::সিরাজুর রহমান::
১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের সামরিক আগ্রাসনে চীনের আনুমানিক ২ কোটি নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি চীনের সামগ্রিক অর্থনীতি এবং কৃষি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চীনের কমিউনিস্ট এবং গণতন্ত্র পন্থীদের যুদ্ধ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিরুপ প্রভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করেন এবং দেশের সাধারণ জনগণের আয় শুন্যের কোঠায় নেমে আসে।
তবে এহেন চরম অর্থনৈতিক সংকট ও বিপর্যয়ের মুখে চীনের মাও সেতুং কমিউনিস্ট সরকার সারা দেশজুড়ে প্রায় এক যুগ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাস্তরে সকল ধরণের আর্থিক সহায়তা এবং অনুদান বন্ধ করে দেয়। এর বিকল্প হিসেবে চীন তার দেশের বেকার তরুণ এবং তরুণীদের স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তব জীবন নির্ভর কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষাকে এক রকম বাধ্যতামুলক করে নতুন শিক্ষানীতি প্রনয়ন করে। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে কোটি কোটি দক্ষ কর্মী গড়ে উঠে এবং তারা চাকরীর পেছনে না ছুটে নিজ বাড়িতেই যে যার দক্ষতা অনুযায়ী স্বল্প খরচের নতুন নতুন প্রযুক্তি পন্য এবং সেবা তৈরি করতে থাকে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে চীনের বৈদেশিক বানিজ্য ও প্রভাব।
তাছাড়া ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈশ্বিক রপ্তানি ২.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩.২২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১০,৮৪০ ডলার। তাছাড়া এ মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনার রিজার্ভ রয়েছে চীনের কাছে। এক সময়ের ৯০% গ্রামীন কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেড়িয়ে এসে খুব দ্রুত মেগা শিল্প ও উৎপাদন খাত নির্ভর অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে চীন এবং বর্তমানে চীনের জাতীয় অর্থনীতিতে ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ভারী শিল্প খাতের অবদান ৯৪.৩% এবং কৃষির অবদান মাত্র ৩.২%।