--- বিজ্ঞাপন ---

মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে ইরান-সৌদিআরব

0

সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের নির্ধারিত বার্ষিক ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার চাঁদার টাকা না দিতে পারার কারণে আইন মোতাবেক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরানের ভোটাধিকার প্রদানের ক্ষমতা সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয় জাতিসংঘ। যদিও অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আল খোমেনী সরকার তার নির্ধারিত চাঁদার ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার জাতিসংঘকে প্রদান করলে ইরান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাধিকার ফিরে পায়। আসলে এভাবে জাতিসংঘের কোন সদস্য দেশের চাঁদার টাকা দিতে না পারার জন্য সদস্য পদ স্থগিত হওয়াটা যথেষ্ঠ অপমানজনক এবং অন্যের কাছে নিজ দেশকে হাস্যকর পাত্রে পরিণত করার মতো একটি নিকৃষ্ট বিষয়। আর যা কিনা ইরানের সরকার, তার প্রশাসন এবং তাদের নিউজ মিডিয়া এগুলো নিয়ে আত্মসমালোচনা কিংবা আদৌ অনুধাবণ করতে পারে কিনা সন্দেহ।

এর আগেও ২০২০ সালে তেহরানের বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ভেবে ইউক্রেনের একটি যাত্রী বিমান মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস করলে বিমানে থাকা ১৬২ জন নিরাপরাধ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সেই মৃত্যুবরণকৃত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের টাকা ইরানের পক্ষে দেয়া সম্ভব না হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের ইরানের বন্ধুদেশ কাতার বিমান ধ্বংস এবং যত্রীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সমুদয় ৩.০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণের অর্থ এককালীন ইরানকে প্রদান করে। আর এভাবে কাতার তার বন্ধুদেশ ইরানকে একটি নিশ্চিত বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে রক্ষা করে দেয়। অথচ এসব নিয়ে ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো কোন ধরণের সমালোচনা তো দূরের কথা একটা টু শব্দ পর্যন্ত করে না। এদিকে কিনা ইরান প্রতিনিয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলকে মিসাইল হামলায় ধ্বংস করে ফেলার হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। তারা নাকি গোপনে ভূ-গর্ভে শত শত মিসাইলের ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে। সেখানে নাকি ২০০ কিলোমিটার থেকে ২,০০০ কিলোমিটার পাল্লার অতি ভয়ঙ্কর পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজারের কাছাকাছি মিসাইলের বিশাল মজুত গড়ে তুলেছে। এসব প্রপাগাণ্ডামুলক খবর আবার ইরান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো সারা বিশ্বে প্রচার করে যাচ্ছে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার, সামরিক আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ এবং অপপ্রচারের ইরানের বাস্তবে কি লাভ হয় তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও এতে কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। কারণ বিগত এক দশক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার, সামরিক সক্ষমতা এবং ভয় দেখিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরানের মতো দেশগুলোর কাছে একেবারে একচেটিয়াভাবে শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য করার সুযোগ পেয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসর ইউরোপীয় দেশগুলো। এক পরিসংখ্যানের হিসেব মতে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট দশ বছরে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের ৪০ শতাংশ  পর্যন্ত চলে গেছে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা আমীর শাসিত আরব দেশগুলোতে। এই সময়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরান, কাতার, কুয়েত এবং অন্যান্য আরব দেশগুলো ব্যবহার করতে পারুক বা না পারুক মোট প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বিচারে আমদানি করে গেছে।

তাছাড়া রাশিয়ার সহায়তায় ইয়েমেনে হুথী বিদ্রোহীদের হাতে, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অস্ত্র তুলে দিয়ে গোটা ইয়েমেন দখল করে নিজস্ব শিয়া মতবাদ এবং প্রভাব বিস্তারে চেষ্টার কোন কমতি করছে না ইরান। অথচ ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮ শতাংশ হচ্ছে শিয়াপন্থী হুথী জাতিগোষ্ঠী এবং তারা আজ কিনা অস্ত্রের জোরে ইয়েমেনের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে এবং হত্যা করে যাচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ নিরীহ ইয়েমেন নাগরিকদের। আর এদিকে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব তার অনুগত হাদি সরকারকে রক্ষায় এবং সামরিক আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮.০০ বিলিয়ন এবং যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষুদ্র যুদ্ধাস্ত্র, আকাশ থেকে নিক্ষেপ যোগ্য প্রাণঘাতী বোম্বস এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানি করেছে। এক দিকে সৌদি জোট অস্ত্র দিচ্ছে ইয়েমেনের অনুগত আল-হাদী সরকরাকে এবং অন্যদিকে ইরান ও রাশিয়া মিলে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুথী বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীকে। আর উভয় পক্ষের প্রভাব বিস্তারের অশুভ প্রতিযোগিতায় আজ একটি সমৃদ্ধ ইয়েমেন জাতিকে একেবারে ধ্বংসের শেষ সীমানায় নিয়ে গেছে।

এদিকে সিরিয়ার অবস্থা ঠিক ইয়েমেনের মতো একই। কট্টর শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ২০১১ সাল থেকেই বিলিয়ন ডলারের অর্থ ব্যয় করার পাশাপাশি অস্ত্র এবং নিজ দেশের স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়া পাঠিয়ে দেশটিকে আজ ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ায় প্রায় আঠারো থেকে বিশ হাজারের কাছাকাছি ইরানের সেনা ও নাগরিক মৃত্যুবরণর করলেও বিষয়টি বিশ্বের চোখে আড়াল করে রেখেছে দেশটির সরকার এবং এহেন প্রাণহানী নিয়ে আজ অব্ধি মিডিয়ায় কোন ধরণের তথ্য প্রকাশ করেনি দেশটির খোমেনী প্রশাসন। এমনকি সিরিয়া যুদ্ধে মৃত্যুবরণকৃত ইরানী নাগরিকদের তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হয় না শুধুমাত্র বিশ্বের সামনে তাদের মুখোশ উম্মোচন কিংবা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আবার সিরিয়ায় থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং স্থাপনায় প্রতিনিয়ত ইসরাইলের বিমান বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করলেও আজ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুখে মুখে তীব্র আক্রমণ করা ব্যাতিত বড় ধরণের কোন পালটা সামরিক পদক্ষেপ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা থেকে বিরত থেকেছে ইরান।

অন্যদিকে ইরান তার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে যে অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত প্রতি নিয়ত প্রচার করে যাচ্ছে, তা কিন্তু কূটকৌশলী এবং যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রশাসন ঠিকই আঁচ করতে পেরেছে। বিশেষ করে ইরানের গ্রাউণ্ড এন্ড নেভাল ফোর্সে বেশ শক্তিশালী বলে মনে করা হলেও বাস্তবে ইরানের বিমান বাহিনীর প্রকৃত সক্ষমতা অত্যন্ত বাজে অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ইরান তার বিমান বাহিনী এবং আকাশ সক্ষমতা যতই উঁচু করে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, ইরানের সামরিক দূর্বলতা এবং স্পর্শকাতর অক্ষমতা কিন্তু বিশ্বের নজর এড়িয়ে যাচ্ছেন না। তাই ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, ইসরাইল এবং তার সৌদি জোটকে সাথে নিয়ে ইরানে সীমিত বা বড় ধরণের বিমান হামলা করে বসলে, বাস্তবে চরম প্রতিবাদ কিংবা তীব্র নিন্দা ব্যাতিত ইরানের পাশে আদৌ কেউ থাকবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। রাশিয়া এবং চীন মুখে মুখে প্রবল প্রতিবাদ এবং ইরানকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও তলে তলে মার্কিন বিরোধী উস্কানি এবং ইরানের কাছে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা করা ছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন প্রতিরোধে কিছুই যে করবে না তা কিন্তু অনেকটাই এক রকম নিশ্চিত বলা চলে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.