বাংলার ইতিহাসে আজীবন লেখা থাকবে। তিনি আরো বলেন, স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য থেকেই আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা এবং পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। কিন্ত ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে দিয়েছে। জুলাই মাসের তরুণ ছাত্রসমাজের উত্থাল আন্দোলন এবং রক্তের মধ্য দিয়ে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার এসেছি, নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে জামায়াত।’
চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ইসলামী ছাত্র শিবির ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। শুরু করেছে। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় কলেজ দুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। এক সময় কলেজ দুটি ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি ছিল। বিগত তিন দশক নিয়ন্ত্রণে রাখার পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ কলেজ দুটি দখলে নেয় ছাত্রলীগ। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পরই কলেজ দুটিতে নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে। এ সময় মহসিন কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আনোয়ার বলেন গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগ অবৈধভাবে কলেজটি দখল করে রেখেছিল। আজকে ছাত্রসমাজকে নিয়ে আমরা কলেজে প্রবেশ করেছি। এখন কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্র শিবির কাজ করে যাবে।
চট্টগ্রামের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ¦ শাহজাহান চৌধুরীসহ জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। গত বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের নিজ কার্যালয়ে এই সৌজন্য সাক্ষাত করেন তিনি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও নগর জামায়াতের নায়েবে আমীর, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, কোতোয়ালী থানা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমদ, সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন প্রমুখ। জেলা প্রশাসকের সাথে জামায়াত নেতাদের ঠিক কি আলাপ হয়েছে তা জানা না গেলেও জামায়াত নেতারা চট্টগ্রামের নব নিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথে নানা বিষয় নিয়ে খোলাসাভাবে আলাপ আলোচনা করেছেন।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট সরকার দীর্ঘ দিন ধরে খুন,গুম, অর্থ ও মানব পাচার, নানাবিধ অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, এবং দেশ পুণর্গঠনের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দামপাড়াস্থ পুলিশ লাইন্সের সিএমপি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। ##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.