--- বিজ্ঞাপন ---

ব্যর্থ হলো রাশিয়ার শক্তিশালী ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ পরীক্ষা!

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিবেদক##

পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশাঙ্খাকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যতম সামরিক সুপার পাওয়ার রাশিয়া গত ২০১৮ সালে তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈরি লং রেঞ্জের আরএস-২৮ সারমাট (স্যাটান-২) ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল সার্ভিসে আনার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার তরফে এটিকে একটি অপরাজেয় ও অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক অস্ত্র হিসেবে প্রচার করা হয়। যাকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৬ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের পুরোনো আরএস-৩৬ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের রিপ্লেস হিসেবে সার্ভিসে আনতে চায় রাশিয়া।
রাশিয়ার মিডিয়ায় ১৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-২৮ সারমাট ব্যালেস্টিক মিসাইলকে বার বার অপরাজেয় অস্ত্র হিসেবে দাবি করা সত্ত্বেও এটি কিন্তু গত ২০২২ সাল থেকে মোট ৪ বার উৎক্ষেপণ পরীক্ষায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ কিংবা ধ্বংস হয়েছে। যা রাশিয়ার কৌশলগত সামরিক সক্ষমতা জন্য এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিক সময়ে গত ২১ শে আগস্ট রাশিয়ার প্লেসেটস্ক কসমোড্রোমে লঞ্চ সাইলো থেকে উৎক্ষেপণের পর পরই সেই স্থানেই মিসাইলটি ধ্বংস হয়ে যায় বলে আশাঙ্খা করা হচ্ছে।
আসলে এই মিসাইল পরীক্ষার পর স্যাটেলাইট ইমেজে উত্তর রাশিয়ার প্লেসেটস্ক কসমোড্রোমে লঞ্চ সাইলোতে প্রায় ৬০ মিটার (২০০ ফুট) চওড়া একটি গর্ত শনাক্ত করা হয়। তাছাড়া সাইলোর আশেপাশেও ব্যাপক আকারের ক্ষতির চিহ্ন ধরা পড়ে স্যাটেলাইট ইমেজে। যা কিনা চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে তোলা ইমেজে মোটেও দৃশ্যমান ছিল না। পশ্চিমা মিডিয়ায় জড়ালোভাবে এহেন দাবি করা হলেও প্রদর্শিত ইমেজ থেকে এটা স্পষ্ট নয় যে মিসাইলটি তরল-জ্বালানিযুক্ত লঞ্চের সময় ব্যর্থ হয়েছে নাকি ডিফুয়েলিংয়ের সময় কোন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তাছাড়া গত ২০২০ সালের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কোন এক সামরিক মহড়া চলাকালে প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা একটি মাত্র কৌশলগত আরএস-২৮ সারমাট মিসাইল দ্বারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাকি আমেরিকার টেক্সাস রাজ্য, ফ্রান্স কিংবা জার্মানীর মতো বড় একটি দেশকে ধ্বংস বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে সক্ষম। যদিও গত ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিন্তু পুতিন সরকারের তরফে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বার নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে।
মূলত ১০৮.১ টন ওজন বিশিষ্ট আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে ১০টি বড় আকারের কিংবা ১৫টি ছোট আকারের নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (এমআইআরভি) ইনস্টল করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ পে-লোড ক্যাপাসিটি হতে পারে আনুমানিক ১০ টন। এর দৈর্ঘ্য ৩৫.৫ মিটার এবং ডায়ামিটার ৩ মিটার। তাছাড়া স্টেলথ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই মিসাইলটি উচ্চ প্রযুক্তির এভেনগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল বহন করতে পারে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশগুলোর হাতে মজুত থাকা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপাবল ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের মধ্যে আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইল হচ্ছে আকারে সবচেয়ে বড় এবং অতি মাত্রায় ধ্বংসাত্মক। তিন স্তরের আরএস-২৮ (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে সাইলো বেসড লঞ্চিং প্লটফর্ম থেকে অপারেট করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এই মিসাইলে লিকুইড ফুয়েল চালিত হেভি রকেট প্রোপালশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক প্রযুক্তিবিদদের মতে, এই মিসাইল বিশ্বের যে কোন রাডার সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে টার্মিনাল ফেজে ২০.৭ ম্যাক গতিতে তার লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। তার মানে এর প্রতিটি ওয়্যারহেড যখন স্পেস থেকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন এর গতি ম্যাক ২০.৭ এ পৌঁছে যায়। তাই এই অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে এরা যখন পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন স্পেস থেকে ভূপৃষ্ঠে ইম্প্যাক্ট করার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান থাকে মাত্র ৮ থেকে ১০ সেকেন্ডে। আর এত স্বল্প সময়ের মধ্যে ওয়্যারহেড ডিটেক্ট করে ও তার পাশাপাশি ট্রেজেক্টরি ক্যালকুলেট করে কোনো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পক্ষে খুব দ্রুত এটিকে ইন্টারসেপ্ট করা এক কথায় অসম্ভব বলা চলে।
বর্তমানে রাশিয়ার স্ট্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সেস ইউনিটের হাতে আনুমানিক মোট ৫,৫৮০টি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের বিশাল মজুত রয়েছে। তার পাশাপাশি ১,৭১০ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল মজুত রয়েছে। যার মধ্যে ভূমি ভিত্তিক সাইলো বেসড এবং ভ্রাম্যমাণ ট্রান্সপোর্টার ইরেকটার লঞ্চার ট্রাক চালিত (আইসিবিএম) মিসাইল রয়েছে মোট ৮৭০টি। তাছাড়া নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন ভিত্তিক (এসএলবিএম) ব্যালেস্টিক মিসাইল রয়েছে ৬৪০টি এবং লং রেঞ্জের হেভি এয়ার বোম্বার বিমানের উপযোগী নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ব্যালেস্টিক মিসাইল ২০০টি।
রাশিয়ার মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, এই মিসাইলের ওয়ারহেডের সক্ষমতা হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে ফেলা বোমার থেকে ২ হাজার গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক বলে প্রচার করা হয়। যা বাস্তবে হয়ত এটি রাশিয়ার নব্য প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নাও হতে পারে। কারণ এটি তো এখনো পর্যন্ত তার পরীক্ষামূলক প্রাথমিক স্তর তো অতিক্রমই করতে পারেনি। তবে যাই হোক না কেন, রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপাবল ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলকে কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো এখনো পর্যন্ত জমের মতো ভয় করে।##
তথ্যসূত্রঃ রয়টার্স, সিএনএন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, বিবিসি।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.