-- বিজ্ঞাপন ---

মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি পানি!

0

সিরাজুর রহমান#
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, পৃথিবীর বুকে প্রাণের প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল পানি থেকে। বিশেষ করে জটিল এককোষী জীবের সৃষ্টি হয় সাগর ও মহাসাগরের বুকে। তবে পৃথিবী সৃষ্টির সাথে সাথেই যে পানি চলে এসেছিল বিষয়টি তা কিন্তু মোটেও নয়। বরং আজ থেকে প্রায় ৪.৫৪৩ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হলেও আনুমানিক ৪ বিলিয়ন বছর আগে থেকে পর্যায়ক্রমে কোটি কোটি গ্রহাণু ও উল্কাপিণ্ড পতনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিশাল জলরাশি গড়ে উঠে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ব্যাপী গবেষণা করে দেখেছে যে, আমাদের এই বাসযোগ্য পৃথিবীতে একেবারে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল আজ থেকে আনুমানিক ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। তবে প্রথম দিকে প্রাণের জটিল বিকাশ ও উৎপত্তি কিন্তু পৃথিবীর মহাসাগরকে কেন্দ্র করেই বিকোশিত হতে থাকে। যদিও হয়ত সেটি ছিল একেবারে অতি ক্ষুদ্র এককোষী ব্যাকটেরিয়া বা তারও ছোট আকারের কিছু হতে পারে। তবে এই পৃথিবীর প্রাণের সবচেয়ে পুরোনো জীবাশ্মের বয়স হতে পারে কিনা প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগের। যেখানে ডাইনোসরের উৎপত্তি আনুমানিক মাত্র ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল বলে মনে করেন তারা।
আর পৃথিবীর বুকে সৃষ্টিকর্তার এই সুনিপুণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে প্রায় বিলিয়ন বছর ধরে। মোট কথা আমরা যে পানি এখন ব্যবহার করছি বা সাগর ও মহাসাগরে যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন টন পানি ছড়িয়ে রয়েছে তা কিন্তু মহাজাগতিক অবজেক্ট দ্বারা এই পৃথিবীতে এসেছে। বিশেষ করে আমাদের সোলার সিস্টেমের একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবীতে পানি বা জলীয় কণা বয়ে নিয়ে আসার জন্য উল্কাকেই চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা।
আবার বর্তমানে পানি যে শুধু আমাদের গ্রহেই মজুত রয়েছে বা আছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। বিজ্ঞানীরা গত কয়েক বছর আগে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দ্বারা এই সুবিশাল মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা এক সুবিশাল ব্লাক হোল বা কোয়েসারের আশেপাশে অবিশ্বাস্যভাবে বিপুল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব আবিষ্কার বা শনাক্ত করেন। আর এই জলাশয়টি আমাদের সোলার সিস্টেম থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপের প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এখানে ভাসমান থাকা জলাধারের আকার ও পরিমাণ হতে পারে পৃথিবীর সমস্ত পানির প্রায় ১৪০ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি পানির আধার। যদিও বিষয়টি যে একেবারেই শতভাগ সঠিক হবে তা কিন্তু নয়। তাছাড়া বিজ্ঞানীরা অবশ্য একাধিক ছায়াপথেও পানি বা জলীয়বাষ্প এবং জলীয় কণার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। তবে তা আবিষ্কৃত কোয়াসারের চেয়ে হয়ত প্রায় চার হাজার গুণ কম হতে পারে।
এদিকে পবিত্র কোরআনে সুরা আল-মুমিনুন এ মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, “আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মতো, অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং তা আমি অপসারণও করতে সক্ষম”। (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত-১৮)
তাছাড়া পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম, এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকেই সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না। (সূরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের ভূপৃষ্ঠের ৭১% পানি এবং বাকি ২৯% স্থলভাগ দ্বারা আবৃত। তাছাড়া আমাদের মানব বা প্রাণী দেহের ৭৫% কিন্তু পানি দ্বারা গঠিত। আর আমাদের পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী ও মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। পানি ছাড়া পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন বা অস্তিত্ব আশা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমাদের সকলকে পানির অপচয় রোধ করে একটি সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে যেতে হবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.