মণিপুরের এক নদী থেকে উদ্ধার হল ৩ মহিলা, ৩ শিশু সহ ৬ নিখোঁজ মানুষের মৃতদেহ। আর এরপরই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের আদি বাড়িতে হামলার চে করল উত্তেজিত জনতা। এরই সঙ্গে মণিপুরের ত জন মন্ত্রী এবং আরও ৬ বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালায় জনতা। এই আবহে রাজ্য সরকার আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্যে কার্ফু জারি করেছে ইম্ফল উপত্যকার ৫টি জেলায়। এরই সঙ্গে রাজ্যের ৭ জেলায় আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এন বীরেন সিংয়ের জামাতার বাসভবনেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তিনিও বিধায়ক। এদিকে ক্ষমতাসীন নেতাদের বাড়ির সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ইম্ফলে। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রী সাপম রঞ্জন, এল সুসিন্দ্রো সিং এবং ওয়াই খেমচাঁদের বাসভবনে হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায়, ইম্ফল উপত্যকার পূর্ব ও পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, থৌবাল এবং কাকচিং জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফু জারি করা হয়েছে। এরই মাঝে শনিবার সন্ধ্যায় উত্তেজিত জনতা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ব্যক্তিগত বাসভবনেও হামলার চেষ্টা করেছিল। রাতে জিরিবাম শহরে অন্তত দুটি গির্জা ও তিনটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
এই আবহে ইম্ফলের বিভিন্ন অংশে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। উল্লেখ্য, গৃহহীনদের শিবির থেকে গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিল ৩ মহিলা, ৩ শিশু। শনিবার জিরিবাম জেলায় বরাক নদী থেকে উদ্ধার করা হয় ২ শিশু এবং ১ মহিলার দেহ। এর আগে শুক্রবার আরও দুই মহিলা এবং এক শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরে সেই সব দেহ ময়নাতদন্তের জন্যে অসমের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত বজায় রয়েছে মণিপুরে। উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্টের তরফ থেকে রায় দিয়ে জানানো হয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
তবে এখনও হিংসা জারি আছে সেই রাজ্যে। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি। ## সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.