সুপারসনিক মিসাইল ‘ব্রাহ্মস’ এর সফল পরীক্ষা ভারতের

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রাহ্মস বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল এর আরও সফল পরীক্ষা চালালো ভারত।সীমান্তে চীনের সাথে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে ভারতের ঘন ঘন সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পরোক্ষভাবে চীন ও পাকিস্তানকে সতর্ক বার্তা জানাতে শুরু করেছে বলে ধারণা। এর আগে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার (১৭ নভেম্ভর) ভারতের এক্সপ্রেস নিউজ সার্ভিসের সংবাদ জানায় সেদিন ওড়িশা উপকূলে অবস্থিত একটি প্রতিরক্ষা কেন্দ্র থেকে ভারত দেশীয়ভাবে নির্মিত কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস টু এয়ার মিসাইল (কিউআরএসএএম) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক পরীক্ষা চালিয়েছে। ডিআরডিও দ্বারা নির্মিত, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো একটি দ্রুতগামী বিমানকে লাইভ ওয়ারহেড ব্যবহার করে পরীক্ষা চালানো হয় যা অত্যন্ত সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এটি পাঁচ দিনের ব্যবধানে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ (আইটিআর) থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের দ্বিতীয় পরীক্ষা ছিল। ১৩ নভেম্বর এর প্রথম ধাপের আরও একটি সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। একদিকে ফ্রান্সের কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তির রাফাল জঙ্গী বিমান আসতে শুরু করেছে, আমেরিকা থেকে বিধ্বংসী পি-৮ মেরিটাইম সমুদ্রে নজরদারিতে বিশ্বের সেরা বিমান, রোমিও শ্রেণীর সাবমেরিন বিধ্বংসী হেলিকপ্টার, ইসরাইল থেকে স্পাইকসহ  নানা ক্ষেপণাস্ত্র সহ আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র। সবমিলিয়ে ভারতের সংগ্রহে বিশ্বের সেরা দেশগুলির সবচাইতে আধুনিক অস্ত্রের এক ভান্ডার গড়ে তুলছে দেশটি। উদ্দেশ্য চীন ও চীর প্রতিদ্বন্দ্বী পরমাণু শক্তির দেশ পাকিস্তানের মোকাবেলা। এমনটিই অনুমাণ করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রাহ্মস বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল যার গতিবেগ হচ্ছে ঘণ্টায় ২.৮ মার্ক। অর্থাত শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি জোরে ছুটতে পারে অত্যাধুনিক এই মিসাইল। আপাতত ভারতের সংগ্রহে ব্রাহ্মসের যে সংস্করণটি রয়েছে, তা ২৯০ কিলোমিটার দূরের যে কোনও বস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানতে পারে। ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার ও এইসময় অনলাইন মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর)এ খবর মোতাবেক বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রাহ্মসের রেঞ্জ বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। পত্রিকাগুলি সেনা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরী ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নয়া সংস্করণের সফল হল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রলালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাগুলি জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ব্রহ্মসের ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম সংস্করণটি উতক্ষেপন করা হয়। সেটি নির্ভুল লক্ষ্যভেদে সমর্থ হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৪০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ব্রাহ্মস মিসাইল পরীক্ষা করেছে সেনাবাহিনী। ৮০০ কিলোমিটার রেঞ্জের মিসাইল পরীক্ষারও তোড়জোড় চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ব্রাহ্মসের রেঞ্জ ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সেনার পাশাপাশি নৌবাহিনীর ভাঁড়ারে রয়েছে অ্যান্টি শিপ শ্রেণীর ব্রাহ্মস মিসাইল। চলতি বছর জানুয়ারিতে বিমান বাহিনীতেও যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক এই ব্রাহ্মস।  আপাতত সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে এই মিসাইল যুক্ত করা হয়েছে। আগামি দিনে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানেও যুক্ত হবে ব্রাহ্মস। সেনা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলি জানায়।

ভারতীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভারত মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিমের (এমটিসিআর) সদস্য হওয়ার পরে রাশিয়ার নয়া প্রযুক্তির সহায়তায় ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়িয়ে ৪৫০ কিলোমিটার করা হয়। প্রথাগত এবং পরমাণু বিস্ফোরক বহনে সক্ষম ব্রাহ্মস যুদ্ধজাহাজ বা সুখোইউ-৩০-এর মতো যুদ্ধবিমান থেকে ছোঁড়া যায়। ব্রহ্মসের জাহাজ-বিধ্বংসী সংস্করণটি ভারতীয় বায়ুসেনার ব্যবহার করে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও-র  তৈরি নয়া ‘ভুমি সংস্করণ’টির গতিবেগ ২.৮ ম্যাক (শব্দের চেয়ে ২.৮ গুণ বেশি গতিবেগ সম্পন্ন)। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-য় চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাতের আবহে বাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নয়া সংস্করণের পরীক্ষা ‘তাতপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই লাদাখে এই শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন শুরু হয়েছে। ব্রহ্মসের পরবর্তী পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে বঙ্গোপসাগরের পরে আরব সাগরকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ডিআরডিও।

ব্রাহ্মস’ভারতমিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিমসুপারসনিক মিসাইল
Comments (০)
Add Comment